ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে না’গঞ্জে চিকিৎসা সেবা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গনষ্টিকগুলিতে সাধারণ মানুষ টাকা দিয়েও চিকিৎসা পাচ্ছে না। ভুল রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসায় প্রতিনিয়ত রোগীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে অতীতের তুলনায় উন্নতি হলেও তা ধরে রাখতে ব্যর্থতাই এখন মাথাব্যথার বিষয় হয়েং দাঁড়িরেয়ছে। এ জেলায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় যত, সেবা ততটা মানসম্মত নয়। স্বাস্থ্য বিভাগ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য খাতে কোথায়ও সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থাপনা নেই বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে দুটি মৃত্যুর ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। অভিযোগ ‘গোড়াতেই গলদ’। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। চিকিৎসা সেবা এমন হওয়ার মধ্যে জড়িয়ে আছে অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি, জনবল ঘাটতি, টেস্ট বাণিজ্য। নারায়ণগঞ্জে অধিকাংশ হাসপাতালে প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও টেকনিশিয়ান নেই। জেলার প্রধান দুটি সরকারি হাসপাতালের আশেপাশে সহস্রাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশ অবৈধ। এসব হাসপাতালের বেশীরভাগ মালিক রাজনৈতিক দলের নেতা অথবা ব্যবসায়ী। এক শ্রেণীর ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে ডিউটি না করে এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে। সরেজমিন দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের প্রধান দুটি সরকারি হাসপাতালে গেলে রোগী গেলে ডাক্তাররা বিভিন্ন টেস্ট ধরিয়ে দেয়। ডাক্তারের রুম থেকে বের হতেই আগে থেকে অবস্থান করা হাসপাতালের কর্তচারীরা আশপাশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে টেস্ট করানোর জন্য পাঠায়, এতে তাদের কমিশন মিলে। এছাড়া হাসপাতালের ভেতর থেকেই সরকারি হাসপাতালে রোগীরা ওষুধ পায় না। বেশিরভাগ অপারেশন থিয়েটার থাকে তালাবদ্ধ। অথচ সেখানে অনেক মাঝারি ধরনের অপারেশন সম্ভব। বিভিন্ন সময়ে এসব দুরবস্থায় চিত্র নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমে পেলেও জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা কর্ণপাত করছে না। বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন সময় ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার চিত্র মানুষের কান পর্যন্ত পৌছেলেও অধিকাংশ হাসপাতাল কর্তপক্ষের চাপে এ সব বিষয় মিমাংসা করতে হয়। সাধারণ মানুষ বলছে, চিকিৎসা সেবার এমন অব্যবস্থাপনা নারায়ণগঞ্জের জন্য অশনি সংকেত। সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসা সেবায় চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে, দিনে দিনে অতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। চলতি বছরের ১০ মার্চ খানপুর কাজীপাড়া ‘আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে’ সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্বাবধানে, টনসিলের অপারেশনে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে মোস্তাকিম নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঠিক ১৩ দিনের ব্যবধানে একই ডাক্তারের মাধ্যমে নগরীর ‘সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে’ টনসিলের অপারেশনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেহেনাজ আক্তার আনিকা নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে ‘আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে’ কতৃপক্ষের নাম্বারে একাধিক ফোন করলে প্রথমে লাইন কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখে। এদিকে, ১৩ দিন পর ‘সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে’ টনসিলের অপারেশনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেহেনাজ আক্তার আনিকা নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর খবর জেনেও কেনো তাকে চিকিৎসা করায় বাধা দেননি। জানতে চাইলে সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান উদ্দিন আহম্মেদ জানান, বিগত ৬মাস আগে আমরা এই সিলভার ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি একটি গ্রুপের কাছে ভাড়া দিয়ে দিয়েছি। আমাদের সাথে বর্তমানে কোন ওই হাসপাতালের সম্পৃক্ততা নাই। তবে হাসপাতালে গৃহবধুর মৃত্যুর যে ঘটনাটি ঘটলো, এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিলো। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বলবো এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এই ঘটনার নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেন, আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে, যেটা আমরা অনেকেই জানি না। যারা ক্লিনিক চালায় তারা কখনো রোগীর ডাক্তার নির্ধারণ করে দেয় না। রোগী নিজেই ডাক্তার নির্ধারণ করেন। রোগীর পছন্দের ডাক্তার দিয়েই সার্জারি ও চিকিৎসা করায়। ক্লিনিক শুধু রুম ভাড়া আর অপারেশন থিয়েটার ভাড়া দেয়। বাকিটাকা সব ডাক্তার নিয়ে যায়। শতকরা একজন অথবা দুইজন ক্লিনিককে ডাক্তার পছন্দ করে দিতে বলে। কিন্তু ৯৯ ভাগ মানুষ তাদের নিজেদের ডাক্তার নিজেরা পছন্দ করে। ‘আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে’ সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে, নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান জানান, ‘আল-হেরা জেনারেল হাসপাতালে’র ঘটনাটি এখন পর্যন্ত চিকিৎসকের অবহেলার কোন রিপোর্ট আমরা পাইনি। রিপোর্ট পেলে আমরা আসল কারণ জানতে পারবো। আমরা ওই ঘটনায় পোস্ট মর্টাম করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগীতা পাইনি, তারা কোন অভিযোগ করেনি এবং একটি রহস্যজনক আচরণ করেছেন তারা। কিন্তু আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ হয়ে আসছে। তিনি আরো বলেন, ডাক্তারের হাতে রোগী মারা যেতে পারে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু একজন ডাক্তারের হাতে যদি একই অপারেশনের দুই দুইটা রোগী মারা যায়, তাহলে এটা আসলেই আতঙ্কের কথা। মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটা অন্য ভাবে দেখবে। এ জন্য আমরা ডাক্তারের বিষয়ে তদন্ত করবো, তার সার্টিফিকেট, তার অভিজ্ঞতা যথাযথ আছে কিনা। কোন কারণে রোগী গুলো মারা যাচ্ছে এই বিষয়টা ভালো ভাবে তদন্ত করে দেখবো।