আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | বিকাল ৩:৪১

ফতুল্লায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত আহত

ডান্ডিবার্তা | ২২ এপ্রিল, ২০২৪ | ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকদের সাথে শিল্প পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১০ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন বলেও জানান শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে দু’জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে আব্দুর রাজ্জাক (৩০) ও মোসা. চাঁদনী (২৪) নামে ওই দুই শ্রমিক আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকের বরাতে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ওই দুই শ্রমিকের শরীরের কয়েকটি স্থানে ছররা গুলির আঘাত রয়েছে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে নয়টায় মার্চ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পঞ্চলে অবস্থিত ক্রোনী গ্রæপের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের কয়েকশ শ্রমিক। এতে কয়েক কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। অবরোধ চলাকালীন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে। এই সময় বেশকিছু যানবাহনে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা। বেলা দেড়টার দিকে সংঘর্ষ থামলেও বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিক বিক্ষোভ চলমান অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে কারখানার গেটে একটি নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়া হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, গত ২০ ও ২১ এপ্রিল কারখানার শ্রমিকরা ‘বেআইনিভাবে ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করে কর্মবিরতি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ২২ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ২৪ এপ্রিল কারখানা খুলবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। বেতন না দিয়ে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করায় আরও ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা। এই সময় পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে শ্রমিকদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান দিয়ে পানি ছুড়লে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে শ্রমিকদের ছোড়া ইট-পাটকেলের বিপরীতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পুলিশ সুপার আইনুল হুদা জানান, শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। “শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে।” শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু ওই কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতনের বিষয়টি সুরাহা করছেন না। এখন শ্রমিকরা যদি বেতন না পায় তাহলে তারা তো বিক্ষোভ করবেই। এই কারখানায় এর আগেও অসংখ্যবার এমন ঘটনা ঘটেছে। আমাদের শিল্প পুলিশের বড় একটি অংশ ওই কারখানার সামনে প্রায় সারাবছরই মোতায়েন করে রাখতে হয়। বিষয়টি ব্যবসায়ী নেতারাও জানেন। যদি কারখানার মালিক এটি সমাধান না করে তাহলে সুরাহা করা মুশকিল।” বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলেও জানান শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা। সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশ ৮৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও শটগান থেকে ১৩ রাউন্ড কাঁদানো গ্যাস ছোড়ে বলে জানান শিল্প পুলিশের পরিদর্শক (গোয়েন্দা ও ইনটেলিজেন্স) মো. সেলিম বাদশা। অন্যদিকে, পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের শ্রমিক জারিদুল মন্ডল বলেন, “আমরা সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলাম। হঠাৎ পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়তে শুরু করে। এতে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।” “আমরা আমাদের পরিশ্রমের ন্যায্য পাওনার দাবিতে সড়কে নেমেছি। আমাদের বেতন দিয়ে দিলে তো এই রোদের মধ্যে সড়কে থাকার কথা না। ন্যায্য পাওনার দাবি করা কি আমাদের অপরাধ? তাহলে পুলিশ কেন আমাদের ওপর গুলি চালালো? আমরা যদি সময়মতো বেতন পেতাম তাহলে আমাদের রাস্তায় আসতে হতো না” বলেন মো. ফয়সাল নামে কারখানার আরেক শ্রমিক। এর আগে সকালে বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন শ্রমিকরা ঈদের বোনাস পেলেও মার্চ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও তা দেননি। এতে ঈদের মধ্যে অর্থ সংকটে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা। কারখানাটির শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের দিন খুব কষ্টে যাচ্ছে। ঈদে দেশে (গ্রামের বাড়ি) যেতে পারিনি। বউ-বাচ্চাসহ শহরে ভাড়া বাসায়ই থাকছি। “বাসা ভাড়াও দিতে পারি নাই। বাড়িওয়ালা বারবার তাগাদা দিচ্ছে। এখন তো দুই মাস ভাড়া বাইজা গ্যাছে। মার্চের বেতন পাই নাই, এপ্রিলও শেষের দিকে। এখন কোন মাস রাইখা কোন মাসের বেতন দিবো বুঝতেছি না।” গত ৮ মাস যাবৎ বেতন নিয়ে কারখানার মালিকপক্ষ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করে কারখানাটির আরেক শ্রমিক মো. আলম বলেন, “ঈদের দিনও মোবাইল হাতে নিয়া বইসা ছিলাম বেতন ঢুকবো এই আশায়। প্রতিমাসেই বেতনের লাইগা রাস্তায় নামতে হইতেছে। সামনে কোরবানির ঈদ, ওই ঈদেও আমাগো লগে এমন হইবো।” সুমি নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, “আমাগো আর ঈদ আনন্দ নাই। রোজার মইধ্যে ডাবল ডিউটি কইরাও বিল পাই নাই। এমনকি রোজার ডিউটির সময় ইফতারের খরচটাও দেয় নাই। নিজের কষ্টের টাকা পাইতে এখন রইদের মইধ্যে রাস্তায় নামছি। এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে!” তবে, যোগাযোগ করা হলে কারখানাটির মালিক প্রতিষ্ঠান ক্রোনী গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি জানান, আগামী বুধবার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবেন। তিনি বলেন, “ঈদের আগে সব শ্রমিককে বোনাস দিয়েছি কিন্তু শিপমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ায় মার্চের বেতনটা দিতে পারিনি। আমরা আগামী বুধবারের মধ্যে সকলের বেতন পরিশোধ করে দেবো।” এর আগে, গত ১০ ফেব্রæয়ারিও অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড নামের এই কারখানাটির শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করেছিলেন। এ এইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন রপ্তানিমুখী এ পোশাক কারখানাটির ডাইং ও নিটিংসহ বিভিন্ন সেকশনে অন্তত সাত হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা