গভীর ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
বিএনপিকে জনগণের সামনে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ দল হিসাবে প্রচার করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন পুরনো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে এটা বিএনপির বলে প্রচার করছে। যা স্বৈরাচার হাসিনার দোসররা দেশের বিরুদ্ধে করেছে। সেই একই কায়দায় বিএনপিকে জণবিচ্ছিন্ন করতে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতাকমীদের। সম্প্রতি দেশে উল্লেখ জনক হারে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি ও মব ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে। আর ষড়যন্ত্রকারীরা বিএনপি থেকে বহিস্কৃতদের ও বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু সন্ত্রাসীকে তারা পৃষ্টপোষকতা করছে বলে বিএনপির অভিযোগ। দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ভিডিও নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় যুবদল নেতাকর্মীদের হামলা বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করা হয়েছে। এদিকে ভিডিওটির কমেন্ট বক্সে ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় কুমিল্লার দেবীদ্বার এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি। ষড়যন্ত্রকারীরা গত রোববার ‘দিল্লি না ঢাকা’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি প্রচার করে। এ সময় নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে যুবদল নেতা জাহিদুল ও তার অনুসারীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করছে বলে দাবি করা হয়। এ সময় তাদেরকে দ্রæত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানান তারা। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর তা ব্যাপক ভাবে প্রচার করতে দেখা গেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের বলে দাবি করেছেন তারাও। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত সানিসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের আইডি থেকে এটি শেয়ার করা হয়। এদিকে ভিডিওটি প্রচারের পর পোস্টে কমেন্ট করে ভিডিওটি ফেইক বলে জানান কুমিল্লার দেবিদ্বার এলাকার একাধিক বাসিন্দা। ভিডিওটি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার বলে জানান তারা। কুমিল্লার দেবীদ্বার এলাকার আরিফুল ইসলাম জানান, এটা আমাদের দেবিদ্বারে ৪ আগস্ট ২০২৪ ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্রদের ওপর হামলার ভিডিও। অযথা গুজব ছড়ানো বন্ধ করুন। একই এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আনিসুজ্জামান বলেন, এটা আমাদের কুমিল্লা দেবিদ্বারে ৪ আগস্ট ছাত্রলীগ এর হামলার ভিডিও। রাজনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু তারাই এ ধরনের অপপ্রচার চালায়। দেবীদ্বার এলাকার নাজমুল হাসান নাহিদ জানান, এটা ৪ আগস্ট ২০২৪ সালের ঘটনা। আমার এলাকার। এ ধরনের অপপ্রচার করা থেকে বিরত থাকার আহŸান করছি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ জানান, হাসিনার আমলে আমরা এ ধরনের গুজব দেখেছি। বর্তমানে একটি পক্ষ বিএনপি, যুবদল তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শের শক্তির প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। এগুলো নোংরামি, এগুলো তারাই করছে যারা বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, আমাদের কাছে এমন কোন ঘটনার অভিযোগ আসেনি। ভিডিওটি ফেক হতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পর এ জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে মুক্ত হলেও, এখনো দেশটি দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের মাঝে ডুবে আছে। বর্তমানে দেশে নতুন করে একটি ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে কতিপয় দল। আর সেই ষড়যন্ত্রটি হলো, জাতীয়তাবাদী শক্তির গতিশীল নেতৃত্ব আমাদের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। তারেক রহমানের গতিশীল নেতৃত্ব ও তার জনপ্রিয়তাকে মোকাবেলা করতে না পেরে, ভয় পেয়ে কতিপয় দল ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, তারা নানা রকমের মিথ্যা কুৎসার পাশাপাশি গভীর নোংরামিতে মেতে উঠেছে তারা। এছাড়া পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী হত্যাকাÐকে কেন্দ্র করে একটি গুপ্ত সংগঠন কথিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের মাধ্যমে ছাত্রদলের বিপক্ষে ‘মব’ সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, শিবিরের গুপ্ত কর্মীরা মব সৃষ্টি করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছেন। রাজধানীর মিটফোর্ডে সা¤প্রতিক হত্যাকাÐের ঘটনাকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা ও রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি’ বাস্তবায়নে এই ঘটনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ জন্য ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনে বিএনপি নিজস্ব একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মিটফোর্ডের হত্যাকাÐকে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘিœত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনা রয়েছে বলে সন্দেহ করার অবকাশ আছে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাÐকে কেন্দ্র করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্তে¡ও একটি রাজনৈতিক দল ও তার প্রধান নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিল এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।