সেলিম ওসমানের বক্তব্যে অসন্তোষ!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আসন্ন বন্দর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বন্দরের আঙ্গিনা ছেড়ে সেই নির্বাচন এখন সমগ্র নারায়ণগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনে সদর-বন্দর আসনের সাংসদ একজন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে অপর দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় সমগ্র নারায়ণগঞ্জে এনিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এই আলোচনায় সাংসদ সেলিম ওসমানের বক্তব্যে পাশাপাশি উপজেলার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেন ও আতাউর রহমান মুকুলও সকলের মুখে মুখে এখন। বিশেষ করে গত শনিবার ধামগড় এলাকায় এক সভায় স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশিদের পক্ষ নিয়ে তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মাকসুদ ও মুকুলকে আসন্ন নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালি মাঠে রশিদকে গোল দেয়ার সুযোগ দিতে সেলিম ওসমান দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে কটুক্তি করেন বলে তার অনুসারিদের অভিযোগ। সেলিম ওসমানের এই কটুক্তি বন্দরের সাধারণ মানুষ খুব একটা ভাল চোখে দেখছেন না। বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একাধিক ভোটারের সাথে আলাপকালে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জনপ্রতিনিধি কে হবে তা আমরা ঠিক করব। এখানে এমপি সাহেবের চাপিয়ে দেয়া প্রার্থী আমরা মানব না। ধামগড়ে আয়োজিত সমাবেশে সেলিম ওসমানের দম্ভোক্তি তার জনপ্রিয়তা যে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়েছে তা ভোটারদের আলোচনা থেকেই বুঝা যায়। সেলিম ওসমানের একাধিক ঘনিষ্ট কর্মী ক্ষোভের সাথে বলেন, এমপি সাহেব এম এ রশিদের পক্ষ নিয়ে বন্দরে নিজেন ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। অনেকে এম এ রশিদের জনপ্রিয়তা ও আগামী নির্বাচনে তার বিজয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বিগত নির্বাচনের মত এবারও এমপি সেলিম ওসমান নিজের জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছেন বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে। এসব বিষয় নিয়ে তার ঘনিষ্টজনও এখন অনেকটাই বিব্রত। ধামগড়ের সেই সমাবশে সেলিম ওসমান আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেন ও আতাউর রহমান মুকুলকে সরে দাঁড়ানোর নিদের্শ দিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি হলেও সেলিম ওসমান এমএ রশিদের পক্ষে আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন। এনিয়ে সেলিম ওসমানের বিপক্ষের পাল্লা দিন দিন ভারি হচ্ছে। সেলিম ওসমান সেই সমাবেশে বলেন, মাকসুদ ‘রাজাকার সন্তান’। আমি বলেছি, মানুষের জন্য কাজ করো, বাব দাদার পাপ ভুলে যাও। পাপে বাপেরেও ছাড়ে না। মাকসুদ সাহেব, আপনি আল্লাহর কাছে মাফ চান। নিজ দায়িত্বে ফিরে আসুন। আমি আপনাকে কিছু বলব না। তবে মনে রাখবেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা। যদি ভালোয় ভালোয় কথা শোনেন তো শুনবেন, না হলে মুগুর কীভাবে বানাতে হয় সেটা আমরা জানি। মুগুরের মাধ্যমেই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। আপনি আগামীকাল নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুকুলের উদ্দেশ্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আরেকজন আমার অত্যন্ত প্রিয়। তিনি রশিদ ভাইয়ের আগে এখানে চেয়ারম্যান ছিলেন। উনাকে তার দল বহিষ্কার করেছে। উনি আমার কাছে গিয়ে শুনতে চেয়েছিলেন আমার মতামত। আমি তাকে বলেছি, আপনাকে মানুষ ভালোবাসে সন্দেহ নাই। আপনি মুরুব্বি হিসেবে থাকেন। আপনাকে বিভিন্ন স্কুলের সভাপতি বানিয়ে দিয়েছি। আপনি মানসম্মান নিয়ে বাকি জীবনটা কাটান। আর আপনি রাজনীতির পথে হাঁটিয়েন না। আমি সরাসরি বলছি, মুকুল আমার ছোট ভাই। আপনি এই পথ থেকে সরে দাঁড়ান। দুই প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, একজন আইনপ্রণেতা কিছুতেই দেশের কোনো নাগরিককে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলার নির্দেশনা বা চাপ দিতে পারেন না। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যোগ্যতাসম্পন্ন সকলের নির্বাচন করার সুযোগ আছে। একজন আইনপ্রণেতার এমন বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার পছন্দের প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে চাচ্ছেন। দেশের নির্বাচন কমিশন যে শক্তিশালী নয় তা এই ঘটনায় আরও বেশি সুস্পষ্ট হলো। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, সাবেক দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিস্কৃত) আতাউর রহমান মুকুল, জেলা জাতীয় পার্টির সহ সভাপতি ও বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান। সেলিম ওসমানের এই দম্ভোক্তির পর বন্দর উপজেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যতটা না সোচ্চার তার চেয়ে বেশী সোচ্চা হয়ে উঠছেন তাদের সমথকরা। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমে বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রশিদ তার অবস্থান কতটুকু মজবুত রাখতে পারবেন এ নিয়ে বন্দরের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় হয়েছে। এলাকার অধিকাংশ ভোটার এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষপাতদুষ্টকে ভাল চোখে দেখছেন না। তারা সকলের অংশ গ্রহনের মধ্যে দিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে দাবি জানিয়েছেন।