উৎসবমুখর নির্বাচনে এমপিরাই শঙ্কা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দুই ধাপে নারায়ণগঞ্জের ৫ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ৮ মে ও দ্বিতীয় ধাপে সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাচন ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ৫ উপজেলার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও নারী) প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচিত হলে উপজেলায় কি কি উন্নয়ন করবেন তার আশ্বাস দিচ্ছেন ভোটারদের। তবে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও উৎসবমুখর হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অনেক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখালেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা চাচ্ছেন উপজেলা পরিষদে ‘মাই ম্যান’। যে কারনে অনেক প্রার্থী নির্বাচনের আগ্রহ দেখালেও তারা প্রকাশ্যে প্রচারণা করছেন না। ইতোমধ্যে সদর ও বন্দর উপজেলা নিয়ে স্থানীয় ২ সংসদ সদস্যের অবস্থান নিয়ে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় নারায়ণগঞ্জের উপজেলা নির্বাচনে মাঠে আছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও উৎসবমুখর করতে দলগত ভাবে এবার নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয়ায় নৌকা প্রতীক ছাড়াই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা মাঠ উন্মুক্ত করে দিলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা চাচ্ছেন উপজেলা পরিষদে ‘মাই ম্যান’। গত ৩০ মার্চ ফতুল্লায় কাশীপুরে থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত বর্ধিত সভায় শামীম ওসমান আসন্ন সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে বলেন, ‘আমি কোনো নাম ঘোষণা করবো না। আমার অনুরোধ আমাকে বিব্রত করো না। এটাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে আমি যা বলব সেটাই হবে এর বাইরে কিছু হবে না।’ সদর উপজেলা নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আছেন জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া সাজনু, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ। এদিকে গুঞ্জন রয়েছে শামীম ওসমান সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামকে চাচ্ছেন। সেইক্ষেত্রে বাকি প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়ার গুঞ্জন রয়েছে। বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সরে যাওয়ার জন্য কড়া ভাষায় বক্তব্য রাখেন সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নে আয়োজিত এক সভায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ রশিদ ও ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানুর প্রতি নিজের সমর্থন প্রকাশ করে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণায় নামা দুই প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুল ও মাকসুদ হোসেনকে সরে যেতে বলেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি ভালোয় ভালোয় কথা শোনেন তো শুনবেন, না হলে মুগুর কীভাবে বানাতে হয় সেটা আমরা জানি। মুগুরের মাধ্যমেই ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে। আগামীকাল নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।’ যদিও সেলিম ওসমানের হুঁশিয়ারিকে আমলে নেননি দুই প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুল ও মাকসুদ হোসেন। তারা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে না দিয়ে আরও জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই অবস্থা জেলার অন্য তিন উপজেলায়ও। সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা উপজেলা পরিষদে ‘মাই ম্যান’ বসাতে চাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সরকার উন্মুক্ত নির্বাচনের আয়োজন করলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যরা চাচ্ছেন নিজেদের পছন্দের একক প্রার্থী দিয়ে সহজ জয় নিশ্চিত করতে। এমনিতেই নারায়ণগঞ্জে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে আগ্রহ হারাচ্ছে ভোটাররা। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক উঠিয়ে দিলেও তার সুফল নারায়ণগঞ্জে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীদের। একদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোট বর্জন করছে অন্যদিকে স্থানীয় এমপিরা সহজ জয় নিশ্চিত করতে একক প্রার্থী দিচ্ছে। আবার সেই প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে তুলনামূলক শক্তিশালী প্রার্থীকে বসিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় কে বিজয়ী হবেন তা ভোটের আগেই নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় ভোটের দিন কেন্দ্রে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভোটাররা। অনেকে বলছেন সাধারণ ভোটারতো দুরের কথা আওয়ামী লীগের ভোটাররাও এখন ভোট দিতে কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে তারা দুষছেন একজন প্রার্থীর সহজ জয় নিশ্চিত করতে অন্যান্য প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়া কিংবা আগ্রহী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখাকে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনে কোনো প্রকার অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার কর্মকা-ে জড়িত না থাকার জন্য মন্ত্রীসহ দলীয় সংসদ সদস্য ও নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ কোনও ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সতর্ক করেন তিনি।