বিনা ভোটে জয়ের আশা পূর্ন হলো না!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীতা নিয়ে নাটকীয়তার শেষ নেই। সর্বশেষ মঞ্চায়নে দেখা যায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীতা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা। গতকাল সোমবার তিনি মনোনয়পত্র প্রত্যাহারও করে নেন। আশা ছিল এমএ রশিদ ছাড়া বাকিরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিবেন। কিন্তু সে আশা বালি পড়েছে। অন্যান্য প্রার্থীরাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য প্রচÐ চাপে রেখে আওয়ামীলীগ। আর এসব কিছুই এমএ রশিদের জয় নিশ্চিত করার জন্যই করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। অন্যদিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরুতেই এমএ রশিদকে নিজের পছন্দের লোক দাবি করে প্রকাশ্য জনসমাবেশে পরিচয় করিয়ে দেন সদর-বন্দর আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান। তবে এতেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি তিনি। এমএ রশিদের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য কোন প্রতিদ্ব›দ্বী যেন মাঠে না থাকে সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি। বিশেষ করে মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য সাবধান করে দেন তিনি। গত নির্বাচনের মতো এবারও তিনি এমএ রশিদকে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান বলে স্পষ্ট করে দেন সেলিম ওসমান। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও এমএ রশিদের সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য অনেক প্রার্থীই মাঠে ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগ থেকেই একাধিক প্রার্থী মাঠে ছিলেন তখন। কিন্তু সেই নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়ায় এমএ রশিদের মনোনয়ন দল থেকে চুড়ান্ত করা হয়। স্থানীয়দের মতে সে সময় এমএ রশিদের নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে সকল প্রার্থীকেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়। যা স¤প্রতি বন্দরের ধামগড় এলাকায় একটি বক্তব্যে সেলিম ওসমানকে গর্ব করে তার স্বীকারোক্তি দিতেও দেখা যায়। এর আগে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা মিডিয়াকে বলেন, প্রতিদ্ব›িদ্বতার মাধ্যমে এই চেয়ারে বসার মতো অবস্থায় রশিদ ভাই নেই। বয়স্ক মানুষ, শেষ বয়সে একবার এই চেয়ারে বসার আবদার করেছেন, তাই আমরা তাকে এই সুযোগ দিয়েছি। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও বিপুল এমএ রশিদকে বিপুল ভোটে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আতাউর রহমান মুকুল। সে সময় এমএ সালাম (মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) ও দেলোয়ার হোসেন প্রধানও (কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) ছিলেন শক্ত অবস্থানে। অথচ এমএ রশিদ তাদেরও অনেক পিছনে অর্থাৎ চতুর্থ হয়েছিলেন রশিদ। তাই এবারও সেই একই পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছাড়া, বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমএ রশিদকে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে অধিষ্ঠিত করার মিশনে নেমেছেন তারা। স্থানীয়দের অভিমত, এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য প্রার্থীরা খুবই চাপের মধ্যে ছিলেন। তবে আবু সুফিয়ানের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় একজন প্রার্থী কমে গেলেন। এর আগে পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও এখান থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন আবু সুফিয়ান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছিলেন না তিনি। যদিও দলীয় সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বন্দর উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতার জন্য মোট পাঁচজন বৈধ প্রার্থী আছেন। এরা হলেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতা আতাউর রহমান মুকুল, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান (উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন) মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন আওয়ামী লীগ, তৃতীয় জন বিএনপির সাবেক নেতা এবং শেষের দুজন জাতীয় পার্টির বলে জানা যায়। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে চাপের মুখে আছেন কিনা, কিংবা কতটুকু চাপের মধ্যে আছেন তা জানার জন্য এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ’র সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান তার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের বিষয়ে বলেন, আমাদের এই উপজেলার নির্বাচনে (চেয়ারম্যান পদে) আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তিনটি দলেরই প্রার্থী আছে। তাদের প্রত্যেক দল থেকে একজন করে প্রার্থী থাকলেও আমাদের আওয়ামী লীগ থেকে আমরা প্রার্থী দুইজন। তাই আমাদের দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করার পথ সহজ করতে আমি রশিদ ভাইকে (বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদ) সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এর আগে এক মতবিনিময় সভায় আবু সুফিয়ান বলেন, গতবার উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়েছে। এবার জননেত্রী উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক নেতা আতাউর রহমান মুকুল যুগের চিন্তাকে বলেন, ইনশাআল্লাহ আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো। আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য অনেকেই ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু কোন কিছু করতে পারেনি। তবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তিনি কোন চাপে নেই বলে জানান তিনি।