তৃনমূলের দূরত্ব কমাতে চায় আ’লীগ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র-নৌকা প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে বেড়েছে দূরত্ব ও দ্ব›দ্ব। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ছোট ছোট ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে এই দূরত্ব ও দ্ব›দ্ব কমাতে ইদ্যোগ নিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে দলটি বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র রমজান মাসে বড় পরিসরে ইফতার মাহফিল না করতে নিরুৎসাহী করেছেন। তাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবার ১০-১৫ হাজার লোক নিয়ে বড় ধরনের কোনো ইফতার মাহফিল করা হবে না। দলীয়ভাবে ছোট আকারে ইফতার মাহফিল হতে পারে। এ ছাড়া দলের তৃণমূল পর্যায়েও বড় ধরনের কোনো ইফতার মাহফিল না করতে দলীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর যারা করেছে, সেটি হয়েছে ছোট আকারে। একই সঙ্গে জেলার যেসব এলাকায় দল, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন হয়নি বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সেখানে সম্মেলন প্রস্তুতিমূলক সভার মধ্য দিয়ে ছোট আকারে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে নেতা কর্মীদের মাঝে দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব ও নেতায় নেতায় দূরত্ব বেড়েছে। তাই রমজান মাসে জেলার দলের সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা সবাই একসঙ্গে দলের মধ্যে যে দূরত্ব ও দ্ব›দ্ব রয়েছে, সেগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় ধরনের ইফতার মাহফিল করতে নিরুৎসাহী করেছেন। এবার ইফতার মাহফিলের নামে দলীয় কোনো নেতা বা সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেউ চাঁদাবাজি করলে সেক্ষেত্রে দল ব্যবস্থা নেবে। কারণ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা চাঁদাবাজদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স। তাই চাঁদাবাজি করে কেউ পার পাবেন না। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বড় ধরনের কোনো ইফতার মাহফিল না করে সেই টাকা গরিব-দুঃখীকে দেওয়া। এটি কিন্তু দলীয় কার্যক্রমেরও একটি অংশ। কারণ রাজনীতি মানেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ হাই বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী আসন্ন রমজানে বড় ধরনের ইফতার মাহফিল আয়োজনে নিরুৎসাহী করেছেন। ফলে এবার দলীয়ভাবে বড় কোনো ইফতার মাহফিল হচ্ছে না। তবে ছোট আকারে হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা একসঙ্গে বসে ইফতার করেছে। আর আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়েও দলীয়ভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে কোথাও বড় ধরনের কোনো ইফতার মাহফিল না করা হয়। তবে দলের তৃণমূলে অনেক জায়গায় সম্মেলন হয়নি। তাই ছোট ছোট ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে সম্মেলন প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। তারা যাতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে রমজান-পরবর্তী ঈদুল ফিতরের পর সম্মেলন করতে পারেন। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়েছে। এ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তাই সরবরাহের চেয়ে যাতে চাহিদা বেশি না হয়, সে কারণেই মূলত রমজানে বড় ধরনের ইফতার মাহফিল না করতে নিরুৎসাহী করেছেন দলীয় সভাপতি। আর কারও বিরুদ্ধে যদি ইফতার মাহফিলের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে, দল ব্যবস্থা নেবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, যদিও ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হয়। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিরুৎসাহী করেছেন, তাই না করাই শ্রেয়। ইফতার পার্টিতে যে টাকা খরচ হয়, সেগুলো গরিব মানুষের মধ্যে দান করলে তারা উপকৃত হবে। তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়েও ইফতার পার্টি না করতে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। তারপরও হয়তো কেউ কেউ স্বল্পপরিসরে করা হয়েছে। কিন্তু ইফতার পার্টির নামে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী বলেন, দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী আসন্ন রামজানে বড় ধরনের ইফতার মাহফিল আয়োজনে নিরুৎসাহী করেছেন। ফলে এবার তেমন কোনো বড় ধরনের ইফতার মাহফিল হয়নি তবে কেউ কেউ স্বল্পপরিসরে করতে পারেন। রমজান মাস সিয়াম সাধনার মাস। তাই ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে সবার মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণভাব হওয়ার কথা। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা-স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে যে দূরত্ব ও দ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে, সেটি নির্মূল করা খুব কঠিন। তারপরও যতটুকু সম্ভব করা হবে। তবে সবার উচিত নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ইফতার মাহফিল পালন না করে গরিব মানুষের মধ্যে সেই অর্থ বিলিয়ে দেওয়া। তারপরও যদি কেউ ইফতার মাহফিলের নামে চাঁদাবাজি করে দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।