আজ রবিবার | ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ | ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ | রাত ১:৩৭

নির্বাচন নিয়ে স্নায়ুচাপে বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:১৮ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
টানা ১৮ বছরের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ভিন্ন এক সন্ধিক্ষণে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতাকর্মীদের মনে স্বস্তি ফিরলেও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা যেন কাটছে না তাদের মন থেকে। দূরত্ব তৈরি হয়েছে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে। নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক তৈরি হয়নি তাদের। আবার ৫ আগস্ট-পরবর্তী দলের কিছু নেতাকর্মীর বিতর্কিত কর্মকা- বিব্রত করছে দলটিকে। হচ্ছে সমালোচনাও। এসব পাশে রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে দ্রুত কীভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যায়, বিএনপি দৃশ্যত তাতেই বেশি নজর দিচ্ছে বলে জানান দলের নেতারা। তবে সমালোচকরা বলছেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উন্মুখ বিএনপি। তাই সংস্কারের বিষয়ে তারা বড় ছাড় দিতে চাচ্ছে না। অবশ্য ক্ষমতার কাছে এসেও দূরে থাকা এবং নির্বাচন নিয়ে নানা গুজবের কারণে এক ধরনের স্নায়ুচাপে ভুগছেন দলটির নেতারা। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সফল অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন, সংস্কার, ফ্যাসিবাদের বিচারসহ নানা ইস্যুতে গণঅভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। সবাই নিজেদের স্বার্থ মাথায় রেখে পথ চলতে শুরু করেছে। এতে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ বাধার মুখে পড়ছে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের পর মানুষ গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আশান্বিত হয়েছিল। এই গুণগত পরিবর্তন রাজনীতির ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে, অর্থনীতির ক্ষেত্রে। বিএনপি তা ধারণ করছে। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এখন নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। যদিও একটি গোষ্ঠী তা বানচালের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন ধরনের উগ্র কথা বলে মানুষকে বিভক্ত করতে চাচ্ছে। তবে ষড়যন্ত্র কখনও কাজে আসে না। অতীত তাই বলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারামুক্ত হন। রাজনৈতিক মামলায় দলের কারাবন্দি নেতাকর্মীরাও মুক্তি পান। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠছে। এতে দলের জনপ্রিয়তা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। অনেককে বহিষ্কারসহ নানা শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা পাল্টায়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা বাস্তবায়নে বিএনপিকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ, বিএনপিই সবচেয়ে বড় দল। মনে করা হয়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। সেখানে বিএনপিকে যেটা ভাবা দরকার, ক্ষমতাসীনদের দৃষ্টিতে এক ধরনের সংস্কার হয় আবার বিরোধীদের দৃষ্টিতে এক ধরনের সংস্কার হয়। আমার মনে হয়, বিএনপি এখন ক্ষমতাসীন হিসেবে সংস্কার দেখছে। কিন্তু চিরকাল তো তারা ক্ষমতায় থাকবে না। তাদেরও বিরোধী দলে যেতে হবে। সুতরাং, তারা যদি বিরোধী দলের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে সংস্কার নিয়ে এগোয়, তাহলে বর্তমান সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় ভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। তাদের ‘নতুন প্রতিপক্ষ’ জামায়াতে ইসলামী কিংবা এনসিপি তথ্যপ্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ। প্রতিনিয়ত সামাজিক মাধ্যমে গুজব, গুঞ্জন আর ট্রলের মোকাবিলায় বিএনপি যেন পেরে উঠছে না। একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিতও করেছে তারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশের সামরিক-বেসামরিক শক্তি ও সুশীল সমাজের সমর্থন, গণমাধ্যম, ত্যাগী আর যোগ্য প্রার্থী বাছাই করার মতো চ্যালেঞ্জও নিতে হবে দলটিকে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই সনদ, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিতে সৃষ্ট মতভিন্নতা বিএনপির ভেতরে সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন, পরিস্থিতি যাই হোক, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। মিত্র শক্তির মধ্যে বিভাজন নিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী শক্তিশালী বিরোধী দল হতে চাচ্ছে। তারা সেই নিশ্চয়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, এনসিপি এখন যেভাবে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে, ক্ষমতাকে উপভোগ করছে, সেভাবে আগামীতেও চাচ্ছে। সেজন্য তারাও নানা অজুহাত তৈরি করছে। তবে একটা সময় এসব নিরসন হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন নেতারা। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বতী সরকার সংস্কারের কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে। যে কমিটিগুলো করেছে, তারা দ্রুততার সঙ্গে জুলাই সনদের কাজ করছে। কিছু কিছু জায়গা আছে, যেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত হতে পারিনি। সেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব সব রাজনৈতিক দল অন্তত একটি জায়গায় একমত হোক। নির্বাচনকে দ্রুত শেষ করে আমরা সংসদ তৈরি করি, সংসদে বাকি যে কাজগুলো থাকবে, সেগুলো শেষ করব।আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অন্যান্য দল সারাদেশে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও বিএনপি তা করেনি। নির্বাচনের তপশিলের পর এই কর্মযজ্ঞ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এরই মধ্যে দেশের অনেক আসনে দলের প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া শুরু হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অনেক দলের নেতাদের আসনের বিষয়েও বিএনপির হাইকমান্ড নিশ্চিত করেছেন। এর বাইরে থাকা অন্যান্য আসনে প্রার্থিতা জরিপসহ প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। বিএনপি মনে করছে, তরুণ নেতৃত্বের প্রতি মানুষের এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। জনগণের সেই আগ্রহ-আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জায়গা দেওয়া যায়, তা নিয়েও ভাবছে শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় মনোনয়নেও এই ভাবনার প্রভাব পড়তে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন নতুন প্রত্যাশাসহ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে তাঁর দল। সেখানে থাকবে মেধার মূল্য, মানুষ বুকভরে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেবে, যেখানে কথা বলার অধিকার থাকবে, থাকবে ভোটের অধিকার; সর্বোপরি থাকবে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, যেখানে স্বৈরাচারী সরকারের বুলেটের গুলিতে আর কাউকে প্রাণ দিতে হবে না।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা