শহরে আবারো হকারদের রাজত্ব
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত ফের হকারের দখলে চলে গেছে। তিনটি থানা, দুটি সংসদীয় আসন ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত মূল শহর। নাগরিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে আলোচনায় বসেছিলেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের একত্রিত হওয়ায় অনেকেই প্রথম বার দেখেছে কয়েক যুগ পর ফুটপাতের নতুন চেহারা। পবিত্র রমজান মাসে নগরীর মানুষের অসুবিধা এড়াতে, এমপি সেলিম ওসমানের তত্ত্বাবধায়নে যানজটমুক্ত রাখতে, পুলিশ সুপারের কাছে ৪৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। মেয়র, দুই এমপি এবং প্রশাসন যানজট ও ফুটপাত মুক্ত নগরী গড়তে চেষ্টা করলেও বিপাকে পড়েন হকাররা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঈদকে সামনে রেখে মেয়র, এমপি ও প্রশাসন একসঙ্গে আলোচনা করে মানবিক বিবেচনায় হকারদের জন্য ‘হলিডে মার্কেট’-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হকারদের পরিবারের কথা বিবেচনা করে ও সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সপ্তাহের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, চাষাঢ়া খাজা মার্কেটের সামনে থেকে শুরু করে মিশনপাড়া, ডনচেম্বার ও মেট্রো হল সড়কের একপাশে হলিডে মার্কেটের কার্যক্রম চলমান থাকবে। যাতে করে কোনোভাবে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত বেদখল না হয়। গত কয়েক দিন যাবত বঙ্গবন্ধু সড়কের ডিআইটি ও ২ নম্বর গেটসহ প্রধান প্রধান সড়কে ফের বসতে শুরু করেছেন হকার। দিনের বেলা যেমন তেমন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অধিকাংশ সড়ক থাকে হকারদের দখলে। দুই দিন হলিডে মার্কেট থাকলেও বঙ্গবন্ধু সড়কেও থাকে হকারের জমজমাট ব্যবসা। এদিকে হকারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের জন্য হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থা করলেও বঙ্গবন্ধু সড়ক দখল করায়, ক্ষুব্ধ সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সেলিম ওসমান। হকারদের নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলেও তাদের এমন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। সেলিম ওসমান বলেন, ‘হকারদের সঙ্গে আলোচনা করে হলিডে মার্কেটের ব্যবস্থার মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হলো। এরপরও বঙ্গবন্ধু সড়ক এবং ডিআইটির ২ নম্বর গেটে হকাররা যদি বসেই তাহলে এসব করার অর্থ নেই। হকারদের জন্য অনেক বড় পরিকল্পনা করেছিলাম। তা বাস্তবায়নের বিষয়ে এখন অনিশ্চিত হয়ে গেল।’ হকারদের প্রতি নমনীয়তা নয়, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বলে পরামর্শ সচেতন মহলের।নগরবাসিরা জানান, হকারদের জন্য ফুটপাত দিয়ে ঠিকমতো চলচল করা যায়না। রাস্তার দুই পাশেই বসে তারা। এমন ভাবেই বসেন, মানে হাটার জন্য কোনো জায়গায় রাখেন না তারা। এটা রীতিমতো খুব খারাপ একটা বিষয়। আসলে প্রশাসনের উচিৎ এ বিষয়টা একটু কঠিন ভাবে দেখা। নারায়নগঞ্জ প্রেসক্লাবে জনপ্রতিনিধিদের গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনার পর নগরবাসী কিছুদিন স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারলেও আবারো শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় মানুষের চলাচলের অসুবিধার পাশাপাশি যানজনের মত দুর্বিসহ ভোগান্তির আশংকা করছেন নগরবাসী। বি.বি রোডস্থ হকাদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আসলে সকলের চোখে আমরা দোষী। কিন্তু সবার এইটুকু তো বোঝা উচিৎ যে আমরা তো আর ফাও ফাও দোকান দিয়া বসিনা, টাকা দিয়াই বসি। এখন চুপ থাকলে আমরা ভালা, আবার না বইলাও পারতাছি না। ওনারা যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সেটা আসলে টাকা বাড়ানোর একটা ফন্দি। আমরা প্রতিদিন যেই টাকা দিই, সে টাকায় ওনাদের হয়না। সে কারনেই শুধু শুধু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। তাছাড়া ঈদ চলে আসছে। কতদিন আর বেকার অবস্থায় চলা যায়। আমাদের পরিবার না খেয়ে দিনানিপাত করছে। তাই জীবনেট ঝুঁকি নিয়ে আমরা ব্যবসা করতে বসেছি। বিকল্প ব্যবস্থা যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের জন্য না করেন আমাদের এভাবেই চলতে হবে। চাষাঢ়া এলাকার রিপন মিয়ার ছেলে জিহাদ জানান, এ নিয়ে আর নতুন করে কি বলবো। পুলিশ আর হকাররা আমাদের নাটক দেখাচ্ছেন, আর আমরা দেখছি। এই সবকিছু উচ্ছেদ করে দিচ্ছে, আবার একটু পর যেমন তেমনই। আসলে সমস্যটা যে কোথায় সেটাই বুঝতে পারছি না। যে যার যার মতো নাটক করছে, আর ভুগছি আমরা সাধারন মানুষরা।