সোনারগাঁয়ে চলছে টাকার খেলা!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
সোনারগাঁয়ে জমে উঠেতে শুরু করেছে উপজেলা নির্বাচন। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীর মাঝে চলছে অর্থের প্রতিযোগিতা। ভোট বাগিয়ে নিতে অনেকেই টাকার খেলায় নেমেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। বিগত সংসদ নির্বাচনের মত উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে সোনারগাঁয়ে। তবে দলীয় প্রতীক বিহীন এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের। বোদ্ধা মহল বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও এবার আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝেই জমে উঠছে উপজেলা নির্বাচনে ভোটের লড়াই। ইতিমধ্যেই একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থীতার জানান দিয়েছেন। অনেকেই সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সোনারগাঁয়ে নির্বাচন জমে উঠার সম্ভাবনা বিদ্যমান। কেননা, এই উপজেলায় বর্তমান সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে যদি কাউকে সমর্থন করেও থাকেন, তাহলেও তার সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নামার মত হেভীওয়েট প্রার্থী রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগে। এতে প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ন নির্বাচন হওয়ার পাশাপাশি ভোটারদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত হতে পারে বলে মনে করেন বোদ্ধা মহল। জানা গেছে, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম নান্নু, আলী হায়দার ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর সহ আরো বেশ কয়েকজন প্রার্থী। প্রার্থীদের মাঝে ভোটের আগেই শুরু হয়েছে টাকার লড়াই। বিশেষ করে, বিএনপির ভোটের দিকে নজর রয়েছে অনেকের। সেই লক্ষ্যে বিএনপি নেতাদের সাথে কেউ কেউ গোপন সখ্যতা গড়ে তুলছেন। রমজানে সোনারগাঁ বিএনপির ইফতার মাহফিলকে ঘিরে এই অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি সদস্য ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর বিএনপি নেতাদের কাধে ভর দিচ্ছেন ভোট বাগিয়ে নেয়ার আশায়। ইতিমধ্যেই বাবু ওমর মোটা অংকের অর্থ ডোনেশন করেছেন বিএনপির ইফতার মাহফিলে; এমন অভিযোগ উঠার পর রাজনৈতিকাঙ্গণে হৈচৈ শুরু হয়েছিল। যদিও এই তথ্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবু ওমরের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘বাবু ওমর কালো টাকার বস্তা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। সে বিভিন্ন খাতে টাকার ছড়াছড়ি করছে। বিএনপির ভোট বাগিয়ে নিতেও গোপনে বিএনপি নেতাদের সাথে হাত মিলিয়েছে।’ তথ্য বলছে, কেবল বাবু ওমরই নন, সোনারগাঁ উপজেলার চেয়ারম্যান হতে অন্যান্য প্রার্থীরাও আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। অনেকেই টাকার ছড়াছড়ি করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, সোনারগাঁয়ের বর্তমান এমপি কায়সার হাসনাতের সমর্থন বাগিয়ে নেয়ার জন্য তার অনুগতদের অনেকেই জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই টাকাও উড়িয়ে যাচ্ছেন সমর্থন আদায়ের জন্য। তথ্য মতে, রফিকুল ইসলাম নান্নু ও আলী হায়দার কায়সার হাসনাতের অনুগত। কায়সার কাকে সমর্থন দিবেন তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা শোনা গেলেও তিনি যে তার অনুগতদের মধ্য থেকেই একজনকে ভিতরে ভিতরে সমর্থন দিবেন- তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে, টাকার খেলা হলে তা বাগিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রফিকুল ইসলাম নান্নুর। কেননা, বিগত সময়ে নান্নু দু-হাতে অর্থ কড়ি কামিয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। টাকার খেলায় নান্নুর সাথে আলী হায়দার পেড়ে উঠবে কিনা- তা নিয়েও চলছে আলোচনা। স্থানীয়রা বলছেন, এমপি কায়সার হাসনাতের সাথে মাহফুজুর রহমান কালাম ও বাবু ওমরের সম্পর্ক বর্তমানে মধুর নয়। তাছাড়া, কালাম কিংবা বাবু ওমর চেয়ারম্যান হোক- তা চাইবেন না কায়সার হাসনাত। কেননা, তারা চেয়ারম্যান হলে কায়সার হাসনাতের সাথে চোখ চোখ রেখে কথা বলার সাহস দেখাতে পারেন। ফলে কায়সার যদি ভেত ভেতরে কাউকে সমর্থন করেই থাকেন, তাহলে তা করবেন অনুগতদের মধ্য থেকে কোনো একজনকে। এক্ষেত্রে কায়সার সমর্থিত প্রার্থীর সাথে আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান কালাম এবং বাবু ওমরের ভোটের লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসন্ন সেই লড়াইকে সামনে রেখেই টাকার ছড়াছড়ি করে যাচ্ছে প্রার্থীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনারগাঁয়ে মাহফুজুর রহমান কালাম ভোটারদের সাথে গণসংযোগ ও মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। স্থানীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করে যাচ্ছেন তিনি। প্রার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকেও কালামকে অনেকেই এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও বসে নেই। তারাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা, টাকা ও আধিপত্যের লড়ায়ে কে জয়ী হন- তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২১ মে পর্যন্ত।