পুরোনো বইয়ের পাঠক কমছে
বইয়ের দোকানের সামনে এলেই ইচ্ছে করে সব বই কিনে নিয়ে যাই। আমার বাসায় অনেক বই, সেসব পড়ার সময় পাই না। আসলে মোবাইল ফোন আসার পর বই পড়ার অভ্যাসটা অনেক কমে যাচ্ছে। চেষ্টা করে আগের মতো ধরে রাখতে। তারপরও বইয়ের সামনে আসলে বই কিনে নিয়ে পড়তে মন চায়। সেই কারণেই দোকানে এসে বইয়ের খোঁজ নেওয়া। পড়ার চাইতে বই সংরক্ষণে রাখাটাও আমার কাছে অনেক বড় বিষয়। বাসায় থাকলে একসময় পড়া হবেই। কথাগুলো বলছিলেন, কবি, গল্পকার, উপন্যাস, লেখক রাকিবুল রকি। এই লেখক শহরের পুরোনো বইয়ের দোকানে এসে এই প্রতিবেদকের (জাহাঙ্গীর ডালিম) এর কাছে নিজের অনুভূতির কথা বলেন। পাঠবইয়ের বাইরে অন্য বই কেনার চাহিদা কমে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জ সর্বএ যখন দোকানগুলো উঠে যাচ্ছে, রকির মতো অনেক পাঠকদের মনের খোরাক মেটাচ্ছে পুরোনো বইয়ের দোকান গুলো। নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় অবস্থিত মিন্নত আলী মার্কেট টিকে আছে বেশ কয়েকটি বইয়ের দোকান। এককালে এই এলাকায় ২৫-৩০টি দোকান থাকলেও এখন ৮-১০টি টিকে আছে। এর মধ্যে পুরোনো বইয়ের দোকান ৩টি। ৩০-৪০ বছরের বেশি সময় দোকানগুলো পাঠকদের হাতে স্বল্প মূল্যে তুলে দিচ্ছে বই। বইয়ের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়। আছে মোটামুটি ভিড় আছে। গল্প, উপন্যাসের, বদলে দিনদিন সেখানে পাঠবই দখল করে নিচ্ছে বিসিএস, ব্যাংক জব, সরকারী চাকুরী, প্রাইমারিসহ নানান গাইড আর সাজেশন বইয়ে ভরে গেছে দোকান। কি করবে তারা পাঠকের চাহিদা এখন সেইসব বই। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা এসেই খোঁজ নিচ্ছে বিভিন্ন চাকুরী গাইড বইয়ের। মিন্নত আলী মার্কেটে সবচেয়ে পুরোনো বই ব্যবসায়ী ববি লাইব্রেরী মির্জা ফারুক (৭৫) বছর তাকে পাওয়া যায়নি তার ছেলে বাবার ব্যবসা দেখশোন করেন মারুফ বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে করছেন পুরোনো বইয়ের ব্যবসা। আগে দোকান ছিলো আরও বড়। তার দোকানের পাশে রয়েছে বাকি দুইটি দোকান। সেইসব মালিক হচ্ছেন মির্জা সুমন ও সোহেল। কথায় কথায় ববি লাইব্রেরী চাকরি করেছেন তিন বছর হলো আশিক বলেন, তার মালিকের দোকান রয়েছে তিনটি। আগে তো অনেক দোকানই ছিলো। মার্কেট ভাঙার পর সব উঠে গেছে। ব্যবসা দিনদিন নিচের দিকে যাচ্ছে। তারপর আলহামদুলিল্লাহ। তাই অনেকে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। মির্জা ফারুকের ছেলে বলেন, বয়স যেই হইছে, এখন অন্যদিকে যাওয়ার ইচ্ছা বা সুযোগ কোনোটাই নেই তাদের। পুরোনো বইয়ের ব্যবসা কেমন চাইলে মারুফ বলেন, মোটামুটি। পাঠ্যবই কিনতে আসে বেশি। গল্প, উপন্যাসের বই কম বিক্রি হয়। যারা আসে তারা ঘুরে ফিরে জাফর ইকবাল, হুমায়ুন আহমেদের বই খুঁজে নিয়ে যায়। এগুলো প্রচুর বিক্রি হয়। আর বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন চাকুরীর গাইড বই। শুধু বাংলা সাহিত্য আর পাঠ্যবইয়ের সীমাবদ্ধ নয় এই দোকানগুলো, ইংরেজি বিভিন্ন বইয়ের ও দেখা মেলে এখানে। পাশাপাশি ধর্মীয় বইয়ের ও বিশাল ভান্ডর রয়েছে পুরোনো এই বইয়ের দোকানে। আলাপচারিতার মাঝে এক ক্রেতা এসে পুরোনো ইংরেজি ম্যাগাজিনের খোঁজ করেন। কিন্ত সেটা দিতে পারেনি তিন দোকানির একজনও। ক্রেতা বলেন, মেয়ের স্কুলে কী একটা এসাইরমেন্ট দিয়েছে শুনলাম। সে বললো ইংরেজি ম্যাগাজিন কিনে আনতে। সে জন্য পুরোনো বইয়ের দোকানে এলাম। এক সময় তো ম্যাগাজিন পাওয়া যেত। এখন ম্যাগাজিন কই বিক্রি করে তা-ও জানি না। আরেকজন ভদ্রমহিলা মেয়ের পুরোনো গাইড নিতে এসেছেন। বলেন, নাইন, টেনের পুরোনো বই দরকার তাই পুরোনো বইয়ের দোকানে নিতে এসেছি, পেয়ে গেছি, ভালো লাগলো।