আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | সন্ধ্যা ৬:৪০

শিমরাইলে মহাসড়কের মাঝেই যাত্রী নামানো থামছে না

ডান্ডিবার্তা | ২০ মার্চ, ২০২৪ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট হাইওয়ে পুলিশ তৎপর হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানে বাসের যাত্রী নামানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত গত তিনদিনে ৭৮টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হলেও মহাসড়কটির নারায়ণগঞ্জ অংশের শিমরাইল মোড়ে যাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলে মাঝখানে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ফলে যাত্রীরা মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে উঁচু সড়ক বিভাজক লাফিয়ে পার হচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে অন্তত ১৭টি দূরপাল্লার বাসের যাত্রীদের নির্ধারিত বাস-স্টপেজে না নামিয়ে মহাসড়কের মাঝখানের দ্রুতগামী লেনে নামাতে দেখা গেছে। এ সময়ের মধ্যে কয়েকটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা করতেও দেখা গেছে। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মামলা দিয়েও মহাসড়কের মাঝখানে যাত্রী নামানো বন্ধ করা যাচ্ছে না। বাসচালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা তৈরি না হলে এই প্রক্রিয়া থামানো কঠিন। সরেজমিনে দেখা যায়, আট লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারটি লেন দ্রুতগামী গাড়ি চলাচলের জন্য নির্ধারিত। এই চার লেনের সাথে দুই পাশে দু’টি করে সার্ভিস লেন রয়েছে। মাঝখানে উচু সড়ক বিভাজক দিয়ে লেনগুলোকে আলাদা করে দেওয়া। নিয়ম অনুযায়ী ঢাকাগামী যানবাহন কাঁচপুর সেতু দিয়ে নামার সময় সার্ভিস লেনে ঢুকে শিমরাইল বাস-স্টপেজে যাত্রী নামানোর কথা কিন্তু বাসচালকরা তা না করে দ্রুতগামী লেনে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে লাফিয়ে উচু সড়ক বিভাজক পার হতে দেখা গেছে নারী, পুরুষ ও শিশুদের। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়কের দ্রুতগামী (ভিআইপি) ও সার্ভিস লেনের মাঝের সড়ক বিভাজকটি পূর্বে আরও নিচু ছিল। শিমরাইল মোড়ে একটি পকেট গেটও ছিল। মহাসড়কের মাঝখানে যাত্রী নামানো বন্ধ করতে এক বছর আগে সড়ক বিভাজকটি উচু করা হয়েছে। তিনমাস আগে পকেট গেটটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেলা একটার দিকে দু’টি বাসের যাত্রীদের মহাসড়কের মাঝখানে নামিয়ে দিতে দেখা যায়। অদূরে দু’টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিল হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কের মাঝখানে নামিয়ে দেওয়ায় শিশু কন্যা সন্তানকে নিয়ে সমস্যা পড়ে যান তাসলিমা বেগম। আঁখি এক্সক্লুসিভ নামে বাসের স্টাফদের সাথে তর্কেও জড়াতে দেখা যায় এই নারীকে। পরে পুলিশ এসে ওই বাসটির বিরুদ্ধেও মামলা দেয়। তাসলিমা বলেন, ‘এই জায়গায় নামিয়ে দিছে বাসের লোকজন। পুরুষ মানুষ তারপরও লাফাইয়া যাইতেছে। এইখান দিয়া আমি এই বাচ্চা নিয়ে কীভাবে পার হবো বলেন তো দেখি?’ রবিন আহমেদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘বাসের চালক ইচ্ছা করে মহাসড়কের মাঝখানে নামিয়ে দেয়। ডিভাইডার দিয়ে লাফিয়ে পার হতে গিয়ে কে কখন গাড়ির নিচে পড়ে তার কোন চিন্তা নেই ওদের। পুলিশের সমনেই এই কাজ করে তারা।’ উচু সড়ক বিভাজক পার হতে না পেরে অন্তত সাতজন নারীকে মহাসড়কের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে একটু ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে পার হন তারা। তিন বছর বয়সী শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে মহাসড়কের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় সাজু আহমেদকে। তিনি বলেন, ‘মাঝখানে বাস থামিয়ে নামিয়ে দিয়েছে। বাচ্চা নিয়া তো উচু ডিভাইডার পার হতে পারবো না। সামনে নাকি সড়কের এক জায়গায় কাটা আছে ওইখান দিয়ে রাস্তা পার হবো। এইভাবে বিজি একটা হাইওয়ের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাওয়াটাও তো রিস্কি। এইগুলো থামাবে কে?’ তবে অন্তত তিনটি বাসের চালক ও স্টাফদের সাথে কথা হলে তারা নিজেদের পক্ষে যুক্তি দেন। তাদের অভিযোগ, সার্ভিস লেনের অর্ধেকই বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ পার্কিং থাকে। তারা সড়ক দখল করে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠান। এতে সার্ভিস লেন দিয়ে বাস প্রবেশ করালে যানজটে পড়তে হয়। তবে অনেক সময় যাত্রীরাও তাদের দেখানো মতো জায়গায় নামতে চান। মহাসড়কের মাঝখানে যাত্রী নামানোয় শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস নামে পরিবহনের একটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে আস এই বাসের সুপারভাইজার আবির হোসেন বলেন, ‘সার্ভিস লেনে সারাক্ষণ জ্যাম করে রাখে। যাত্রীরাও স্টপেজ থেকে একটু দূরে গিয়ে নামতে চান না। রাস্তা ক্লিয়ার থাকলে তো আমাদের যাত্রী নামাতে অসুবিধা নাই।’ শিমলাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) নূর মিয়া বলেন, ‘এইখানে মূলত দুইটা লেন আছে; একটা ভিআইপি লেন, আরেকটা সার্ভিস লেন। বাসগুলোর যাত্রীদের সার্ভিস লেনে এসে যাত্রী নামানোর কথা কিন্তু বাসচালকেরা তাদের সুবিধার্থে ভিআইপি লেনেই যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এতে ঝুঁকিতে পড়ছেন যাত্রীরা। মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করছি। এইরকম ঘটনা পেলেই বাসের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করছি।’ গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত মহাসড়কের নির্ধারিত স্থানে যাত্রী না নামিয়ে মাঝখানে নামানোয় ৭৮টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে বলে জানান শিমলাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শিমরাইল মোড়ে আমাদের দুইজন পুলিশ নিয়মিত থাকে। তারপরও একটি মোবাইল টিম গত কয়েকদিন ধরে পার্মানেন্টভাবে রেখেছি, বাসগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। কিন্তু কোনোভাবেই বাসের এই কার্যক্রম থামানো যাচ্ছে না। পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজন যদি সচেতন না হয় তাহলে তো মামলা দিয়ে এইসব থামানো কষ্টকর।’ উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে দ্রুতগামী যানবাহনের লেনে টাকার বিনিময়ে মই দিয়ে উঁচু সড়ক বিভাজক পারাপারের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশ রবিউল হোসেন নামের এক তরুণকে দুটি মইসহ আটক করে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা