সিদ্ধিরগঞ্জে মোটরবাইকের দাপটে আতঙ্কিত এলাকাবাসী!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর কাছে নতুন এক আতঙ্কের নাম বেপরোয়া মোটরসাইকেল। সিদ্ধিরগঞ্জস্থ মিজমিজি-জালকুড়ি সড়কে উড়তি বয়সের মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে দিনদিন মরণফাঁদে পরিনত হচ্ছে সড়কটি। জনসার্থে সিটি করপোরেশন (নাসিক) কর্তৃত সড়কটি নির্মাণ করা হলেও তা এখন মৃত্যু ভয়ের অন্যতম কারণ। প্রশান্তির খোঁজে দূরদূরান্ত হতে ঘুরতে আসা মানুষদের থাকতে হয় দুর্ঘটনার ভয়ে। অতি শীঘ্রই এদের নিয়ন্ত্রণ না করা হলে অনেক পরিবার তাদের স্বজন হারানোর আশঙ্কাও করছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যকার সিদ্ধিরগঞ্জ অতি ঘনবসতিপূর্ণ থানা। এখানে অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা থাকার ফলে স্থায়ীদের চেয়ে অস্থায়ী মানুষের বসবাস বেশি। এরিয়াটিতে তেমন কোনো বিনোদনের স্পট না থাকায় খোলামেলা পরিবেশকে উপভোগ করতেই মিজমিজি-জালকুড়ি সড়কের ১০ পাইপ অংশে দর্শনার্থীরা সর্বক্ষণ ভীড় জমান। সিটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণে এই সড়ক মানুষের কাছে অন্যরকম একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দিবারাত্রি মানুষকে এখানে ছবি তোলা থেকে শুরু করে আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার শর্ট ফিল্মও করেন এই সড়কে। এদিকে জনসমাগম তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট থাকলেও ব্যস্ত এ সড়কেটিতে মোটরবাইকের আধিপত্যই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। মানুষজন জানিয়েছে, কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া গতির ফলে একাধিক দুর্ঘটনাও ঘটেছে এখানে। দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় হওয়াকে কেন্দ্র করে সড়কের এপার-ওপার ও ডাম্পিং সংলগ্নে বাসানো হয়েছে কয়েকশো ভাসমান খাবারের দোকান। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নন শিশু বাচ্চাদের খেলাধুলা ও আনন্দের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। গড়ে উঠেছে অনেকগুলো ক্যাফেশপও। তবে, আনন্দঘন মূহুর্ত বিষাদে পরিনত হবার ভয়ের কথা জানিয়েছেন অনেক দর্শনার্থী। এলাকাবাসী ও ডাম্পিং ব্রিজ সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, অধিকাংশ উড়তি বয়সী কিশোর ও যুবকরা দলবদ্ধ হয়ে সড়কটি দাপিয়ে বেড়ায়। একে-অপরে পাল্লা দিতে গিয়ে বহুবার ঘটিয়েছে দুর্ঘটনাও। যাতে মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছিল। চালকদের হুন্ডায় নানা ধরনের শব্দ দূষণের হলার ব্যবহারের ফলে অশান্তিতে থাকতে হয় তাদের। গত ১৩ এপ্রিল রাতে ডাম্পিং অংশের ব্রিজ সংলগ্নে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন তিন যুবক। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) পক্ষ থেকে ডাম্পিং করার উদ্যোগ নেবার পরিকল্পনার পরই ডাম্পিংসহ এর আশপাশে মানুষজনের উপস্থিতিতে সর্বক্ষণ সরগরম থাকে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পায়ে পায়ে বাড়ি খান কর্মব্যস্ত মানুষেরা। পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে যান সেখানে। কিন্তু সুন্দর এই মনোরম পরিবেশে মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে উড়তি বয়সী মোটরসাইকেল চালকরা। তাদের বেপরোয়া গতিতে চালানোর ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জনতা। সড়কটিতে কিছুদিন পরপরই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পহেলা বৈশাখের রাতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া রাশেদুল ইসলাম নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এই সড়কটি একেবারে মোটরসাইকেল চালকরা দখলে নিয়ে গেছে। পাল্লাপাল্লির চালানোতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটবে বলে ধারণা করলাম। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। প্রশাসন চাইলেই এটি সম্ভব। সানজিদা শারমিন নামক এক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুদৃষ্টিতে এদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে নাসিক কাউন্সিলরদের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা জানতে প্রতিবেদক কথা বলে স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে তারাও জানিয়েছে মতামত। নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেছেন, আমি নিজেই বহুবার সশরীরে মোটরসাইকেল চালকদের থামিয়ে থামিয়ে বলে দিয়েছি আস্তেধীরে চালাতে। উড়তি বয়সী পোলাপান সড়কটিতে অনেক বেপরোয়াভাবে চালিয়ে থাকে। যার কারণ দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। এর আগে সড়কের মাঝে একটি বিদ্যুতের খাম্বার সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা লেগে একটি ছেলের মৃত্যু হয়। এরপর আমি ওই দ্রæতই মাঝখান থেকে খাম্বাটি সরিয়ে দিয়েছিলাম। আমি আমার তরফ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি। চালকদের অনেককে থামিয়ে বলেও দিয়েছে ৪০ স্পিডের উপরে না চালাতে। ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইস্রাফিল প্রধানকে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার হবে কিনা মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলে, আপনি উদ্যোগ নেন আমি কিভাবে নিবো? প্রতিবেদক আপনার এরিয়ায় আপনার দায়িত্ব রয়েছে এমন কথা বলার পর সে বলেন, এটা পুলিশের দায়িত্ব পুলিশকে ফোন দেন। আমি আর আপনি সমানে সমান। পুলিশ গাড়ি আটকে যদি চালকদের ধমক দেয় তাহলেই নিয়ন্ত্রণ হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমরা মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে মোটরসাইকেল আটক করি। মূলত একজনের মোটরসাইকেল আরকজন চালালোর কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। যারটা সে চালালে এমন খুব কমই হয়। আর ঈককে কেন্দ্র করে যুবকরা ওই সড়কে একটু বেশিই চলাফেরা করছে। আমরা এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবো। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।