তাপদাহে বাড়াচ্ছে পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
গেলো কয়েকদিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে সরকার। এমন অবস্থায় কেমন আছেন পোড়া রোগীরা? রাজধানীর ৫০০ শয্যার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গেলে দেখা যায়— খালি নেই কোনও শয্যা। পাঁচ শতাধিক পোড়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানে। তাদের প্রত্যেকের কাছে চলমান তাপদাহ এক বিভীষিকা। পোড়া ক্ষতের কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুণ। পোড়া শরীরে প্রচÐ এ খরতাপ কীভাবে সইছে তারা— এমন আক্ষেপ রোগীর স্বজনদের। তারা বলছেন, যে গরম সাধারণ মানুষই সইতে পারছে না পোড়া রোগীরা সেটা কীভাবে সইছে! প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পোড়া রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন বিশেষায়িত এই হাসপাতালে। হাসপাতালের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে ১১ বছর বয়সী শিশু রায়হান। গত ফেব্রæয়ারিতে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায় তার। প্রায় পৌনে দুইমাস ধরে আগুনে পোড়ার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। আর কতদিন এ যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে জানে না ছোট এই শিশু। হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়া বেশিরভাগ ওয়ার্ডে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) নেই। আসনের তুলনায় নেই পর্যাপ্ত ফ্যান (পাখা)। এরমধ্যে কয়েকটি ফ্যান নষ্ট। সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীরা নিজ উদ্যোগে ছোট ছোট ফ্যান কিনে ব্যবহার করছেন। তবে এ হাসপাতালের দুইপাশ খোলামেলা থাকায় বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু কয়েকদিনের তীব্র তাপদাহে বাতাসও যেন অগ্নিশিখা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শত শত রোগী গরমে হাঁসফাঁস করছেন। ওয়ার্ডগুলোতে থাকা অল্প কিছু ফ্যান গরমের হাত থেকে রোগীদের স্বস্তি দিতে পারছে না। অধিকাংশ রোগী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছোট ফ্যান কিনে কিংবা হাত পাখা ঘুরিয়ে রোগীকে গরমের কষ্ট থেকে রেহাই দিতে চেষ্টা করছেন।
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুতের আগুনে শরীরের একাংশ পুড়ে যায় ইকবালের। তিনি ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে ৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তীব্র গরমে অসহ্য যন্ত্রণার কথা বলছিলেন তিনি। ইকবাল বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। এরমধ্যে চলমান তাপদাহের কারণে প্রায় মরণাপন্ন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। গতরাতে গরমের কারণে অক্সিজেন নিতে হয়েছে। এরমধ্যে পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। একটা ছোট ফ্যান বাইরে থেকে কিনে আনছি।’ আট তলার ৮০১ নম্বর ওয়ার্ডের তিন নম্বর বেডের উপর ফ্যান নেই। নিজ উদ্যোগে ছোট টেবিল ফ্যান কিনে আনলেও বাতাস শরীরে লাগছে না বলে জানায় রোগী জাহিদ (২৮)। তার বাবা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রচÐ গরমে ঘামে ছেলেটার বিছানা ভিজে যাচ্ছে। জ্বর চলে আসছে। হাতপাখা দিয়ে বাতাস দিচ্ছি। তবু তার যন্ত্রণা কমানো যাচ্ছে না।’ একই ওয়ার্ডে ১৩ নম্বর শয্যায় মারাত্মক পোড়া নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন আব্দুল্লাহ আল-মামুন নামে বামনা থেকে আসা রোগী। তার পাশে বসে স্ত্রী নোমানা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছিলেন। তাতেও এতটুকু অস্থিরতা কমছিল না মামুনের। তার স্ত্রী বলেন, এখানের চিকিৎসার মান অনেক উন্নত। তবে এই গরমের কারণে এমন তার (মামুন) অবস্থা খুবই খারাপ। হাসপাতাল থেকে গরমের জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের ১১ তলায় ১১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছে পাঁচ বছর বয়সী মাইমুনা জাহান নূর। তার জামায় আগুন লেগে শরীরের একাংশ পুড়ে যায়। শিশুটির মা রহিমা বলেন, ‘নিয়মিত ড্রেসিং করতে যতটা না কষ্ট হচ্ছে তার চেয়ে গত কয়েকদিন কষ্ট হচ্ছে প্রচÐ গরমের কারণে। গরমের কারণে মেয়ের ঘনঘন বমি হচ্ছে। পোড়া ক্ষতের যন্ত্রণায় দিনভর চিৎকার করে কান্না করে।’ একই ওয়ার্ডে ১১ নম্বর শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছে গরম তেলে পোড়া রোগী হামজা। তার নানা জামান বলেন, এই গরমে আমরা সাধারণ মানুষই থাকতে পারছি না। আর সেখানে পোড়া রোগীরা কীভাবে এই যন্ত্রণা সহ্য করছে!
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল বলেন, পোড়া রোগীদের শরীর থেকে এমনিতেই ফ্লুইড বের হয়ে যায়। অক্সিজেনের ঘাটতি এবং শরীরের ব্যথার কারণে জ্বর আসে। গত কয়েকদিনের গরমে তাদের শরীর থেকে নির্গত ফ্লুইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাছাড়া গরমে ঘাম বেশি হওয়ায় শরীরেও চুলকানি হচ্ছে। স্যালাইন দিয়ে পোড়া রোগীদের ফ্লুইডের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।