কোন্দলের বেড়াজালে না’গঞ্জ আ’লীগ!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দলীয় ‘কোন্দল’ যেন কোন ভাবেই পিছু ছাড়ছে না নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতি থেকে। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেেলর মধ্যে ঐক্যে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করেছে কেন্দ্র। সে মোতাবেক সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটিও ঘোষনা করা হয়েছে। পূর্বের কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে বহাল রেখে জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটিও ঘোষনা করা হলেও দলীয় কোন্দল যেন কিছুতেই নিরসন হচ্ছে না। দ্বাদশ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে থাকা প্রভাবশালী নেতাদের প্রকাশ্য কোন্দল ভাবিয়ে তুলছে তৃনমূল নেতৃবৃন্দকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দলীয় কোন্দল নিরসন না হলে এর প্রভাব দ্বাদশ নির্বাচনে পড়বে বলে আশংকা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকমহল। জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে দলীয় কোন্দলের প্রভাব উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের রাজনীতিতেও আচড়ে পড়ছে। জানা যায়, সাংগঠনিক স্থবিরতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই বিবর্ণ। কি জেলা কি তৃণমূল সর্বত্র একই অবস্থা। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা-ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত বেড়েছে কোন্দল। কোনো কোনো স্থানে বিভক্তি তিন থেকে চার বা ততোধিক গ্রুপে। অন্যদিকে টেন্ডার ও চাঁদাবাজিকে ঘিরেও সুবিধাভোগীরা জড়িয়ে পড়ছেন কোন্দল, উপ-কোন্দলে। দলীয় রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকা ত্যাগী, সংগ্রামী নেতারা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। জেলার অনেক স্থানে দিবসভিত্তিক কর্মসূচিই পালন করা হয় না। দ্বন্ধে আটকে গেছে মহানগর কমিটি। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন জেলা আওয়ামীলীগের পর পরই করার থাকা থাকলেও আবহাওয়ার প্রতিকূলতার দোহাই দিয়ে পেছানো হয়েছে। মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন অচিরেই পূর্নঙ্গ করার থাকা কথা থাকলেও নিদের্শ আটকে গেছে আওয়ামীলীগের রাজনীতি। তবে, কবে কমিটি ঘোষণা হবে তা কেউ জানে না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহানগর নেতাদের মধ্যে দ্বন্ধের কারণে কমিটি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। মহানগরের অনেক পদে তরুন নেতাদের রাখা হবে। এ নিয়েও নিরব দ্বন্ধ চলছে। শুধু পদ নিয়েই নয়, রয়েছে রাজনীতিতে কে সিনিয়র, কে জুনিয়র এ বিষয় নিয়েও চলছে প্রতিযোগীতা। অপর একটি সূত্রে জানাগেছে, মহানগর আওয়ামী লেিগর দু’টি কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের মধ্যে কোন দ্বন্ধ না থাকলেও পূর্বে দেয়া দুই কমিটি এখনো বহাল রেখেছে তারা। তবে কবে নাগাদ এ কমিটির ঘোষণা আসবে এবং কোন প্রক্রিয়া কমিটি হবে এ নিয়ে নেতাকর্মীদেও মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, ‘কমিটি কবে ঘোষণা হবে তা কেন্দ্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। ওই নেতা আরো জানান, বর্তমানে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। তবে জেলা আওয়ামীলীগে সম্মেলন হলেও নতুন করে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পরেছে শীর্ষ নেতারা। অপর একটি সূত্রে জানাগেছে, সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে পূর্বের নেতৃবৃন্দকেই বহাল রেখে সম্মেলন করা হয়। নতুন করে সম্মেলন হলেও পূর্বের নেতৃবৃন্দের হাতে জেলা আওয়ামীলীগের কতৃত্ব বহাল থাকায় সভাপতি আঃ হাই এবং সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলয়ের মধ্যে পূর্বের ন্যায় দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারন করছে। সম্প্রতি, সম্মেলনের পর পরই সভাপতি ও সেত্রোঁরীর আলাদা আলাদাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমেই দ্বন্ধের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। এর প্রভাব তৃনমূল রাজনীতিতে আচড়ে পড়ছে। এমনকি আওয়ামীলীগের জেলা কমিটি চতুর্মুখী দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে সাংগঠনিক স্থবিরতায় দলটির এখন বিবর্ণ চেহারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দরা বিরোধ নিরসনে অসহায়। কারণ হিসেবে কর্মীরা মনে করেন হাইব্রিড নেতাদের দাপটেই দলে এ অস্থিরতা। অভিযোগ রয়েছে, এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতাদের পাশে এখন ত্যাগী নেতাকর্মীরা ভিড়তে পারেন না। তাদের চার চারপাশে হাইব্রিড, টেন্ডারবাজ, আর তোষামোদকারীদের ছড়াছড়ি। ভূঁইফোড় নেতারাই নেতৃত্বের অগ্রভাগে। ত্যাগী নেতাদের কোনো মূল্যায়ন নেই দলে। নেতৃত্ব ও ক্ষমতা এখন হাইব্রিড নেতৃত্বের কব্জায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা এখানে থাকতেই পারে। তবে সাংগঠনিক কোনো বিরোধ নেই। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু নেতার স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, ক’জন নেতার ব্যাক্তিগত দ্বন্ধের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে পিছিয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলা কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকে ধারণা করছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। এতে অধ্যাপিকা নাজমা রহমানকে সভাপতি, একেএম শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। ২০০২ সালে এ কমিটি ভেঙে আকরাম হোসেনকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে বিরোধ তৈরি হওয়ায় ২০১১ সালের ১ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে সংগঠনে স্থবিরতা নেমে আসে। সর্বশেষ ২০২২ সালে জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে আঃ হাইকে সভাপতি এবং আবু হাসনাত শহীদ বাদলকে সাধারন সম্পাদক ঘোষনা করে কমিটি ঘোষনা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।