রাজপথে ফিরতে চায় বিএনপি
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করায় হতাশা নেমেছে নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থেকে অনেক নেতাকর্মীই রয়েছেন কারাগারে। দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ মামলা-মোকদ্দমায় পর্যুদস্ত। অনেকে আছেন আত্মগোপনে। ভোটে অংশ নিলে জয় না পেলেও অন্তত মামলা-মোকদ্দমা থেকে রক্ষা পাওয়া যেত বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা, যা এখন অশ্চিয়তায় পড়েছে। হতাশা কাটিয়ে দলকে চাঙ্গা করতে নীতিনির্ধারকরাও নানা উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করছেন এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে আবারো রাজপথে ফিরতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছেন দলটি। জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমাদের দলের সিনিয়র থেকে একেবারে জুনিয়র নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় পর্যুদস্ত। দল নির্বাচনে গেলে হয়তো এ অবস্থা থেকে একটু রেহাই পাওয়া যেত।’ তিনি বলেন, তবে এই হতাশার মধ্যেও আশার আলো হচ্ছে, আমাদের ভোট বর্জনের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়েছে। এটাই ভরসার জায়গা। দলটির তৃণমূলের অনেক নেতাই মনে করেন, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকৌশল প্রণয়নে ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলার হাজার হাজার কর্মী আমাদের দলের জন্য ডেডিকেটেড। এর প্রমাণ ইত্যবসরে এক দফার আন্দোলনে দিয়েছে। কিন্তু দলের নীতিনির্ধাকরা কর্মীদের এই ডেডিকেশনকে মাঠে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে আনতে পারেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের একজন নেতা বলেন, নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় নেতাকর্মীদের অনেকের মন ভেঙে গেছে। তারপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোঁকন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের নিরুৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা জনগণকে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। জনগণ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বও তথাকথিত নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিএনপিসহ আমাদের মিত্ররা আন্দোলনে আছে। বর্তমান সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত বড় কোনো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাসহ বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীই বর্তমানে কারাগারে; অনেকের নামে রয়েছে মামলা, অনেকে আছেন আত্মগোপনে। তাই নির্বাচনের পর এখন নেতাকর্মীদের জামিনের বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা কর্মকৌশল নিয়ে ভাবছেন। নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিএনপিকে কার্যকর প্রস্তুতি নিয়ে কর্মসূচি সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ছাড়া অধিকাংশ শরিক দলগুলো ডান-বাম সব দলকে নিয়ে এক মঞ্চ থেকে আন্দোলন করার পরামর্শ দেয়। জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে দাবি আদায়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে অভিমত দেয় ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। ভবিষ্যতের সেই আন্দোলন সফলে জামায়াতসহ ডান-বাম সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ফ্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রস্তাব দেয় জোট দুটি। বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এর আগে ৭ জানুয়ারির ভোটকে ঘিরে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতকে শক্তভাবে পাশে চেয়েছিল বিএনপি। এর অংশ হিসেবে যুগপৎ এবং যুগপতের বাইরে আন্দোলনরত সব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু যুগপতের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত এক প্ল্যাটফর্ম হয়নি। যদিও আন্দোলনের স্বার্থে জামায়াতকে যুগপতে সম্পৃক্ত করার বিরোধী নয় গণতন্ত্র মঞ্চ। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ ও যুগপৎ আন্দোলন উভয় ক্ষেত্রে চরম আপত্তি ছিল চার দলের মোর্চা গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের। জামায়াতকে নিয়ে দুটি জোটই এখনও আগের অবস্থানেই অনড়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপতের অন্য শরিকদের অভিমত, আগামীতেও কর্মসূচি সফল করতে হলে জামায়াতে ইসলামীকে আন্দোলনে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ আন্দোলনে সাংগঠনিক দিক থেকে বিএনপির পরই জামায়াতের অবস্থান। আর মাঠের আন্দোলন সফল করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি দরকার। যুগপতের অন্য শরিকরা মাঠে থাকলেও সাংগঠনিকভাবে তারা অতটা শক্তিশালী নয়, তাই আন্দোলনে জামায়াতকে সম্পৃক্ত করার বিকল্প নেই।