সদর উপজেলা নিয়ে বিপাকে আ’লীগ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান অনেকটাই বিপাকে এখন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামীম ওসমানের একাধিক অনুসারি প্রাথর্ীী হওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন কায়দায় প্রচার প্রচারনা শুরু করে দিয়েছেন। বিশেষ করে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে কে প্রার্থী হবেন এনিয়ে শামীম ওসমান বলয়ে একাধিক মত রয়েছে। এনিয়ে ইতিমধ্যেই সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শামীম ওসমান বিভিন্ন ভাবে আলাপ আলোচনার পর ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্তে পৌছানোর বদলে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী অনড় মনোভাব প্রকাশ করায় শামীম ওসমান উক্ত সভায় কাউকে তার সমথ্যনের ঘোষণা না দিয়ে বরং সেই সভায় শামীম ওসমান ক্ষোভ প্রখাশ করেছেন। একধিক সূত্র জানায়, শাহ নিজাম সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে অনড় থাকলেও সাধারণ নেতাকর্মী ও ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী শাহাদাৎ হোসেন সাজনু। যদিও নিরপেক্ষ ভোটারদের পছন্দের তালিকায় ইব্রাহীম চেঙ্গিসের নাম জানা গেলেও শাহ নিজাম সব কিছু ছাপিয়ে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের অনুকম্পা পাওয়ার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা ছারিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সকল প্রার্থীর জন্য উম্মুক্ত করে দিলে শামীম ওসমানের জন্য পদধারী নেতা ও সাধারণ কর্মীদের মন রক্ষার জন্য কোরামিন হিমাবে কাজ করতে পারে বলে অভিঙ্গ মহল মনে করছেন। তবে একাধিক ভোটারের সাথে আলাপ করলে জানা যায়, শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট জনের মধ্যে যে দুই জন প্রার্থী রয়েছেন তাদের মধ্যে সাজনু অনেকটা ভাল বলে মনে করছেন। এদিকে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ভোটাদের ভোট দেয়ার প্রত্যাশা এবার বেড়েছে। মামলাসহ নানা জটিলতায় প্রায় ১৫ বছর ভোট বিহীন উপজেলার ভোটাররা। সারা দেশের ১৫২টি উপজেলার সাথে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচনের তফসিল ঘোষনায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে যেমন শুরু হয়েছে তোড়জোড়, তেমনি নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে ভোটার ও সমর্থকের উৎসাহ। একই সাথে ‘নির্বাচন হওয়া-না হওয়া নিয়ে’রয়েছে শঙ্কাও। তবে, সব ছাপিয়ে দেশের প্রভাবশালী ও আলোচিত সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দিকে তাকিয়ে সবাই। সম্প্রতি উপজেলাটিতে একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুঞ্জন ছিল, ওই সভায় একক কোন প্রার্থীর নাম আসবে। তবে, শামীম ওসমান তা না করে, সবাইকে অপেক্ষায় রেখেছেন। একইসাথে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজের সন্তান দাবি করে অনুরোধ করেছেন- ‘তাকে যেন কেউ বিব্রত না করেন’। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে থাকতে আলোচিত প্রার্থীরা করছেন নানা দৌড়ঝাঁপ। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতকি, সামাজিক সভা, অনুষ্ঠানে। সদর উপজেলার এবার ক্ষমতাসীন দলের তিন নেতা প্রার্থীর তালিকায় আলোচিত হচ্ছেন বেশি- এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল ও মহানগর যুব লীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুর নাম। সদর উপজেলার নির্বাচন, প্রার্থীতা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিষয়ে আলোচনা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শাহ নিজাম সাথে। শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়, নিজ দলের আরও দুইজন সম্পর্কে। উত্তরে শাহ নিজাম জানালেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জননেতা শামীম ওসমানের সৈনিক। কিশোরকাল থেকেই আমরা শামীম ওসমানের দিক নির্দেশনায় রাজনীতি শুরু করি, আজ অবদি আমরা তার নির্দেশনায়-ই চলি। আমরা একটি বৃহৎ পরিবার। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো মানসিকতা সবাই রাখে। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা অনেকেই বলবেন। আজ আমার যেমন যোগ্যতা আছে, তেমন অনেকেরই যোগ্যতা আছে নির্বাচন করার। এর আগে ২০০৯ সালে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন আমাদের আনোয়ার হোসেন ভাই, যুবলীগের সভাপতি কাদের ভাই এবং আবু হাসনাত শহীদ মোঃ বাদল ভাই। কিন্তু বাদল ভাই যখন নির্বাচন করেছিলেন সেই সময় তার বয়স কিন্তু অনেক ছোট, আমাদের ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি সানির বয়সে সে নির্বাচন করেছে। সেই দিক থেকে দেখলে আসলে- আমরা অনেকটা বয়সের উপরে উঠেই নির্বাচনটা করছি। আর হেলাল আমার ছোটবেলার বন্ধু, সাজনু আমার ছোট ভাই। আমরা একই রাজনৈতিক পরিবার, আর দিন শেষে পরিবার আগে। আমাদের মাঝে বিভিন্ন চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে কিন্তু আমরা একই পরিবারের সদস্য। এখানে যদি যোগ্যতার প্রশ্ন আসে তাহলে আমি নিজেকে যতটুকু যোগ্য মনে করি, হেলাল ও সাজনুকেও ততটুকুই যোগ্য মনে করি। নির্বাচন নিয়ে ভাবনা কী জানতে চাইলে তারুন্যের জনপ্রিয় নেতা শাহ নিজাম বলেন, ‘স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন যাবৎ এ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাইরে ছিল। আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, একটা নির্বাচনের মাধ্যমে এখানে পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমার রাজনৈতিক জীবনে ইচ্ছা ছিল সদর উপজেলা পদকে নিয়ে চিন্তা করার। আমি যদিও কখনো কোন সভায় বা অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কোন মত প্রকাশ করিনি, তবু আমার ইচ্ছে ছিল। এছাড়া যদি আল্লাহর হুকুম হয় এবং আমাদের রাজনীতির অভিভাবক একেএম শামীম ওসমান যদি মনে করেন তাহলে আমি নির্বাচন করবো। এই কথাই আমি পূর্বের সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি।’ আপনি সমর্থন না পেলে কি মনে করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহ নিজাম বলেন, ‘৩০ মার্চের এক সভায় আমাদের তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীরা আমাদের অভিভাবক শামীম ওসমানকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। শামীম ওসমান যাকে নির্বাচন করার জন্য মনোনীত করবেন তাকেই আমরা সবাই নির্বাচিত করবো। এই কথায় সবাই হাত তুলে সমর্থন দিয়েছিলো। সেখানে আব্দুল হাই ভাই, বাদল ভাই, চন্দনশীল ও খোকন সাহা ছিলেন। তারাও বলেছেন যে- শামীম ওসমান ভাই যাকে মনোনীত করবেন আমরা তাকেই সমর্থন করবো। আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিশ্বাস- ‘শামীম ওসমান যাকে মনোনীত করবে তিনি অবশ্যই যোগ্য হবেন’। এখন যদি আল্লাহর হুকুম হয় এবং শামীম ওসমান যদি আমাকে নির্বাচন করার জন্য মনোনীত করেন, তাহলে আমি অনেক কৃতজ্ঞ হবো। কারণ এখানে আমার যতটুকু যোগ্যতা, ততটুকুই যোগ্যতা হেলাল ও সাজনুরও আছে। এর পাশাপাশি যারাই নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তাদের সবাই রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে, সবারই যোগ্যতা আছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ থাকবে, একেএম শামীম ওসমান যাকে নমিনেট করবেন, তাকে নির্বাচন করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। এখানে সেই ব্যক্তিকে নয়, শামীম ওসমানের প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা আছে সেটাকে সম্মান জানিয়েই আমরা কাজ করবে।’ নির্বাচন হবে কি না এই নিয়ে অনেকের অনেক প্রশ্ন ছিলো। কারণ এখানে সীমানা সংক্রান্ত একটা মামলার ঝামেলা আছে। এই বিষয়ে আপনি কি মনে করছেন? উত্তরে শাহ নিজাম বলেন, ‘সীমানা নিয়ে যে মামলাটা আছে সেটা যদি ওভারকাম করা যায় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন হবে। এবং সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো মানসিকতাও সবাই রাখে।’ এদিকে সাধারণ ভোটাররা বলেন, প্রার্থীরা যেভাবে শামীম ওসমানকে উপস্থাপন করছেন তাতে শামীম ওসমানের ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। ভোটাররা যাকে পছন্দ করে তাকে নির্বাচিত করবে। কিন্তু প্রার্থীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য শামীম ওসমানকে কেন বির্তকিত করবে?