তীব্র তাপেও সড়কে অবিরাম কাজ যাদের
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
টানা কয়েকদিন ধরে তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। তীব্র এই গরমে অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও অবসর নেই কর্মজীবী মানুষের। কাজের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন মাঠে-ময়দানে, রাস্তায়। অসহনীয় গরমের মাঝে যারা ঘরের বাইরে কাজ করেন, তাদের কষ্টটা একটু বেশিই। প্রচÐ তাপ উপেক্ষা করে কাজ করতে হয় তাদের। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ট্রাফিক পুলিশের কথা না বললেই নয়। মোটা কাপড়ের ইউনিফর্ম ঘামে ভিজে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। নির্দিষ্ট ঘণ্টার বাইরেও তপ্ত রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখছেন যানবাহন। গতকাল মঙ্গলবার ঠিক দুপুর বেলা। তাপমাত্রা তখন ৩৭ ডিগ্রি। রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকলেও তীব্র তাপপ্রবাহে চারপাশে বইছে গরম বাতাস। রাস্তার মোহনায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। তাদেরই একজন ট্রাফিক কনস্টেবল শেখ মহিদুল ইসলাম (৪৮)। রোদে দাঁড়িয়ে বাঁশিতে হুইসেল দিচ্ছেন, আর হাতের ইশারায় যানবাহন চালকদের দিকনির্দেশনা দিতে দেখা যায়। গায়ের পোশাক ঘামে ভেজা। মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৫ সালে কনস্টেবল পদে চাকরিতে যোগদান করি। ঢাকা শহরে আছি ১৬ বছর । ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছি সাত বছর হলো। এরমধ্যে এমন গরম আর কখনও দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজই হচ্ছে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করা। যত গরমই হোক না কেন দায়িত্ব তো পালন করতে হবে। বেশিরভাগ সময় রোদে দাঁড়িয়ে থাকি। ক্লান্তবোধ মনে হলে পাশের ভবনের সামনে ছায়ায় গিয়ে মাঝে মাঝে দাঁড়াতে হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন যারা আছেন, তারা অবশ্যই আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা। গরমে যেন অসুস্থ হয়ে না পড়ি, সেজন্য স্যালাইন, মিনারেল ওয়াটার ও গøুকোজ খাচ্ছি। এগুলো সবই ডিএমপির কমিশনার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া গরমের জন্য আলাদা করে একটি ছাতা পেয়েছি।’ একই জায়গায় দায়িত্বরত আরেকজন ট্রাফিক কনস্টেবল আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ঠান্ডা, বৃষ্টি আর যতই রোদ হোক না কেন, এসব আমাদের সহ্য হয়ে গেছে।’ এদিকে ট্রাফিক পুলিশের পেশাদারত্ব ও মনোবল অটুট রাখতে, প্রচÐ গরমে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের একটু বাড়তি স্বস্তি দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যের জন্য সুপেয় পানির বোতল, খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রত্যেককে একটি করে নতুন ছাতা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ট্রাফিক-বক্সে হাতমুখ ধোয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গরম থেকে নিজেকে রক্ষার বিষয়ে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্র্যাফিক) স্নেহাশিস কুমার দাস বলেন, ‘যতই গরম পড়ুক না কেন আমরা রাস্তা ছাড়তে পারি না। আমাদের কাজ করতেই হবে। তবে সবাকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। কেউ যেন অসুস্থ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই সারা দেশে প্রচÐ তাপপ্রবাহ চলছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সব সময় রাস্তায় থেকে কাজ করেন। রাস্তার ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচÐ রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের কাজ করতে হয়। এমনকি তারা বিশ্রামেরও সুযোগও পান না। চলমান তাপপ্রবাহের সময় তাদের জন্য কিছু জায়গায় স্থায়ীভাবে পানির ট্রলি দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় ভ্রাম্যমাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মেট্রোপালিটন এরিয়ায় যারা রয়েছেন, তাদের সেবা দেওয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা। চলমান তাপপ্রবাহে সড়কে দায়িত্বপালন করা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ইউনিফর্ম পরিবর্তন করার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে পোশাক রয়েছে তার বাইরে গিয়ে বিকল্প পোশাক পরিধানের সুযোগ নেই। তবে কালো যে ছাতাটি রয়েছে সেটির বদলে সাদা ছাতা দেওয়া হবে। যেন গরম কম লাগে। একইসঙ্গে রোদে বা তাপপ্রবাহে কোনও পুলিশ সদস্য অসুস্থ হয়ে গেলে, সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশ হাসপাতাল সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’