আজ বৃহস্পতিবার | ১৭ জুলাই ২০২৫ | ২ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২১ মহর্‌রম ১৪৪৭ | দুপুর ২:৩০

ছাত্রলীগের অপরাধে আ’লীগের পতন

ডান্ডিবার্তা | ১৭ জুলাই, ২০২৫ | ৮:২৬ পূর্বাহ্ণ

নাসির উদ্দিন
দুর্ধর্ষ ছাত্রলীগের অপরাধে শেখ হাসিনার পতন ঘন্টা বেজেছে। ছাত্রলীগ এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। ছাত্রলীগ খুন, ধর্ষণের মহামারিতে পরিনত করেছিল। আর চাঁদাবাজি ছিল ওপেন সিক্রেট। আর শেখ হাসিনার একমাত্র সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিনত হয়েছিল ছাত্রলীগ। এমন মন্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, শেখ হাসিনার পালিত ছাত্রলীগ এতটাই বেপারোয়া হয়ে উঠেছিল তারা অপরাধ করতে করতে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছিল। যার ক্ষোভের কারণে জুলাই আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠে। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ খুনের মহামারিতে পরিনত করে। একটি শিশু রিয়া গোপও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আর শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীরা ছাত্রলীগকে তাদের অপরাধকে উৎসাহিত করতে পুরস্কৃত করতেন। তাই অন্তবর্তি সরকার ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ করে। আর আওয়ামীলীগের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে। তার পরও তাদের বোধদয় হয়নি। কথা বলে কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না। ছাত্রলীগ যে, সন্ত্রাসী সংগছন তহার বাস্তবতা প্রমান করে দিয়েছে গতকাল বুধবার গোপলগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা করে। তারা পুলিশের গাড়ি পোড়ানোসহ এনসিপির গাড়ি বহরে হামলা করে গাড়ি ভাংচুর করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে সড়ক অবরোধ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গোপালগঞ্জ শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলায় কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলী‌গ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এসময় অনেক পুলিশ ও সাংবাদিক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। গোপালগঞ্জ থেকে অন্যান্য জেলায় যাওয়ার রুটগুলো গাছের গুঁড়ি ফেলে বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। এদিকে এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা রি‌পোর্টার্স ফোরা‌মের অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। অপরদিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারেও হামলা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো আসামি পালানোর খবর পাওয়া যায়নি। এতে বেশ কয়েকজন কারারক্ষী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী আচমকা জেলা কারাগারে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে কারাগারের জানালার কাচ ভেঙে যায়। খবর পেয়ে দ্রæত ঘটনাস্থলে যৌথবাহিনী উপস্থিত হয়ে অ্যাকশনে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। এদিকে এ ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে দুজনের। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। গত বছরের ১৫ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। সেই হামলায় আহত প্রায় ৩০০ আন্দোলনকারী শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসা নেয় বলে জানা যায়। হেলমেট পড়া ছাত্রলীগের পেটোয়া বাহিনীর একাধিক সদস্যকে পুলিশ বাহিনীর ছত্র ছায়ায় থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের বাস থেকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে লাঠি দিয়ে পেটায় ছাত্রলীগ। রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয় মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে মহড়া দিতে থাকে যুবলীগ। ১৫ জুলাইয়ের সংঘর্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীদের। তাদের অনেককেই আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিক্ষোভ হয় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে দুপুর ১২টায় কর্মসূচির ডাক দিলে একই স্থানে বিকেল ৩টায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টার দিকে ঢাবির ভিসি চত্বরে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিআরটিসি দোতলা বাসে আত্মরক্ষার্থে উঠে পড়েন ৫০-৬০জন ছাত্রী। মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের সেখান থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে লাঠিপেটা করে। সে সময় তাদের অনেকেই জুতা, ব্যাগ কিংবা ছাতা ফেলে পালাতে থাকে। কেউ শহীদ মিনারের দিকে, কেউ পলাশীর দিকে আবার কেউ নীলক্ষেতের দিকে চলে যায়। সেই ঘটনায় চার ছাত্রী ও দুই ছাত্রের মাথা ফেটে যায়। জখম হয় সংবাদকর্মীসহ বেশ কয়েকজন পথচারী। ছাত্রলীগের লাঠিয়াল বাহিনীর মাথায় তখন হেলমেট পড়া ছিল। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথমে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ক্যাম্পাসজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে ক্যাম্পাস দখলে নেয়। সন্ধ্যায় বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে পুলিশ। এ সময় হলের মধ্যে বহিরাগতদের অবস্থানে নিষেধাজ্ঞাসহ ৫টি নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যারা আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে তাদের উপর চার দফায় ঢামেকের জরুরি বিভাগে হামলা করা হয়। মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের সঙ্গে থাকা বহিরাগতরা জরুরি বিভাগের সামনে আহত যাকেই পেয়েছেন, তাকেই মারধর করেছে। আজ ছাত্রলীগের অপকর্মে শেখ হাসিনার পতন ও আওয়ামীলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এখনো আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তাদের তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।

 




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা