আজ মঙ্গলবার | ১২ আগস্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৭ সফর ১৪৪৭ | সকাল ১১:৫৬

তীব্র তাপদাহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

ডান্ডিবার্তা | ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে ডায়রিয়া, জ্বর, আমাশয়ের মতো রোগবালাই বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই ডায়রিয়া আক্রান্ত। সাধারণ সময়ে এসব হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থাকে ১০ থেকে ১৫জন পর্যন্ত। তবে বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দৈনিক শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বশেষ তথ্যমতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। চিকিৎসকরা বলছেন, কদিন ধরেই অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়ে গেছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে পাঁচ বছর বয়সি শিশু মো. রহমানকে নিয়ে এসেছেন বাবা কামাল হোসেন। তিনি জানান, ছেলের হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা শুরু হয়; সঙ্গে জ্বরও আসে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাইয়েছি। কিন্তু কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে নিয়ে এসেছি। এখন তার ছেলে আগের চেয়ে ভালো আছে বলে জানান। রহমানের মতো আরও অনেক শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তবে, এসব হাসপাতালে শিশুর তুলনায় পূর্ণবয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশী বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগী ভর্তি আছে, ঈদের ছুটি শেষে ঘরমুখো সব মানুষ ফিরলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশিবার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। গরম এলেই ডায়রিয়া সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও বয়স্করাই এ রোগে বেশি ভোগেন। তাদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শহরে ট্যাপের পানি সেপটিক ট্যাংক বা স্যুয়ারেজ লাইনের সংস্পর্শে দূষিত হয়ে পড়ে। অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, অনেকে এসেছেন ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, হাঁচি-কাশির চিকিৎসা নিতে। তাছাড়া জেলা জুড়েই বিভিন্ন তীব্র গরমে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এপ্রিল মাসজুড়েই দেশে থাকবে তাপপ্রবাহ। এ সময় ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের এক সেবিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, আমাদের এই হাসপাতালে অনেকেই ঈদ ছুটি কাটাচ্ছে ভাগ ভাগ করে, তাই আমাদের সেবিকাদের সংখ্যা রোগীর তুলনায় কিছুটা কম। প্রতিদিন রোগী বাড়ছে, চাপও বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে ১৮০ থেকে ২শ’ মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে। পেটে ব্যাথা ও বসিসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে বেশীরভাগ রোগী। প্রাথমিক চিকিৎসায় আমরা স্যালাইন ও ইনজেকশন দিচ্ছি। এছাড়া রোগী ছেড়ে দেয়ার সময় আমরা বলে দিচ্ছি কি কি খাওয়া যাবে কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি আরও জানান, আমাদের কাছে আপাতত বড়দের স্যালাইন আছে সেগুলো দিচ্ছি। বাচ্চাদের স্যালাইন তুলনামূলক কম আছে হাসপাতালে। ইতোমধ্যে আরএমও স্যার ও সিভিল সার্জন স্যারকে আমরা জানিয়েছি। তাছাড়া আমরা রোগীদের অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে করে মানুষ সতর্কতা অবলম্বন করে। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমান লাইভ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহে নারায়ণগঞ্জের হাসপাতাল গুলোতে ডায়রিয়া রোগী কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে আশঙ্কাজনক না। আমরা লোকজনদের সতর্ক করছি, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতী আছে, ঔষধ আছে পর্যপ্ত পরিমানের। সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনারা বাহিরের খোলামেলা খাবার গুলো বর্জণ করুন। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া আক্রান্ত অনেক কম। এবার যারা তুলনামূলক বয়স্ক তারাই বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের যঠেষ্ট প্রস্তুতি আছে। হাসপাতালে শিশুদের স্যালাইন সংকট আছে কিছুটা। সে ক্ষেত্রে কেমন প্রস্তুতি আপনাদের? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, আমাদের হাসপাতালর গুলোতে শিশুদের স্যালাইন কিছুটা কম। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ওরাল স্যালাইন বেশী দেয়া হয় ক্যানলার তুলনায়। কিছুদিন আগে লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসবে আমরা প্রচুর পরিমানের স্যালাইন ও ঔষধ দিয়েছি। ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর আরও বলেন, আপনার কেউ বাহিরের খাবার খাবেন না। পর্যপ্ত পরিমানের পানি খাবেন। আর যদি পাতলাপায়খানা হয়, তাহলে প্রথমেই বাসায় ওরস্যালাইন খাবে। আর বেশী সমস্যা লাগলে তাহলে অবশ্যই নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবে, ঢিলে ঢালা পোশাক পড়বে। ফ্রীজে রাখা খাবার খাবেন না। ফলমূল খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে থুয়ে খেতে হবে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা