আজ সোমবার | ১১ আগস্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ১৬ সফর ১৪৪৭ | দুপুর ১:১২

সেই জল্লাদ শাহজাহান না ফেরার দেশে

ডান্ডিবার্তা | ২৫ জুন, ২০২৪ | ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দেশের আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত রোববার রাতে তার বুকে ব্যথা শুরু হলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করে আলোচনায় আসে ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়ার নাম। গত বছর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন জীবন শুরু করেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে। একটি চায়ের দোকান দেন। বিয়ে করেন ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সে সংসার। এরপর থেকে ভুগছিলেন একাকিত্বে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাড়া ছিলেন ব্যাচেলর হিসেবে ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে থাকতেন। সংসার ভেঙে যাওয়ার পর শাহজাহান বলেছিলেন, ‘বড় আশা করে সংসার পেতেছিলাম। কিন্তু স্ত্রী ও তার স্বজনরা আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। বিয়ের দেড় মাস পর আমার কাছ থেকে ধার নেওয়া ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ পালিয়ে যায়।’গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সাথী আক্তার নামের ওই তরুণীকে বিয়ে করেন শাহজাহান। কিন্তু ৫৩ দিনের মাথায় তার ঘর ছেড়ে যান সাথী। আদালতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলাও দেন। এরপর ওই তরুণী এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতারণার একটি মামলা করেন শাহজাহান।
যেভাবে সাথীর সঙ্গে শাহজাহানের পরিচয়
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৮ জুন কারামুক্তির পর শাহজাহান ভূঁইয়া ঢাকার কেরানীগঞ্জের গোলামবাজারে বসবাস শুরু করেন। এরপর সেখানে একটি চায়ের দোকান দেন। একদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কেরানীগঞ্জের কদমতলী থেকে কোনাখালায় যাচ্ছিলেন। গাড়ির ভেতর তিনি একটি ভ্যানিটি ব্যাগ পান। পরে ব্যাগের ভেতর থাকা কাগজে লেখা ছিল একটি মোবাইল নম্বর। সেই নম্বরে ফোন করে শাহজাহান ভ্যানিটি ব্যাগের মালিককে ব্যাগ নিয়ে যেতে বলেন। পরে ব্যাগের মালিক ২৩ বছরের সাথী নামে এক তরুণী তার বান্ধবীকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের গোলামবাজারে হাজির হন। পরে তরুণীর মা শাহিনূর বেগমের সঙ্গে শাহজাহানের পরিচয় হয়।
৫ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে
শাহজাহানের দাবি, মোবাইলের পরিচয়ের পর তরুণীর সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকবার কথা বলেন। একপর্যায়ে তরুণী ও তার মা জুরাইন থেকে কেরানীগঞ্জের গোলামবাজারে চলে আসেন। শাহজাহান ভূঁইয়ার বাসায় রান্নার কাজ নেন তিনি। পরিচয়ের দেড় মাস পর ২১ ডিসেম্বর সাথীর সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে শাহজাহানের বিয়ে হয়।
শাহজাহানের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা
বিয়ের দুই মাসের মাথায় গত ১৫ ফেব্রæয়ারি স্ত্রী সাথী স্বামী শাহজাহানের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে নালিশি মামলা করেন। মামলায় দাবি করেন, বিয়ের উপঢৌকন হিসেবে শাহজাহানকে এক লাখ টাকার মালামাল দেয় তার পরিবার। পাশাপাশি নগদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বিয়ের কয়েক দিন পর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন শাহজাহান ভূঁইয়া। একই সঙ্গে শাহজাহান তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। সাথীর সঙ্গে শাহজাহানের করা অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ রয়েছে, সাথী ১০ লাখ টাকা শাহজাহানের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন। বিয়ে বলবৎ রাখতে অপারগ হলে তিনি ১০ লাখ টাকা শাহজাহানকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। বিয়ের চার মাসের মাথায় শাহজাহান স্ত্রী সাথীর নামে ২ শতাংশ জমি হেবা (দান) করবেন। স্ত্রী হিসেবে স্বামী শাহজাহানের আদেশ মেনে চলবেন। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সম্পর্ক উন্নয়নসহ সব ধরনের কাজ করতে বাধ্য থাকবেন। অঙ্গীকারনামায় সাথী ও শাহজাহানের স্বাক্ষর রয়েছে।
যা বললেন শাহজাহানের বোন
জল্লাদ শাহজাহানের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে বোন ফিরোজা বেগম জানান, তার ভাই কারাগার থেকে বেরিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ গত বছরের শেষের দিকে একজন অল্পবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করার পর থেকে শাহজাহানের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শাহজাহান অনেক চিন্তা করতো। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতো না। মেয়েটি ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আরও ভেঙে পড়ে শাহজাহান।
যাদের ফাঁসি কার্যকর করেন
কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ ও অন্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন। শাহজাহানের হাতে কোনো টাকা-পয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তার দÐ হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দেয়। কারাগারের নথি অনুযায়ী, কারাবন্দি থাকাকালে শাহজাহান ভূঁইয়া ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও জেএমবির দুই জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করেন তিনি। গত বছর মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান ভূঁইয়া বলেছিলেন, তার থাকার কোনো জায়গা নেই। বাড়িঘর কিছুই নেই। তাই সরকারের কাছে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাই। তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেছিলেন, প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর প্রথম ফাঁসি দেন আলোচিত একটি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে। একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন কারাদÐ মওকুফ হয়। শাহজাহান ভূঁইয়ার জন্ম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। হত্যা ও অস্ত্র মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়। ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়। কারাগারের নথি অনুসারে, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদÐ হয় তার।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা