বেহাল অবস্থা লাশকাটা ঘর
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নানা সমস্যায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জের একমাত্র লাশকাটা ঘরটি (মর্গ)। আধুনিক ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না থাকায় কোনো রকমে চলছে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। প্রায় প্রতিদিনই নগরীতে ঘটছে খুন, আত্মহত্যা ও অপমৃত্যুর মতো ঘটনা। এসব মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে করতে হয় ময়নাতদন্ত। জেলার সাতটি থানার ময়নাতদন্তের জন্য রয়েছে একটিমাত্র লাশকাটা ঘর (মর্গ)। সরেজমিন দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ওই মর্গে মরচুয়ারি (মৃতদেহ সংরক্ষণের হিমাগার), কফিন (কাঠের বাক্স) ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। চলতি বছর এসবকিছু আনার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটাও অনিশ্চিত। মর্গের প্রথম জানালাটি ভাঙা। এছাড়া মর্গের দুটির কক্ষের অধিকাংশ জানালার কাচ ভেঙে গেছে। চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) মধ্যে দুটিই নষ্ট। একদিকে জানালার কাচ ভাঙা অন্যদিকে এসির কার্যকারিতা কম হওয়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে নেই মর্গের কক্ষ। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা না থাকায় মর্গের মেঝেও রয়েছে অপরিচ্ছন্ন। মর্গের তত্ত্বাবধায়ক দরবন সুইপার দেশ বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মর্গে ময়নাতদন্তের কাজ চলে। দিনের অন্য সময়ে লাশ আসলে পরদিন ময়নাতদন্ত করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে অধিক সময় ধরে লাশ পড়ে থাকলে সেই লাশে দ্রুত পচন ধরে। অতিরিক্ত সংখ্যক লাশ হয়ে গেলে সেগুলো ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়। তখন অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই চলে ময়নাতদন্তের কাজ। ঝড়ের বাতাসে জানালার কাচগুলো ভেঙে গেছে। আমরা হাসপাতালের স্যারকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রয়াত সংসদ সদস্য আলহাজ নাসিম ওসমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক মর্গ হাউজটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু এত বছরেও মর্গের ব্যবস্থাপনায় কোনো উন্নতি করা হয়নি। তখন থেকে আজ অবধি একই সংখ্যক এসি ও যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে মর্গের কার্যক্রম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মর্গের এক কর্মী জানান, জেলায় একাধিক খুনসহ অন্যান্য ঘটনায় লাশ এলে দুটি ছাড়া সব লাশ নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। লাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পুরো মেঝে নোংরা হয়। পরদিন কাটতে কাটতে সেই লাশ পচে যায়, দুর্গন্ধ বের হয়। জেলা সিভিল সার্জন এ এফ এম মশিউর রহমান বলেন, ‘মর্গের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি অচিরেই মর্গ দেখতে যাব। কোনো সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘মর্গের আধুনিকায়নের জন্য ২০১৮ সালে মরচুয়ারি কুলারের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। গত বছর অনুমোদন পাব ভেবেছিলাম কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি।’