নাসিকের দেওভোগ চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে নাগবাড়ী পর্যন্ত সড়কে খানা-খন্দকের কারণে জনভোগান্তি চরমে
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
ছবি দেখে মনে হতে পারে এটি কোনো অজপাড়াগায়ের রাস্তার চিত্র, কিন্তু না এটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কের চেয়ারম্যান বাড়ির মোড় হতে নাগবাড়ী পর্যন্ত সড়কের অবস্থা। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কিছু এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন অবহেলা ও অযতেœর স্বীকার ১৪ ও ১৬নং ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এই আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কটি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে সড়কটির চেয়ারম্যান বাড়ির মোড় থেকে নাগবাড়ী পর্যন্ত চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটিতে অসংখ্য খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়ার কারণে এ ভাঙ্গাচোরা সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে, মাঝে মাঝেই বিকল হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। জানা যায়, আলী আহাম্মদ চুনকা সড়কের ২নং রেল গেট থেকে চেয়ারম্যান বাড়ির মোড় পর্যন্ত অংশে সড়ক বেশ ভালো আছে। এরপর থেকেই বিড়ম্বনার শুরু। চেয়ারম্যান বাড়ির মোড় থেকে নাগবাড়ী মোড় তথা ১৪ ও ১৬নং ওয়ার্ডের সীমানা প্রাচীরের শেষ দিক পর্যন্ত সড়কে অসংখ্য জায়গায় ভাঙ্গাচোরা আছে। সড়কটির সবচেয়ে বেশী খারাপ অবস্থা নাসিকের নব-নির্মিত ভবনগুলোর সামনে থেকে পানির টাংকি মোড় পর্যন্ত। সড়কের শুধু এতটুকু অংশেই কমপক্ষে ৫০-৬০টি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এবং অযতœ অবহেলায় সড়কটির এই অবস্থা দাবি স্থানীয়দের। আরও জানা যায়, এ গর্তগুলোর অধিকাংশই সৃষ্টি করেছেন আশেপাশের বাড়িওয়ালা। তাদের নিজ নিজ বাড়িতে গ্যাস, পানির লাইন নিতে গিয়ে সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থানে কেটে ফেলে কাজ করেন তারা। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর তারা সেই রাস্তার কথা ভুলে যান এবং নূন্যতমভাবে সেই রাস্তাটি আর পুনরায় মেরামত করা হয় না। ফলে কেটে ফেলা প্রতিটি অংশে বেশ কয়েকটি বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সড়কদিয়ে চলতে গেলে মানুষের ভাঙ্গে কোমর, দোলে যানবাহন। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেন, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কেটে বাড়িওয়ালাদের বাড়িতে পানি ও গ্যাসে লাইন নেয়ার পর তা মেরামত না করার কারণে এবং দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার কারণে মানুষ ও যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেয়রের সাথে যোগাযোগ করলে উনারা সংস্কার করে দিবে বললেও এই পর্যন্ত কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে তাদের চোখে দৃশ্যমান হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে এ সড়কে হেলে দুলে যান চলাচল করতে দেখা যায়। এতে রিকশাচালক ও যাত্রীরা যন্ত্রণার মধ্যে পড়ে যান। এ নিয়ে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে যাত্রী ও চালকরা। বৃষ্টির পানির কারণে গর্তের আকার বোঝা যায় না বলে অনেক ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পড়তে হয় জনসাধারণের। কখনো কখনো যান বিকল হয়ে যাওয়ার কথাও জানান চালকরা। রিকশা চালক মুনছুর আলী বলেন, পানির টাংকি এলাকার এ অংশে সড়ক ভালো অবস্থায় নেই। সড়কটি যান চলাচলের অনুপোযোগী। এ সড়কে রিকশা চালাতে গিয়ে রিকশার যন্ত্রপাতি দ্রæত নষ্ট হয়ে যায় বলে জানান তিনি। ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা চালক নয়ন বলেন, ২ নম্বর রেল গেট থেকে দেওভোগ মাদ্রাসা পর্যন্ত গাড়ী চালাই আমরা। তবে সড়কের এ স্থানটিতে আসলে শরীরের ১২টা বেজে যায়। আমরা তো অনেক কষ্টে টেনেটুনে গাড়ি নিয়ে পাড় হতে পারি, তবে পায়ে চালানো রিকশা গুলো মাঝে মাঝেই এসব গর্ত থেকে রিকশা উঠানো সম্ভব হয় না। চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও বিকেএমইএ এর পরিচালক কবির হোসেন বলেন, প্রায় ৬-৭ বছর যাবৎ এই রাস্তাটি ভাঙ্গা অবস্থায় আছে। সামনে একটি মসজিদ, বৃষ্টির সময় এখানে অনেক পানি জমে থাকে। এই পানি মারিয়ে নামাজ পড়তে গেলে অযু থাকবে কিনা তাও আমরা জানি না। ভাঙ্গা রাস্তার কারণে রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন এখানে আসতে চায় না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙ্গা, সবার চোখেই পড়ে, কিন্তু এই এলাকারই বাসিন্দা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চোখে পড়ে কিনা তা আমরা জানি না। যেহেতু উনার এলাকা, তাই সবার আগে উচিত এই রাস্তাটা মেরামত করা। কিন্তু উনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে কিনা তা আমরা জানি না। কেন উনি এই রাস্তাটা ঠিক করে দিচ্ছেন না তা আমাদের বোধগম্য নয়। অসুস্থ্য রোগী এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলে আরও বেশী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান বলেন, এই রাস্তাটি সংস্কার কাজ শুরুর জন্য সকল কাগজপত্র রেডি আছে, মেয়র দেশের বাইরে আছেন, উনি আসলেই কাজ শুরু হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিয়াদ হাসান বলেন, মেয়র দেশের বাইরে আছেন, উনি আসলে হয়তো কাজটা শুরু হতে পারে। তাছাড়া, সিটি কর্পোরেশনের বাজেটেরও ঘাটতি আছে, যা আমি-আপনারা সবাই হয়তো জানেন। বাজেট না হলে কাজটা কিভাবে হবে? গত দুই বছরে আমাদের কোনো কাজই হয় নাই। তবে, পুরো ১৬নং ওয়ার্ডের রাস্তা কার্পেটিং হবে বলেও জানান তিনি।