মুখমুখি আ’লীগ-বিএনপি
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট রাজনীতিতে যেন আতঙ্কের দিন হয়ে উঠেছে ২৮ অক্টোবর। ১৭ বছর আগে এই দিনে ঢাকায় বড় দলগুলোর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। যেখান থেকে পরবর্তীতে আলোচিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সৃষ্টি হয়। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও আলোচনায় এসেছে ২৮ অক্টোবর। কারণ ওইদিন বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। একইদিন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে রাজনীতিতে দীর্ঘসময় ধরে কোনঠাসা হয়ে থাকা জামায়াতও সেদিন বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও মাঠে থাকবে। একইদিন ঢাকা শহরে সব দলের কর্মসূচি দেওয়ায় দিনটিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কী হবে সেদিন তা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে নগরবাসীর মধ্যে। সেদিন বড় ধরণের সংঘাতের আশঙ্কা করছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তবে দিনটিতে যেন বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য নিরাপত্তা বলয় তৈরির নানা ছক কষছে বিভিন্ন বাহিনী। ২৮ অক্টোম্বরের কর্মসূচীর প্রভাব পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জেও আচড়ে পড়েছে। ঐদিনের কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ। জেলা পুলিশ প্রশাসনসও হার্ড লাইনে রয়েছে কর্মসূচীকে ঘিরে। সর্বত্র বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। কি হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোম্বরের কর্মসূচীকে ঘিরে। সন্ত্রাস নিমূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এতদিন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। কথার লড়াই চললেও রাজপথ তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে যে উত্তপ্ত হওয়ার আভাস মিলছে সেখান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরে আসতে হবে। খোলা মন নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা জরুরি। প্রসঙ্গত, গত ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন। সেদিন থেকে মহাযাত্রা শুরুরও ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকে আলোচনায় আসে ২৮ অক্টোবর। কী করতে চায় আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও জামায়াত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জামায়াত সমাবেশের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে ওইদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও পুরো ঢাকায় ছড়িয়ে থাকবেন তাদের নেতাকর্মীরা। এরইমধ্যে বিএনপি বলেছে স্মরণকালের সেরা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ করতে চায় তারা। তবে নয়াপল্টনে দলটি অনুমতি পাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। অন্য কোথাও পাঠাতে চাইলেও বিএনপি যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় দশ লাখ নেতাকর্মীকে কর্মসূচিতে উপস্থিত করার কথা বলছে আওয়ামী লীগ। আর একইদিনে সমাবেশের অনুমতি না পেলেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। এদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপথ আন্দোলনে থাকা ৩৬টির মতো দলও মাঠে থাকবে। সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে দফায় দফায় বৈঠক করণীয় নির্ধারণ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। আপাতত ছুটিও বাতিল করা হয়েছে সদস্যদের। জানা গেছে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে জেলা ও মহানগর বিএনপিসহ দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা। দলীয় তেৃবৃন্দের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে যেই মহাযাত্রা শুরু হবে, নেতৃবৃন্দ সেখানে অতীতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোঁকন বলেন, সরকারের পতন অনিবার্য। মহাসমাবেশে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করলে এরা পালিয়ে রক্ষা পাবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে, ২৮ অক্টোবর ঘিরে বসে নেই আওয়ামী লীগও। ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগিতা, ভ্রাতৃপ্রতীম সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢাকাজুড়ে পাহারা দিতে বলছেন নেতারা। নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ হাই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাস্তা ছাড়বেন না। আক্রমণ করব না, এ পর্যন্ত করিনি, এ পর্যন্ত আমরা বিরোধী দলের ওপর। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ করব। কোনো ছাড় নয়। তিনি আরও বলেছেন, ২৭ থেকে চোখে ঘুম থাকবে না। প্রয়োজনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে। যেখানে আমার অস্তিত্বের প্রশ্ন সেখানে ঘুম দিয়ে কি করব। অন্যদিকে ২০১৩ সালের পর থেকে যুদ্ধাপরাধীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে রাজনীতির বাইরে চলে যাওয়া জামায়াত নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি, জেলার বিভিন্নস্থানে সরকোর বিরোধী কর্মসূচী প্রকাশ্যে রাজপথে অবস্থানের মাধ্যমে পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়াও, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারাও ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে অনড় বলে জানিয়েছে। অপরদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জামায়াত সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশৃংখলা করার চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, একইদিন সব দলের নেতাদের ঢাকা দখলে নেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে জনমনে। বিশেষ করে রাজনীতির বাইরে থাকা নাগরিকদের উদ্বেগ যেন কয়েকগুন বেশি। শহরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, ’২৮ তারিখ ছুটি নেব কিনা ভাবতেছি। সবাই মাঠে নামলে শহর অচল হয়ে যাবে। আর মারামারি শুরু হলে কে বাঁচে, কে মরে তা কেউ জানে না। পরিবারের লোকজনও টেনশনে আছে। যারা কর্মসূচি দিয়েছেন তাদের মধ্যেও উদ্বেগ আছে ২৮ অক্টোবর ঘিরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রদল নেতা বলেন, ওইদিন কি হবে বুঝতেছি না। তবে মাঠে থাকার কড়া নির্দেশনা আছে। কর্মসূচি ঘোষণার পর বাসা ছাড়া। একেক দিন একেক জায়গায় ঘুমাচ্ছি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। রোববার অথবা সোমবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে। এরপর আরও কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনায় আছে হাইকমান্ড। তবে এরপর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি টেনে নিতে চান নেতারা। এদিকে, মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। চালানো হচ্ছে নিরাপত্তা তল্লাশি। এছাড়াও সন্দেহজনক বাসা বাড়ি, হোটেলও তল্লাশি চালানো হবে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও কড়া পাহারায় থাকবে। জেলা পুলিশের এক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাধারন মানুষকে নিরাপত্তা দিতে নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি ঢাকার প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হবে।