রশিদের সাথে আ’লীগেরও হার!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বন্দর উপজেলা নির্বাচনে বিপুল ভোটে এম এ রশিদ হেরে যাওয়ার সাথে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগও হেরে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বন্দরের একাধিক মানুষ। এ হার থেকে তাদের বিগত দিনের কর্মকান্ডে খেসারত বলে মনে করেন বিভিন্ন মহল। এম এ রশিদ যখন থেকে বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েছেন তখন থেকেই দুবর্ল হতে শুরু করে বন্দরের আওয়ামীলীগ। বিগত ইউপি নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনেও যার প্রভাব দেখা গেছে। আর এবার শেষ পেরেক ঠুকে দিলেন এম এ রশিদ। এম এ রশিদ জানেন তিনি বিগত কয়েকটি নির্বাচনে গণরায়ে হেরেছেন। একবার শুধুওসমান পরিবারের দয়ায় উপজেলার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তাও মানুষকে গণরায় দেয়া থেকে বঞ্চিত করে। বিনা ভোটে। তিনি কখনো ভোটে নির্বাচিত হতে পারেনি। তাই এবার তাকে নির্বাচনে অংশ নেয়াটা ছিল বোকামি। অনেকে বলছেন অতি লোভে এম এ রশিদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বন্দর আওয়ামীলীগের সুনাম একেবারেই ডুবিয়ে দিলেন। এখন তাকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কার করার দাবি উঠতে শুরু করেছে। তিনি আওয়ামীলীগের যোগ্য নন। তাই আওয়ামীলীগকে রক্ষা করতে হলে তাকে আওয়ামীলীগ থেকে বের করাটাই উত্তম। বন্দর উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে মাকসুদ হোসেন যখন পদত্যাগ করেছিলেন তার প্রস্তুতি সম্পর্কে ঠাওর করতে পারেননি নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই এমপি সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান। ওই সময়েই ফলাও করে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদ ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সানাউল্লাহ সানুকে সমর্থন দিয়ে তাদের আবারো জয়ী করার ঘোষণা দিয়েছিলন এমপি সেলিম ওসমান। পরবর্তীতে শামীম ওসমানও বড় ভাই সেলিম ওসমানের পক্ষ নেন। এবং তাদের নেতাকর্মীদের রশীদ ও সানুর জন্য কাজ করার নির্দেশ দেন। দফায় দফায় বন্দরের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সাথে বৈঠক করেন। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেলো। প্রশাসনের শক্ত ভূমিকার কারণে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে মুছাপুরের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের কাছে হেরে গেলেন তারা। শুধু তাই নয়, তাদের সমর্থন পাওয়া আরেক প্রার্থী সানাউল্লাহ সানুও জয়ের দেখা মুখ দেখাতে পারেননি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করার হুমকির পরও জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন আনারস প্রতীকে ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট পেয়ে বীরদর্পে নির্বাচিত হন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রশিদ গতবার বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচন হন। এছাড়া, দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) চিংড়ি প্রতীকের প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুল ১২ হাজার ৬২২ ভোট এবং মাকসুদের ছেলে হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মাহমুুুুদুল হাসান ২৫৫ ভোট পেয়েছেন। অথচ নির্বাচন করা নিয়ে মাকসুদ চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে পারিবারিক মামলা হয়েছে। সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান বিভিন্ন সভায় প্রকাশ্যে-আকার ইঙ্গিতে নানাভাবে শাসিয়েছেন। নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। এমনকি নির্বাচনে দুই দফা নোটিশের জবাব দিয়েছেন মাকসুদ হোসেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে ওসমানদের মুখের হাসি ¤øান করে মাকসুদই বন্দর উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। গত তিনমাস আগে থেকেই উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গোছানোর কাজে নেমে পড়েন মাকসুদ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। বিভিন্ন এলাকার ভোটব্যাঙ্ক টার্গেট করেছেন। আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় পার্টির লোকদের সাথে বসেছেন। এমনকি সাবেক সাংসদ এসএম আকরামের দোয়াও নিয়েছেন। কোন ধরনের হুমকি ধমকি আর বাধাবিপত্তি কোনটিকেই মাথায় নেননি। গত বুধবার ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের শক্ত ভূমিকায় ভোটচুরি, কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ করার সুযোগ কেউ পায়নি। যার ফলে মাকসুদ হোসেনের গত তিনমাসের কর্মকাÐ সফল হয়েছে। জয়লাভের পর নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মাকসুদ হোসেন বলেন, ‘সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। তিনটি মাস আপনারা কাজ করে এই বিজয় অর্জন করেছেন। এ বিজয় আমার নয় এটা পুরো উপজেলাবাসীর। আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন। কারণ, নির্বাচনের কিছু আচরণবিধি আছে। আর আপনারা যদি আমাকে ভালোবাসেন এগুলো মেনে চলবেন।’ প্রথম ধাপের বন্দর উপজেলা নির্বাচন এককথায় বন্দর আওয়ামীলীগের জন্য বড় ধাক্কা।