আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | বিকাল ৩:০৪

পরীমণি ইস্যুতে আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছিল

ডান্ডিবার্তা | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির নেতা এবং ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) দাখিল করেছে পিবিআই। প্রতিবেদনে হত্যাচেষ্টার বিষয়টি না আসায় কিছুটা আপত্তি থাকলেও সার্বিক বিষয় নিয়ে খুশি বাদী নাসির উদ্দিন। তার দাবি, ওই ঘটনায় ‘বলির পাঁঠা’ হয়েছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টানের সংগে নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘পিবিআইয়ের চার্জশিটে আমার মেজর ডিমান্ডটা আসেনি। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি (পরীমণি) একটা বস্তু নিক্ষেপ করেছিলেন, আমি কোনোভাবে আত্মরক্ষা করেছিলাম। ওই সময়েই তাল হারিয়ে পরীমণি পড়ে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, আমি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে যা ঘটেছিল তাতে পরীমণি পড়ে গিয়েছিলেন নাকি শ্লীলতাহানি হয়েছে? এটা তো আসলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুড়ে মেরেছিলেন তিনি। এ বিষয়টি পিবিআইয়ের চার্জশিটে আসেনি। বাকি সবগুলো বিষয় এসেছে।’ নাসির বলেন, ‘তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সেই রাতে তিনি (পরীমণি) কী কী করেছিলেন। মানুষ জানতে পেরেছে। তিনি নায়িকা, বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু সুবিধা বেশি থাকে। তার মিডিয়া ডাকার ক্ষমতা ছিল। তার কান্নাকাটি দেখে সেই সময় সারা দেশে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। তখন আমাদের কথা কেউ শুনতে চাইল না। শুধু-শুধু আমরা অপরাধী হয়ে গেলাম। এখন মানুষ সবকিছু বুঝতে পারছে, আসলে ঘটনাটা কী।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সভাপতি ছিলেন তৎকালীন আইজিপি। তখন সরকারের বিভিন্ন মহলে তার শত্রæ ছিল। একটা কথা প্রচলিত আছে, কান টানলে মাথা আসে। তারা চেয়েছিল বোট ক্লাবের ঘটনাকে বড় করতে পারলে আমার ক্ষতি হবে, আমার ক্ষতি হলে তারও ক্ষতি হবে। সে রকম কিছু একটা করার চেষ্টা করা হয়েছিল তখন।’ ‘আবার যখন আমাকে ধরা হলো তখন তিনি নিজে বাঁচার জন্য উল্টো আমার বিরুদ্ধে কাজ করেন। এ জন্য বললাম, আমি বলির পাঁঠা হয়েছি। আসলে ওই ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট হওয়ার মতো কোনো কারণই ছিল না। এটা জোর করে করানো হয়েছে। তাহলে আমি তো উভয় দিক থেকে মার খেলাম। তার শত্রæদের দিক থেকে মার খেলাম। আবার তারও মার খেলাম’- বলেন নাসির মাহমুদ। এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই ৬৭ বছর বয়সে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েঘটিত ঘটনা বা সামাজিক অপরাধ করেছি, এমন প্রমাণ নেই। আমি একজন ভদ্র মানুষ, ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই। আমার ছেলে আছে, তাদের স্ত্রীরা আছে। সেখানে আমাকে যেভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল, সেটা এখনো আমার জন্য দাগ হয়ে আছে।’ তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়ার জন্য পিবিআইয়ে ওপর চাপ ছিল উল্লেখ করে নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘আমি জানি তাদের ওপর চাপ ছিল। তারপরও তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে সে জন্য আমি খুশি। তারা সমস্ত কিছু জব্দ করে প্রতিবেদন করেছে।’ উল্লেখ্য, স¤প্রতি নায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রতিবেদনে আসামি পরীমণি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আরেক আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে যা বলছে পিবিআই:
এ মামলার ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকি অমির সঙ্গে জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে মাঝে মধ্যে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ হতো এবং একে অপরের বাসায় আসা যাতায়াত ছিল। ২০২১ সালের ৮ জুন তুহিন সিদ্দিকি অমি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বনানী কিংস বেকারি শপে অবস্থানকালে পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিম তাকে ম্যাসেঞ্জারে কল করে বনানীর বাসায় যেতে অনুরোধ করেন। বাসায় যাওয়ার পর অমির সঙ্গে পরীমণি এবং ফাতেমা তুজ জান্নাত বনিদের সাক্ষাৎ হয়। এরপর তারা অমির কাছে জানতে চান এত রাতে উত্তরা ক্লাবে যাওয়া যাবে কি না? উত্তরে অমি জানান, রাত বেশি হচ্ছে তাই এখন উত্তরা ক্লাবে যাওয়া যাবে না। তখন জিমি জানতে চান যে, তাহলে বোট ক্লাবে যাওয়া যাবে কি না? জবাবে ঢাকা বোট ক্লাবে যাওয়া যাবে মর্মে জানান অমি। তখন পরীমণির অনুরোধে অমিসহ তারা চারজন অমির কালো রঙের জিপ গাড়িতে করে রাত ১২টা ২২ মিনিটে ঢাকা বোট ক্লাবে আসেন। গাড়ির পেছনে পরীমণির সাদা রঙের খালি জিপ গাড়ি বোট ক্লাবে প্রবেশ করে। ক্লাবের দোতলায় উঠে প্রথমে পরীমণি ও ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি বারের সামনে থাকা টয়লেট ব্যবহার শেষে বারের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং টিভির সামনের টেবিলে বসেন। টেবিলে সাক্ষী অমিও বসেন। সৌজন্যতার খাতিরে অমি তাদেরকে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার নিজ খরচে পরিবেশন করে আপ্যায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরীমণি একটি এক লিটারের বøæ-লেবেল মদের বোতল অর্ডার করেন। পরীমণি ও তার সঙ্গে থাকা জিম ও বনি নিমিষেই সেই বোতলের অ্যালকোহল পান করে বোতল খালি করে ফেলেন এবং অনুরূপ আরেকটি বোতলের অর্ডার করেন। তারা ঐ বোতলের আংশিক মদ পান করেন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে:
আড্ডার একপর্যায়ে তাদের ২/৩ টেবিল পেছনে বোটক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাছির উদ্দিন মাহমুদকে আরো দুইজন ব্যক্তির সঙ্গে বসা দেখতে পান অমি। তখন অমি পরীমণিকে নিয়ে নাছির মাহমুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং পুনরায় তাদের টেবিলে এসে বসে মদ্যপানসহ গল্পগুজব করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর নাছির মাহমুদ ও তার সঙ্গে থাকা আরো দুইজন যখন বার থেকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পরীমণি নাছির মাহমুদকে ডেকে বললেন, ‘ভাই আমি আসলাম, আর আপনি এক্ষুনি চলে যাচ্ছেন? আমাদের সঙ্গে আরেকটু বসেন। আসেন কিছুক্ষণ গল্প করি।’ তখন পরীমণির অনুরোধে নাছির মাহমুদ ফিরে এসে পুনরায় তার টেবিলে বসেন। কিছুক্ষণ পর ড্রিংকস শেষে পরীমণি ওয়েটারকে আরো এক লিটারের তিনটি বøæ লেবেল মদের বোতলসহ দুই বোতল ওয়াইন পার্সেল দেওয়ার জন্য অর্ডার করেন। ওয়েটার তখন পরীমণিকে দুই বোতল ওয়াইন পার্সেল দিলেও বøæ লেবেল মদের বোতল স্টকে না থাকায় পার্সেল দিতে পারেননি। তখন পরীমণি ডিসপ্লেতে থাকা একটি বøæ লেবেল বোতল পার্সেল করে দিতে বললে ওয়েটার জানান বোতলটি বিক্রির জন্য নয় এবং ক্লাবের মেম্বার ছাড়া পার্সেল দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরীমণি জোর করে ঐ বোতল নিতে চান এবং টেবিলে হট্টগোল করতে থাকেন। পরীমণি উত্তেজিত হয়ে কার্ডহোল্ডার বের করে দুই-তিনটি ব্যাংক কার্ড দেখিয়ে বলেন, ‘আমি কি ফকিরনি? আমার বিল আমি পরিশোধ করব। আমি এটা নেবই।’ তখন পরীমণির সঙ্গে থাকা ফাতেমা বনি বলেন, ‘ওনাদের যদি রুলস থাকে, মেম্বার ছাড়া নেওয়া যাবে না, তাহলে তুমি নিও না।’ তখন পরীমণি বনিকে থাপ্পড় মেরে বলে, ‘আমাকে দেখে কি মাতাল মনে হয়?’ পরীমণির সঙ্গে থাকা জিম তাকে শান্ত করতে গেলে তাকেও পরীমণি থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পরীমণি খুবই উত্তেজিত হয়ে টেবিলের উপর থাকা গ্লাস, অ্যাশট্রে, বোতল ফ্লোরে এদিক ওদিক ছুঁড়তে থাকেন। তখন নাছির মাহমুদ ক্লাবের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পরীমণিকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে পরীমণি আরো ক্ষেপে গিয়ে একটি অ্যাশট্রে নিয়ে তার দিকে ছুড়ে মারেন। যা তার ডান কানের উপরে মাথায় লাগে। তখন নাছির মাহমুদ ক্লাবে পরীমণিকে সঙ্গে করে আনায় অমির উপর রেগে যান এবং বলেন, ‘এরকম বেয়াদব মহিলা নিয়ে কেন ক্লাবে আসেন, কাল আপনার নামে নোটিশ হবে। এক্ষুনি এদেরকে নিয়ে বেরিয়ে যান।’ তখন জিম তেড়ে এসে বাদী নাছির মাহমুদকে গালমন্দ করতে করতে ২/৩ টা কিলঘুসি মারেন। এরপর আবারও পরীমণি বারের ভেতরে যত্রতত্র গ্লাস ছুড়ে ভাঙচুর করতে থাকেন। একটি গ্লাস নাছির মাহমুদের বুকে লাগলে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন নাছির মাহমুদ বোট ক্লাব ত্যাগ করে চলে যান। ক্লাব ত্যাগ করার মুহূর্তে পরীমণিকে ক্লাব ছেড়ে চলে যেতে বলার জন্য ক্লাবের নিচে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডকে নির্দেশ দিয়ে যান। নাছির মাহমুদ আহত অবস্থায় ঐ রাতে আড়াইটার দিকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা