আজ সোমবার | ২৮ জুলাই ২০২৫ | ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | ২ সফর ১৪৪৭ | রাত ১০:৫২

না’গঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা কারা?

ডান্ডিবার্তা | ২৭ জুলাই, ২০২৫ | ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
জুলাই বিপ্লবে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র-জনতা স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে ৫৫জন শহীদ হন। আহত হন কয়েক হাজার। সাধারণ ছাত্র-জনতা খালি হাতে আন্দোলন করলেও গত বছরের ১৯ জুলাই তৎকালিন আওয়ামীলীগ নেতা শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার স্বশস্ত্র বাহিনী নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে বের হয়ে বঙ্গবন্ধু সড়কের নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত শত শত রাউন্ড গুলি ছুড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই সময় জানায়, গুলশান সিনেমার সামনে দাঁড়িয়ে এলাপাথারি গুলি ছুড়লে ছাদে থাকা শিশি রিয়া গোপ গুলি বিদ্ধ হয়। যদিও সেই সময় শামীম ওসমান রিয়া পুলিশের গুলিতে নিহত বলে প্রচার করলেও তৎকালিন পুলিশ সুপার জানান, ঐ এলাকায় সেদিন ঘটনার সময় কোন পুলিশের উপস্থিতি ছিল না। দীর্ঘ দিন রিয়া হত্যায় মামলা না হলেও গত পহেলা জুলাই পুলিশ বাদী হয়ে রিয়া হত্রা মামলা করলেও সেই মামলায় আসামীদের অজ্ঞাত দেখানো হয়। যদিও ১৯ জুলাই নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের অস্ত্রধারী কারা ছিল তা সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশাপাশি দেশবাসী জানে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে পক্ষ থেকে ১৯ জুলাইয়ে অস্ত্রধারীদের তান্ডবে কারা অগ্রনী ভ’মিকা পালন করেছে তাদের নাম ঠিকানাসহ একটি অভিযোগনামা দায়ের করলেও রহস্যজনক কারণে সেই অভিযোগ মামরা হিসাবে গ্রহণ না করে সদর থানার একজন এসআইকে বাদী করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে হত্যা মামলা রুজু করায় শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে আওয়ামীলীগের পলাতক অনেকেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কারো কারো সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেলেও পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। তবে আগামী মাসে আওয়ামী দোসররা শহরে একাধিক অঘটন ঘটানোর পায়তারা হিসাবে বিভিন্ন এলাকায় গোপন বৈঠক করে চললেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এ ব্যপারে কাউকে চিহিৃত করতে পারেনি। ইতিপূর্বে ডান্ডিবার্তার কাছে মহানগর মহিলা দলের সাধারন সম্পাদিকা দিলারা মাসুদ ময়না অভিযোগ করেছিলেন, পশ্চিম দেওভোগ এলাকার জসৈক লিটনের বাড়িতে একাধিক গোপন বৈঠক হলেও লিটন প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, লিটনের সাথে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। গত বছরের জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র তুলে ধরেছিল তাদের নিয়ে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা এবং লুন্ঠিত অস্ত্র প্রায় ১ বছরেও উদ্ধার না হওয়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ ১৯ জুলাই শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে রিয়া গোপসহ নারায়ণগঞ্জে অন্তত: ৫জন নিহত হয়। জুলাই বিপ্লবের ২১ দিনে নারায়ণগঞ্জে ৫৫জন নিহত হয়। এসব শহীদদের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ শাসনের পতন ঘটে। আন্দোলনের দিনগুলোতে প্রতিরোধ, সংঘর্ষ, রক্তপাত ও প্রাণ বিসর্জনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর ও তার আশেপাশের জনপদ হয়ে ওঠে প্রতিরোধের দুর্গ। শহরের চাষাঢ়া এলাকা ছিল আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা দখলে নিয়ে পুরো দেশের লাইফলাইনকে স্তব্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রলীগ-যুবলীগ ছাত্রদের হলে হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের সূচনা হয়। টেলিগ্রাম ও ডিসকর্ড অ্যাপের গ্রæপে যোগাযোগ করেন তারা। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয় ফেসবুকে। ৪, ৫, ১৮ ও ১৯ জুলাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ চারদিন হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল। জানা যায়, ১৫ জুলাই চাষাঢ়ায় মশাল মিছিল হয় যেখানে বিভিন্ন দলের শতাধিক ছাত্র নেতারা অংশ নেন। এরপর ১৬ জুলাই থেকেই আন্দোলনের মোড় বদলাতে শুরু করে। ১৭ জুলাই কিছু সময়ের জন্য আন্দোলন করা গেলেও টেকেনি। তবে ১৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জ উত্তাল হয়ে ওঠে। এদিক চাষাঢ়া, চিটাগাংরোড, মদনপুর, সাইনবোর্ড, ভুলতা, ফতুল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদ হাসান জানান, সেদিন আমরা রেললাইন বন্ধ করি, চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ করি। পুলিশের গাড়ি এসে আমাদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। আমরা রুখে দাঁড়াই। পুলিশ গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। এরপর সংঘর্ষে পুলিশের একটি ভ্যানে আগুন দেওয়া হয়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবেও হামলা হয়। ১৮ জুলাই শহরজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ হয়। সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ও ত্রিবর্দীতে কর্মসূচিতে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে চাষাঢ়া, শিমরাইল, সাইনবোর্ড, প্রেসক্লাব, নিতাইগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা এবং ভাঙচুর হয়। ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর শিবু মার্কেট থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত হাজারো আন্দোলনকারী রাস্তায় নামে। তখন ২৬টি শীতল বাসে আগুন দেওয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নীরব রায়হান জানান, ওসমান বাহিনী তিনটি বাস ভর্তি সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন আজমীর ওসমান ও অয়ন ওসমান। সংঘর্ষে সাইনবোর্ড, ভূঁইগড় ও জালকুড়িতে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়। ২০ জুলাই কারফিউ জারি হলেও ছাত্ররা রাজপথ ছাড়েনি। ২১ ও ২২ জুলাই চোরাগোপ্তা হামলা করে সরকারি অবস্থানগুলো দুর্বল করা হয়। ২৭ ও ২৯ জুলাই সর্বাত্মক আন্দোলনে চাষাঢ়া মোড়, ২ নম্বর রেলগেট, সদর থানা, ফায়ার সার্ভিস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, যুব উন্নয়ন, হাইওয়ে পুলিশ বক্স ও ধামগড় ফাঁড়িতে একযোগে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। নীরব জানান, দিন যত গড়িয়েছে, সরকার তত বেশি দমন-পীড়ন চালিয়েছে। ৩০ জুলাই তেজগাঁও কর্মসূচি শেষে ১ আগস্ট আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী হই। শাহবাগ, শ্যামলী, মানসিক হাসপাতালের সামনে কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের যৌথ অভিযান হয়। ৩ আগস্ট সস্তাপুর ও খানপুরে সেনা ও বিজিবি যৌথভাবে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের চার ছাত্র নাঈম, পান্থ, আব্দুর রহমান গাজী ও মানিক শাহ আরিফ পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। ৫ আগস্ট ভোরে আন্দোলনকারীরা বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকা রওয়ানা হন। পথে পথে বাধা, অভিযানে টিয়ার সেল, শাহবাগ ও গুলিস্তানে বিশৃঙ্খলার মধ্যেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন হাজারো মানুষ। মাত্র ২০–২৫ মিনিটে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তখনই সেনাপ্রধান ভাষণ দেন। সেই ভাষণের পর রক্তস্নাত সূর্যদয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। এ আন্দোলনে শুধু নারায়ণগঞ্জেই শহীদ হয়েছেন ৫৫ জন। জেলা সিভিল সার্জন মশিউর রহমান ১৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যে তালিকা পাঠান, সেখানে নারায়ণগঞ্জের মোট শহীদ ৫৫ জন এবং আহত ৬০০ জনের বেশি উল্লেখ করা হয়। তবে সরকার পরবর্তীতে জেলাভিত্তিক শহীদদের তালিকা আলাদা করার নীতিতে গেলে নারায়ণগঞ্জে শুধুমাত্র ২২ জনের নাম সরকারি শহীদ তালিকায় স্থান পায়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সহযোগিতায় চূড়ান্ত করা হয়। এবিষয়ে দেওয়া এক বক্তব্যে সিভিল সার্জন মশিউর রহমান জানান, গণঅভ্যুত্থানে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সিলেট গিয়ে নিহত হয়েছে আবার সিলেটের মানুষ নারায়ণগঞ্জ এসে নিহত হয়েছে। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের কতজন নিহত বা নারায়ণগঞ্জে এসে কতো জন নিহত হয়েছে সেটা এ তালিকায় এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫৫ জন নিহত ও ছয় শতাধিক আহতের তথ্য পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রণালয় এ তালিকায় কীভাবে সেই তথ্য ভেরিফাই করে ২২ জন শহীদের চূড়ান্ত তালিকা দিয়েছে সেটা তারা ভালো বলতে পারবে। এদিকে নারায়নগঞ্জে ৫৫জন শহীদসহ কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা জুলাই বিপ্লবে আহত হলেও হত্যাকান্ডের অন্যতম অপরাধী হিসাবে নগরবাসী যাদের মনে করে সেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কেহই এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন থেকে প্রাপ্ত ২২ জন শহীদদের তালিকায় যারা রয়েছেন, মো. আবুল হাসান স্বজন, মো. জনি, ইমরান হাসান, ইব্রাহিম, মো. আদিল, মো. ইরফান ভূইয়া, কাজলা, মো. তুহিন, পারভেজ হাওলাদার, মো. মাবরুর হোসাইন, রিয়া গোপ, আহসান কবির ওরফে মো. শরীফ, ছলেমান, হযরত বিল্লাল, মো. সজল মিয়া, আরমান মোল্লা, সফিকুল, মো. মোহসীন, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান সোহেল, মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূইয়া (ফারহান ফাইয়াজ), মোহাম্মদ সাইফুল হাসান (দুলাল), মো. রোমান, তাওহিদুল আলম জিসান, এছাড়াও আরও যারা নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্দোলন করে শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন মো. জামাল, বাবুল মিয়া, আব্দুস সালাম, আলাউদ্দিন, আব্দুর রহমান, আব্দুল লতিফ, আরাফাত হোসেন আকাশ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. আল মামুন আমানত, পারভেজ হোসেন, ফয়েজ আহমেদ, মো. মেহেদী, মাহদী, মিনারুল ইসলাম, আহমেদ ইমরান, মো. মনির হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, মিলন মিয়া, মো. রুবেল মিয়া, রাকিব, রাব্বি, রাসেল, মো. রাসেল বকাউল, সেলিম মÐল, মো. সজিব মিয়া, শাহ জামান, সুমাইয়া আক্তার সিমু, সোহেল আহাম্মেদ, সৈয়দ গোলাম মোস্তফা রাজু, মো. শাহীন মিয়া, মো. হৃদয়, মো. হোসেন মিয়া।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা