আজ শুক্রবার | ৪ জুলাই ২০২৫ | ২০ আষাঢ় ১৪৩২ | ৮ মহর্‌রম ১৪৪৭ | রাত ১২:০৭

বিভাজন বিপজ্জনক রেখায়

ডান্ডিবার্তা | ০৩ জুলাই, ২০২৫ | ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

রাজু আলীম
বাংলাদেশের ইতিহাসে জুলাই মাস শুধু ক্যালেন্ডারের সাধারণ মাস হিসেবে আর নেই; সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইতিহাসে গভীর ছাপ ফেলেছে। গত বছর এই মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুধু বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন করেনি; ভবিষ্যতের জন্যও নতুন রাজনৈতিক দিশা এবং নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশের পথ সুগম করেছে। গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, দেশের জনগণই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক। ক্ষমতা ও শাসক দল যতই কঠোর হোক না কেন, জনগণের ঐক্য ও সচেতনতা তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে। এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা করে, যেখানে নিপীড়ন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক লড়াইকে শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করা হয়। তবে গণঅভ্যুত্থানের ঐক্যের মাঝেও বিভাজনের বিপজ্জনক রেখা ক্রমে বড় হয়ে উঠছে। গণঅভ্যুত্থানের পর কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নতুন গঠিত সংগঠনগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য আন্দোলনের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই রাজনৈতিক বিভাজন দেশকে একটি দীর্ঘ অস্থিরতা ও অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিতে পারে। ঐক্য না থাকায় স্বৈরাচারী শক্তি ফের ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। সবকিছুর মাঝ দিয়েও অন্তর্র্বতী সরকারের নেতৃত্বে দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির আধিপত্য এই প্রচেষ্টাকে অনেকাংশেই ব্যাহত করছে। আন্দোলনের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠিত ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলেও পারস্পরিক আস্থার অভাবে তাদের কাজ সঠিক গতি পাচ্ছে না। ফলে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হতে পারে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন– স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু শাসকের ক্ষমতার বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ নয়। বরং একটি বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন, যেখানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রতিশ্রæতি থাকে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্য গড়ে তোলা রাষ্ট্রের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব পক্ষ একত্রিত হলে দেশ দ্রæত শান্তি ও উন্নয়নের পথে হাঁটবে। গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষাগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আন্দোলন দেখিয়েছে, ক্ষমতা শুধু সরকারি পদে বসে থাকলেই যথেষ্ট নয়; বরং জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও একান্ত জরুরি। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের কর্মকাÐে স্বচ্ছতা প্রয়োজন এবং মানুষের মৌলিক অধিকার ও মুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া একান্ত জরুরি। তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং তাদের রাজনৈতিক চেতনা বিকাশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব না দিলে দেশে তৈরি হতে পারে রাজনৈতিক স্থবিরতা। কারণ আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতে এবং তারা শুধু ঐতিহ্যের ধারক নয়, বরং পরিবর্তনের উৎস। প্রত্যাশা বলে, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে দেশ একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক দিগন্তে প্রবেশ করবে। পুরোনো পথ নয় বরং যেখানে গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। বরং একটি জনজাগরণের প্রতীক, যা দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে দেশের মানুষ একযোগে কাজ করে স্থায়ী পরিবর্তন এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করতে পারে।
রাজু আলীম: কবি ও সাংবাদিক

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা