সেই রিপনের নিয়ন্ত্রণে চাষাঢ়া সিএনজি স্ট্যান্ড

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
রিপন সরদার। বাড়ী শরিয়তপুর জেলার এক অজোপাড়া গ্রামে। অভাবের তাড়নায় আসেন নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জে এসে প্রথমে ধনীদের গাড়ী ধোয়া-মুছার কাজ শুরু করতেন রিপন। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোমিন উল্লাহ্ ডেভিডের অন্যতম সহযোগী মাহমুদের সহযোগীতায় ডেভিডের সাথে পরিচয় হয় রিপনের। এরপর আর রিপনকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চাষাঢ়া টেক্সিট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলার দায়িত্ব দেয়া হয় রিপনকে। এরই মাঝে পেয়ে যান চাষাঢ়া শহীদ মিনার সংলগ্ন পৌর টয়লেটের দায়িত্ব। সেই থেকে রিপন সরদার টয়লেট রিপন নামে পরিচিত লাভ করেন। ২০০৯ সালে চাষাঢ়ার বেবি স্ট্যান্ড (বর্তমানে সিএনজি স্ট্যান্ড) দখল করার পর প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের গড়া নারায়ণগঞ্জ অটোরিকশা চালক ইউনিয়ন (রেজি:নং ঢাকা-৩৫৬১)’র সভাপতি পরিচয়ে শুরু করেন ব্যাপক চাঁদাবাজি। তার চাঁদাবাজির কারণে বেবি স্ট্যান্ডের চালকরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন। সিএনজি প্রতি ৩০ টাকার চাঁদা তিনি ৮০টাকা করে নিতেন। শুধু তাই নয়, সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানে চাঁদা ছাড়াও সিএনজি প্রতি ২০০-৩০০টাকা করে আদায় করতো রিপন। আর তার এ চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে তিনি মিছিল নিয়ে যোগদান করতেন। পরবর্তীতে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ডের পর এর বিচারের দাবিতে স্বার্থের জন্য ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধেও মাঠে নেমেছিলেন এ রিপন। কিন্তু পরবর্তিতে কৌশলে খোলস পাল্টে আবারও ঢুকে যান ওসমান পরিবারের বলয়ে। প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর পুত্র আজমেরী ওসমানের অনুকম্পা পেতে তার পক্ষেও নামে টয়লেট রিপন। নাসিম ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে চালক-মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদাবাজী করে খুব ঘটা করে এ দিবসটি পালন করে রিপন। আর এসব করার কারণে ধীরে ধীরে আজমেরী ওসমানের অনুকম্পা পেতে শুরু করে রিপন ওরফে টয়লেট রিপন। আজমেরী ওসমানের অনুকম্পা পেয়ে রিপন অনেকটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চাষাঢ়া অটো রিকশা চালক ইউনিয়নের অস্থায়ী কার্যালয়ে প্রতিদিন মাদক ও জুয়ার আখড়া বসাতো রিপন। আর এ আখড়ায় চাষাঢ়ার যতসব বখাটে, ছিনতাইকারি ও মাদকসেবীরা আড্ডায় মেতে ওঠতো। রিপনের এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে যেতো সিএনজি চালক-মালিক ও আশেপাশের মানুষগুলো। পরে ধীরে ধীরে এসব কথা আজমেরী ওসমানসহ প্রশাসনের নলেজে পর্যন্ত পৌছে যায়। এক সময়ে প্রশাসন ও নানা চাপে নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে বাধ্য হন টয়লেট রিপন। এভাবে চলে যায় প্রায় ৫টি বছর। দীর্ঘ পাঁচ বছর পরও গত (এপ্রিল) মাসে চাষাঢ়ায় আবারও দেখা মিলে রিপন ওরফে টয়লেন রিপনের। কোন এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় রিপন আবারও নারায়ণগঞ্জে পাঁ রেখেছেন বলে দাবি করেছেন অনেক সিএনজি মালিকরা। তারা বলেন, গ্রীণ সিগনাল না পেলে রিপন কোন দিনই নারায়ণগঞ্জ শহরে পাঁ রাখার সাহস পেতো না। রিপন অবশ্যই কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায়ই নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করেছে। তবে রিপন যদি আবারও আগের মত সিএনজি থেকে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করে তাহলে, এবার আর তার পরিনাম ভালো হবেনা। রিপন এবার আর পালিয়ে যেতে পারবেনা। নারায়ণগঞ্জেই তাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়া হবে। এদিকে রিপন নারায়ণগঞ্জে এসেই নাসিম ওসমানের কবর জিয়ারত ও তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে। এবং এসব অনুষ্ঠানের ফাঁকে কৌশলে চাষাঢ়ার সিএনজি স্ট্যান্ড দখল করে নেয়। বর্তমানে তার নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে এ স্ট্যান্ডটি। এ স্ট্যান্ডে প্রায় দেড়শতাধীক সিএনজি থেকে দৈনিক ৩০-৫০ হারে চাঁদা আদায় করছে রিপন। রিপনের চাঁদাবাজি বন্ধে জেলা পুলিশ প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে চাষাঢ়া সিএনজি মালিক ও চালকবৃন্দরা।