উল্টো পথে হাটছে ফতুল্লা আ’লীগ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দ্বাদশ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও টনক নড়েনি ফতুল্লায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশব্যাপি দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে কেন্দ্র। ঠিক এর উল্টো পথে হাটছে ফতুল্লা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদীন দল ক্ষমতায় থাকায় এর মোহে পড়ে গেছে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। মাঠের কর্মীদের নিয়ে ভাবার চিন্তা তাদের নেই! ফতুল্লার নেতৃবৃন্দ দলের প্রভাব বিস্তারকে কাজে লাগিয়ে আখেঁর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করার মাধ্যমে কিভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া যায় এমনটা ভেবেই সময় পার করছেন। অপরদিকে, দীর্ঘদীন ধরে ফতুল্লার বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামীলীগের মেয়াদর্ত্তীন কমিটি গুলোর মাধ্যমে দল পরিচালিত হলেও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে তাদের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফতুল্লার সিনিয়র নেতৃবৃন্দের অবহেলায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে ব্যঘাত ঘটার পাশাপাশি ত্যাগী নেতারা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন বলেও বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানান। সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়। থানা কমিটি পূনাঙ্গ হওয়ার পর পরই ফতুল্লার ৫টি ইউনিয়নের কমিটি ঢেলে সাজানোর কথা ছিল। কিন্তু থানা পর্যায়ের পূনাঙ্গ কমিটি গঠনের দীর্ঘদীন অতিবাহিত হলেও নজর নেই ইউনিয়ন কমিটি গঠনে। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সবকটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। অনেক ইউনিয়নে কমিটি সর্বশেষ কবে হয়েছে তাও ভুলতে বসেছেন খোদ ওই কমিটির নেতারা। কবে নাগাদ কমিটি হবে তাও জানেন না নেতারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই-একজন প্রভাবশালী নেতার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবেই নতুন কমিটি হচ্ছে না কর্মীদের অভিযোগ। তিন বছরের জন্য গঠিত কমিটি সাড়ে ১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। দলের অনেক নেতা-কর্মী এতে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এদিকে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি দল ক্ষমতায় থাকা সত্বেও কমিটি না হওয়ার পেছনে সিনিয়র নেতাদের ব্যর্থ বলে মনে করেন নেতা কর্মীরা। দলের মুল শক্তি হচ্ছে তৃণমুল পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। রাজনীতিবিদদের মতে দলের গোড়া যদি শক্তিশালি না হয় তাহলে দল এভাবে বেশিদিন টিকতে পারবে না। সময়ের পরিক্রমায় দল কর্মীহিন হয়ে পরবে। ফতুল্লার কয়েকজন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতার সাথে কথা বলে জানায় সর্বশেষ ১৮ থেকে ২০ বছর আগে কমিটি হয়েছে। যার মেয়াদ ১৫ থেকে ১৭ বছর আগে শেষ হয়ে রয়েছে। এখনো পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এতে নেতা-কর্মীরা নিষ্কিয় হয়ে পড়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা-উপজেলা এবং থানা ও ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ তিন বছর। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে দলের কাউন্সিলররা তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। ফতুল্লার সবকটি ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় দেড় যুগের বেশি হয়ে গেছে। পুরোনো কমিটি দিয়ে ঢিমেতালে চলছে দলের কার্যক্রম। ফতুল্লার থানা কমিটি সক্রিয় হলেও বক্তাবলী, কাশিপুর, এনায়েত নগর, ফতুল্লা, কুতুবপুরসহ ৫ ইউনিয়নে দলীয় কার্যক্রম সক্রিয় নেই। ফলে গতিহীন হয়ে পড়ছে তৃণমূল, উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্ব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন সদস্য বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। ওই কমিটি দিয়ে যেনতেনভাবে চলছে দলের কার্যক্রম। দলের কাজে গতি নেই। বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যে গা-ছাড়া ভাব। জাতীয় দিবস ও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন, দু-চারটি আলোচনা সভার মধ্যেই দলের সাংগঠনিক তৎপরতা আটকে আছে। এভাবে চলতে থাকলে দলের বারোটা বেজে যাবে। কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের কমিটি ২০ বছর আগে হয়েছিল। কমিটির অনেক নেতা ইন্তেকাল করেছেন। করোনার কারনে কমিটি হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কমিটি হয়ে যাবে। বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আঠার বছর আগে এই ইউনিয়নের কমিটি হয়েছে। এখন অনেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে। যার যার ইচ্ছে মত দলের কার্যক্রম চালান। কবে কমিটি হবে এখনো নির্দেশনা পাই নাই। ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, থানা কমিটি হওয়ার পরে আমরা ইউনিয়ন কমিটি গুলো করার প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু করোনার কারনে সবকিছু স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কমিটি হয়ে যাবে।