প্রশ্নবিদ্ধ না’গঞ্জের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ছোট একটি পরিবার। স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকার মনার বাড়িতে বসবাস করেন আমানত উল্লাহ। স্ত্রী পান্না বেগম একজন গৃহিনী হলেও বাড়িতে টেইলারের কাজ করে স্বামীকে সংসারে সহযোগীতা করেন। ভালো পড়াশোনার জন্য বড় মেয়ে মেহেনাজ আক্তার আনিকাকে স্কুলে ভর্তি করায়। একই সাথে ১১ বছর বয়সী ছোট ছেলে মুজাহিদও পড়াশোনা করেন। এদিকে, গায়ে গতরে ভালো হওয়ায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে মেয়েকে খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন আমানত উল্লাহ। স্বামীর বাড়িতেও ভালো দিন কাটছিলো মেহেনাজের। মুসলিম নগর নতুন বাজার এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে ঠান্ডা থেকে টনসিল হয়ে যায় মেহেনাজের, বিভিন্ন ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ কিনে খাওয়ায় তার স্বামী। কিন্তু তাতেও ভালো হয়নি। একদিন মুসলিম নগর দক্ষিনপাড়া এলাকার স্থানীয় জাহিদ ফার্মেসী দোকানদারের পরামর্শে টনসিল অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়, এবং তার তথ্য মোতাবেক সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে অপারেশন করার জন্য বলেন। কে জানতো এই হাসপাতাল থেকেই জীবনের শেষ বিদায় নিতে হবে কিশোরী মেহেনাজ আক্তার আনিকার। গতকাল রবিবার সকালে ‘সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে’ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে, গতকাল রাতে ওই হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে মেহেনাজ আক্তার আনিকার টনসিলের অপারেশনের করানো হয়। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা এসে বিক্ষোভ করে ভাঙ্চুর করে। পরে পুলিশ ডাক্তার ও নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারে দাবি জানিয়েছেন পরিবারের। নিহতের মেহেনাজ আক্তার আনিকার বাবা আমানত উল্লাহ জানায়, গলায় টনসিলের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন। পরে স্থানীয় এক ফার্মেসী দোকান দারের পরার্মশ অনুযায়ি চিকিৎসা করানোর জন্য, সিলভার সেন্ট্রাল হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে আসি। গতকাল রাত ১০টায় ডাক্তার অপারেশন করায়। অপারেশন শেষে ভোরে তার জ্ঞান ফিরলে মেয়ে বলে তার ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পরে চিকিৎসককে জানালে মেয়েকে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এরপর সকাল ৯টায় জানতে পারি মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমার মেয়ের ভুল চিকিৎসায় জরিতদের সঠিক বিচার চাই। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) শাহাদাত হোসেন জানায়, আমরা ৯৯৯ ফোন পাই যে, ১৫ বছরে একজন কিশোরী মারা গিয়েছে। আমরা তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারি নাই মৃত্যুর কারণ। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোন অভিযোগের তথ্য পাইনি আমরা। অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আমরা হাসপাতালের নার্সসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছি। এদিকে, গত রবিবার খানপুর কাজীপাড়া ‘আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে’ সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে, একই অপারেশনে ভুল চিকিৎসায় মোস্তাকিম নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে উঠেছে। একই ডাক্তারে চিকিৎসা নেয়া এক ভুক্তভোগী নাম না প্রকাশে বলেন, আমার ছোট ভাইকে এই ডাক্তারের কাছে কানের একটা সমস্যা নিয়ে এসেছিলাম। প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আমাদের খরচ হয়েছে। কিন্তু অপারেশনের পর আমার ছোট ভায়ের সে সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা পরবর্তীতে অন্যান্য চিকিৎসের পরামর্শ নিয়েছিলাম। তারা বলেছে এই চিকিৎসা সুষ্ঠ হয়নি। বরং একই চিকিৎসা আবার করানো লাগবে। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান জানান, আজকের ঘটনাটি আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি। অফিসিয়ালি কোন অভিযোগ এখনো পাইনি, তবে আমি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের একটি টিম সেখানে পাঠিয়েছি। প্রাথমিক ভাবে দেখতে পেয়েছি ওই হাসপাতালে এখনো ৩জন রোগী ভর্তি আছে। তাই আমরা হাসপাতাল সিলগালা না করলেও ওটি টা তালা মেরেছি। এখানে কোন অপারেশন আর হবে না। এছাড়া আমরা আগামীকাল একটি তদন্ত কমিটি তৈরী করবো। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারবো যে সেটা চিকিৎসকের অবহেলা নাকি অন্য কোন কারণ আছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে ‘আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে’র ঘটনাটি এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের অবহেলার কোন রিপোর্ট আমরা পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা আসল কারণ জানতে পারবো। তাছাড়া ওই ঘটনায় আমরা দেখেছি সেখানে ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন, মেডিক্যাল অফিসাররা ছিলেন, তাদের সেবার কোন ঘাটতি ছিলো না। আমরা ওই ঘটনায় পোস্ট মর্টাম করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা পাইনি, তারা কোন অভিযোগ করেনি এবং একটি রহস্যজনক আচরণ তারা করেছে। কিন্তু আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ হয়ে আসছে। সিভিল সার্জন বলেন, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে আগেও কথা হয়েছে। ডাক্তারের হাতে রোগী মারা যেতে পারে। কিন্তু একজন ডাক্তারের হাতে যদি একই অপারেশনের দুই দুইটা রোগী মারা যায়, তাহলে এটা আসলেই আতঙ্কের মতো। মানুষ স্বাভাবিক ব্যাপারটা অন্য ভাবে দেখবে। এই জন্য আমরা ডাক্তারের বিষয়ে তদন্ত করবো, তার সার্টিফিকেট, তার অভিজ্ঞতা যথাযথ আছে কিনা। কোন কারণে রোগী গুলো মারা যাচ্ছে এই বিষয়টা ভালো ভাবে তদন্ত করে দেখবো।