
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ যেন খুনের নগরীতে পরিনত হচ্ছে। দিন দিন আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। খুনীরা প্রকাশ্যে খুন করছে। সেই সাথে হুমকি দিচ্ছে নিহতের পরিবারদের। বন্দরে, শহরে ফতুল্লায় খুনের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফতুল্লার বক্তবলীতে দীর্ঘদীন ধরেই স্থানীয় এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া এবং সালাউদ্দীনের মাঝে দ্বন্ধ চলে আসছিল। কাশীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার খোঁকার শেল্টারে সালাউদ্দিন এবং হীরা বাহিনী দিনের পর দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকার ইট, বালু, রড, সিমেন্ট এবং চাঁদাবাজিসহ মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে এ বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন অপকর্ম করার মাধ্যমে একক আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল এ সালাউদ্দীন এবং হীরা বাহিনী। অপরদিকে, এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ছিলেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া। একের পর এক অপকর্ম করার কারনে, সন্ত্রাসী হীরা এ সালাউদ্দীনের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী সুরুজ মিয়াকে অবহিত করেন। এক পর্যায়ে সুরুজ মিয়া এলাকার ভিতরে অপকর্ম না করার জন্য শাসিঁয়ে দেয় সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন এবং হীরাকে। এর জের ধরেই গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় মসজিদ থেকে নামাজ শেষে ফেরার পথে সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন এবং হীরাসহ একদল সন্ত্রাসী এলোপাতারীভাবে কুপিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়াকে কুপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহতবস্থায় সুরুজ মিয়াকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্ত্যবরত চিকিৎসক সুরুজ মিয়াকে মৃত্যু ঘোষনা করেন। এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, কাঁশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার খোঁকার প্রত্যক্ষ শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠে সন্ত্রাসী সালাউদ্দিন এবং হীরা বাহিনী। এমনকি সুরুজ মিয়া হত্যাকান্ডটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে বলেও এলাকাবাসী মনে করেন। আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া হত্যাকান্ডের বিষয়ে ইউপি সদস্য খোঁকাকে আইনের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ হত্যাকান্ড বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উন্মোচন হতে পারে বলেও এলাকাবাসীর ধারনা। তাই সুরুজ মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইউপি সদস্য খোঁকাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। প্রসঙ্গত, ফতুল্লার উত্তর কাশিপুরে ইট-বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ কে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে কাশিপুর আলীপাড়া এলাকায় মসজিদের সামনে আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া (৬৫) কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। নিহত সুরুজ মেম্বার ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতিও ছিলেন। নিহত সুরুজ মিয়ার ভাগিনা নুর হোসেন লিখন ও আহত জনির ভাতিজা রিয়াজ উদ্দিন জানান, তাদের বাড়ি ফতুল্লার উত্তর কাশিপুর আলীপাড়া গ্রামে। তাদের অটোরিকশার গ্যারেজ ও ইট-বালুর ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসা নিয়ে এলাকার সালাউদ্দিন সালু ও আলাউদ্দিন হিরার সঙ্গে তাদের বিরোধ ছিল। এ ছাড়া, সালু ও হিরা এলাকার একটি নির্মানাধীন ভবনে গিয়ে আজ সকালে চাঁদা দাবি করে। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন। এটি নিয়ে সুরুজ মিয়া হিরা ও সালুকে শাসন করেন। তারা আরও জানান, এর জের ধরে এলাকার মসজিদে যোহরের নামাজ পড়তে গেলে সুরুজ মিয়ার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সালু, হিরাসহ ২০-২৫ জনের একটি দল। তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুরুজ মিয়াকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে ছেলেসহ স্বজনরা এগিয়ে গেলে তাদেরকেও আঘাত করে ঘাতকরা। পরে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক সুরুজ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আযম মিয়া জানান,সংবাদ পেয়ে তিনি সহ পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। প্রাথমিক ভাবে জানা যায় যে, ইট-বালুর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ কে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। এমনকি এঘটনার সাথে যত বড় প্রভাবশালী ব্যাক্তিই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে অতিদ্রæত আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও শহরের মন্ডলপাড়ায় হোসিয়ারী শ্রমিক নাসির খুন। এছাড়াও ভয়ঙ্কর এক খুনের নগরী বন্দরের উত্তরাঞ্চল মুরাদপুর। একে একে একটি পরিবারের সবাইকে খুন করা হয়। পিতা-মাতা থেকে শুরু করে ভাই বোন সকলেই খুনের শিকার হয়েছে। এখন শুধু ২টি বোন বুকে শোকের বোঝাঁ নিয়ে বেঁচে আচেন। শুরুটা হয় ১৯ ৮৮ সালে। সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রথমে ১৯৮৮ সালে মা ফুলমতিকে কুপিয়ে হত্যা করে সে সময়ের আতঙ্ক সুরতআলী, রব ও নুরা বাহিনী। ১৯৯০ সালে এ সুরতআলী বাহিনী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা পিতা কামাল উদ্দিনকে ট্রাক চাকা দিয়ে হত্যা করে। উত্তল হয়ে উঠে বন্দরের উত্তরাঞ্চল। পরিনত হয় সন্ত্রাসের জনপদে। একে একে গড়ে উঠে ২টি বাহিনী। একটি সুরতআলী বাহিনী অপরটি পিতা-মাতার খুনের বদলা নিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে কামু বাহিনী। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মুরাদপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ। একে একে খুন হতে থাকে উভয় গ্রæপের সদস্যরা। এ যেন এক মৃত্যুপুরি। কামরুজ্জামান কামুও বিদ্যুৎ বিভাগে কাচুরি করতেন। কিন্তু পিতা-মাতা খুন হলে আর বসে থাকতে পারেনি। হয়ে উঠেন বেপরোয়া। ২০০৩ সালে কামরুজ্জামান কামুর ভাই প্রবাস ফেরত ঠিকাদার বাবুলকে সন্ত্রাসীরা গুলি করতে গেলে এসময় তার আরেক ভাই নুরা সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরে ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চায়। কিন্তু সন্ত্রাসীরা প্রথমে নূরাকে গুলি করে হত্যার পরই ভাই বাবুলকে গুলি করে হত্যা করে। তখন বিচলিত হয়ে উঠে প্রশাসন। কোন অবস্থাতেই দুই গ্রæপের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থামাতে পারছেনা। একই বছর খুন হন কামুর বোন নিলুফা। তাকে সুরতআলী বাহিনী কুপিয়ে হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। অবস্থা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। ভয়ে এলাকাবাসী মুরাদপুরে প্রবেশে ভয় পেতেন। আস্তে আস্তে হয়ে উঠে ভুতুরে নগরী। এ বছরই কামুর বড় বোন রেহেনা বেগমে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলা হয়। আজো তার লাশের সন্ধান মিলেনি। এ হত্যাকান্ডে সুরতআলী বাহিনীর টিটু, মিঠুরা অংশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে সুরতআলী বাহিনীর প্রধান সুরতআলী খুন হন কামুর বড় ভাই আবুলের হাতে। আর কামু থাকে জেলে। পরবর্তিতে ২০০৯ সালে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় কামুর ভাই আবুল। কিন্তু মদনপুন স্ট্যান্ডসহ মুরাদপুর ও আশপাশের এলাকা এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নগরীতে পরিনত হয়ে উঠে। ২০১২ সালে কামু বাহিনী প্রধান কামরুজ্জামান কামু স্ট্রোক করে মারা গেলে। পরিবেশটা কিছুটা শান্ত হতে থাকে। পিতা-মাতা ভাই-বোন সকলকে হারিয়ে বেঁচে যাওয়া একমাত্র ছোট ভাই মনিরুজ্জামান মনু নিজ এলাকা ছেড়ে কাপাশিয়া চলে যান। সেখাগে গিয়ে বিয়ে করে বসবাস করতে থাকেন। মাঝে মধ্যে নিজ বাড়িতে এলেও অবস্থান করেননি। ২০১২ সালের পর থেকে মুরাদপুর অনেকটা শান্ত ছিল। কিন্তু এ বছরের গত ৭ জুন খান হন সেই একমাত্র বেঁচে যাওয়া মনিরুজ্জামান মনু। এ খুমের মাধ্যমে একটি পরিবারের অস্তিত্ব মিটিয়ে দেয়া হয়। ফের উত্তাল হয়ে উঠে বন্দরের উত্তরাঞ্চল। গত ৬জুন মনু তার মামির জানাজায় অংশ নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার কুতুবপুরে আসেন। পরদিন ৭জুন নিজ বাড়িতে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে আসেন। কিন্তু বাড়িতে আসার এক ঘন্টার মধ্যে তাকে প্রকাশ্যে নৃশংস ভাবে খুন হতে হয়। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সাবিনা বেগম বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রæপের প্রধান মনির, মিঠু ও টিটু সহ ১৫ জনকে আসামি করে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে সন্ত্রাসীরা হত্যাকান্ড ঘটিয়ে আত্মগোপনে চলে গেলেও মুন পরিবারকে নানা ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে মনুর পরিবারের অভিযোগ। তারা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। অপরদিকে শহরের মন্ডলপাড়া এলাকায় নাসির (২৫) নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার রাতে মন্ডলপাড়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাসির জেলার সদর উপজেলার ফরাজিকান্দা আল আমিন নগর এলাকার বাবুল শেখের ছেলে। সে হোসিয়ারি শ্রমিকের কাজ করত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাৎ হোসেন। জানা গেছে, রাতে মাদকের কারবার নিয়ে দ্ব›েদ্ব তাকে বাড়ি থেকে সেখানে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। পরে দ্রæত তাকে সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে, নিহতের ভাই আল আমিন অভিযোগ করে বলেন, তাদের নিজস্ব হোসিয়ারী আছে। তার ভাই নাসির তার হোসিয়ারিতেই কাজ করতো। সন্ধ্যায় সে গেঞ্জি কেনার জন্য মন্ডলপাড়া এলাকায় আসে। এসময় আলম, শহীদ ডোমের ছেলে ম্যঙ্গোসহ কয়েকজন মিলে তার ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। এতে করে নিহতের পরিবার যেমন সাধারণ মানুষও আতঙ্কে রয়েছে। আর সাধারণ মানুষ জেলার আইন শৃঙ্খলার অবনতিকে দায়ি করছেন।
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯