আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ১২:১৩

সাবেক এমপি গিয়াস কারাগারে গেলেও যুবলীগ নেতা মতি বহাল তবিয়তে

ডান্ডিবার্তা | ১৪ মে, ২০২৪ | ২:৪৭ অপরাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) দায়ের করা মামলায় ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন কারাগারে গেলেও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ও নাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি বাহিরে থাকায় সিদ্ধিরগঞ্জ জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দু’জনেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের মামলার আসামি। তাহলে যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি কি আইনের উর্ধে? বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে যদি আদালত কারাগারে পাঠাতে পারে তাহলে মতি কেনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই প্রশ্ন জনমনে। সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদকের) মামলায় জামিন নিতে আদালতে আত্ম সমর্পণের পর জামিন মঞ্জুর না হওয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো: গিয়াসউদ্দিনকে। গত রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন। পরে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন শাখার সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আজ তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ নভেম্বর গিয়াস উদ্দিনকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়। পরে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন তিনি। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র ও দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই করে গিয়াস উদ্দিনের নামে ১৫ কোটি সাত লাখ ১৫ হাজার ৭৭৯ টাকার স্থাবর এবং পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। ২০০৮-২০০৯ করবর্ষ থেকে ২০২১-২০২২ করবর্ষে পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে গিয়াস উদ্দিনের ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ টাকা ব্যয়ের তথ্য পায় দুদক। এসব ব্যয়ের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে সঞ্চয় হিসাবে ছয় কোটি ৮১ লাখ ২২ হাজার ৮৫৬ টাকা, গৃহ সম্পত্তি থেকে আয়ের দুই কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ টাকা, পিতার কাছ থেকে হেবা মূল্যে প্রাপ্ত ১১ শতাংশ জমিসহ সাত কোটি টাকার দালান, চার লাখ ৩২ হাজার টাকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ মোট ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩৭ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া যায়। তবে, গিয়াস উদ্দিনের আয়কর নথি অনুযায়ী, কাসসাফ শপিং সেন্টার-১ নির্মাণ ব্যয় প্রদর্শনকালে ২০২১-২০২২ করবর্ষে মার্কেটের ৮০২ বর্গমিটার নির্মাণে এক কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৩১ টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে বৈধ উৎস পায়নি দুদক। যা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়। এর আগে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর দুদক উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৩১ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও অনুমোদিত চার্জশিটে টাকার অংক কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি ছিলেন যুবলীগ নেতা ও নাসিক ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ও কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি সুমিলপাড়া এলাকার মৃত বাদশা রাজাকারের ছেলে। সূত্রে আরও জানা যায়, দুদকের মামলার পর পরবর্তী তারিখে আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত মতির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত বছরে আদালত মতির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির প্রায় তিন মাস পার হলেও প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরাফেরা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বিতর্কিত এই যুবলীগ নেতা মতি। সে সময় পরোয়ানার কাগজ নিয়েও স্থানীয় প্রশাসন লুকোচুরি খেলা খেলেন বেশ কিছুদিন। পরবর্তীতে তা প্রকাশ্যে এলে এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন মতি। বেশ কিছুদিন পলাতক থাকলেও আবারও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছেন তৎকালীন সময়ে একটি অনুষ্ঠানের নৈশ ভোজে। সেই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের পাশে বসে একই টেবিলে খাবার খেতেও দেখা যায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিকে। তবে আড়ালে থেকেও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে সশরীরে অংশ নিয়েছেন যুবলীগের এই নেতা। গত শুক্রবারও তিনি একটি পরিবহনের মালিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। সব সেক্টর থেকেই তাকে চাঁদা দিতে হয় বলে সূত্রে জানা যায়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে দিশেহারা হয়ে পরেন এই রাজাকার পুত্র কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি। উপায় না পেয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত শুনানি শেষে জামিন না মঞ্জুর করে মতিকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। যদিও কিছুদিন জেল খেটে জামিনে এসেছেন মতিউর রহমান মতি। এলাকাবাসী বলছেন জামিনে এসেই তিনি সাধারণ মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছেন। পরবর্তী তারিখে আদালত যেনো তার জামিন না মঞ্জুর করেন সেই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তাকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে দুদকের মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনি অচিরেই জামিনে মুক্ত পেয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের জ্যৈষ্ঠ দু’জন নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আমাদের দল আজ প্রায় ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায়। এতোগুলো বছর দল ক্ষমতায় থেকেও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। আর মতিউর রহমান মতি দলের প্রভাব বিস্তার করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দূর্নীতি ছাড়া এতো টাকার মালিক হওয়া কোন নেতার পক্ষেই সম্ভব না। দলের নাম বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন তিনি। শুনেছি তার পিতা বাদশা মিয়া ছিলেন শান্তি কমিটিতে। দুদকের মামলার পর থেকে সে (মতি) আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাউকে সম্মান করে না। দিনদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান (মতি) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আসামি কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে তার থেকে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অবস্থান গোপন করার অভিযোগ আনা হয়।অপর মামলার এজাহারে বলা হয়, কাউন্সিলর মতির স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা করেন। এর পর সেখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৮ টাকা উত্তোলন করে তা রূপান্তর, হস্তান্তর ও স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা