আ’লীগ ভারতের তাদের তাবেদার সরকার: নূর
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিবেশী ভারতের একটা তাবেদারি সরকার চলছে। যে সরকার জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে, গুম করে, জেলে নিয়ে মামলা দিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছে। ’গত মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় একটি রেস্তোরাঁ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও ইফতারের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নুরুল হক বলেন, ‘বিরোধীদলের ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দেড় লক্ষ মামলা। ৭ জানুয়ারি একটা ডামি নির্বাচন হয়েছে। জনগণ সে নির্বাচনে ভোট দেয়নি। অনেকে বর্তমান সরকারকে বলে ফাইভ পার্সেন্ট সরকার। কেননা ৯৫ পার্সেন্ট জনগণ এ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও তাদের দাপট এবং হুমকি-ধমকি।’ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি মেলেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন, ভোট ও নাগরিক অধিকারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম ভূখন্ড পেলেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি মেলেনি।’ নুরুল বলেন, ‘কোন বক্তব্য দিলে, কিছু লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। গোটা দেশের মানুষ এ জালিম শাহীর কাছে জিম্মি। এদেশে রাজনীতি করছে ইয়াবা বদি, বিচ্ছু শামসু, আন্ডা রফিকরা। মেধাবীরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ায় দুর্বৃত্ত ও মাফিয়ারা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’ ছাত্র-তরুণ-যুবকদের ‘নতুন এ মুক্তিসংগ্রামে’ অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ‘শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধ নয় ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র, যুবক ও তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিলাম, সে সময় সারাদেশে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা জাগরণ ঘটেছিল। পরে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে রাষ্ট্রের অনিয়ম, অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিশোর বিদ্রোহ হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র, কিশোরদের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, ন্যায়বিচারের পক্ষে রাজপথে নামতে দেখা যায় না। ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৮২ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত তরুণ দেশে থাকতে চায় না। কারণ এদেশকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও ভবিষ্যতের জন্য তারা নিরাপদ মনে করে না। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে কারা অনিরাপদ করেছে সে প্রশ্ন তরুণ বন্ধুদেরই করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে গত ৫৩ বছরে প্রতিহিংসা ও ক্ষমতা দখলের রাজনীতি চলেছে। আমরা প্রতিহিংসা ও দখলদারির রাজনীতি নয় সম্প্রতি ও সহনশীলতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বিএনপিসহ ৬৩ রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছিলাম, নির্বাচন বর্জন করেই আমরা থেমে যাইনি। আন্দোলন এখনও চলছে।’ শ্রীলঙ্কার উদাহরণ টেনে নুরুল হক বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় যখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ব্যর্থ হয়েছে তখন জনগণ গণঅভ্যূত্থান ঘটিয়েছে। এখানেও জাতীয় নেতৃবৃন্দ সঠিক দিকনির্দেশনায় ব্যর্থ হলে জনগণ আরব-বসন্তের মতো বাংলা-বসন্ত ঘটাবে। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে হবে ছাত্র-যুবক-তরুণদের।’ দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসেও দেখছি, আনন্দ উদযাপনের চেয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বেশি। দেশটাকে এমন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি হিসেবে নাই। আজকে কথা বলার, ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা নাই। চারদিকে কেবল গুম, খুনের ঘটনা। নারায়ণগঞ্জের সাতখুন ও ত্বকী হত্যার ঘটনা আমরা ভুলে যাইনি। কিন্তু ক্ষমতায় সারাজীবন কেউ থাকতে পারেনি। ‘তাই হতাশ না হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবার আহ্বান। নতুন কৌশলে নতুনভাবে আন্দোলন করতে হবে। ভারতের তাবেদারি আমরা করবো না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের এ আন্দোলনে বিজয়ী হতে হবে।’ ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান রাশেদ। গণঅধিকার পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ এবং সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান। ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি নেতা মাসুকুল ইসলাম রাজিব ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউসিলর, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।