গ্রেফতার আতঙ্কে আওয়ামী দোসররা

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে আওয়ামী দোসররা। ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের অনেকে এখনো কারাগারে রয়েছে। পুলিশ ও যৌথ বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে আওয়ামী দোসরদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার করেন। বর্তমানে আওয়ামী দোসররা গ্রেফতার আতঙ্কে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা গ্রেফতার এরিয়ে নিজ বাড়িতে অবস্থা না করে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে রয়েছে। অনেকে আবার অন্য জেলায় অবস্থান করছেন। আওয়ামী দোসরের অনেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নিজ জেলার বাইরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বর্তমান সময়ে তারা সেই কেনা বাড়িতে অবস্থান করছেন বলেও জানা গেছে। এদিকে বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন। সম্প্রতি যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা হলেন, বন্দর উপজেলা যুব সংহতির যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিলকে (২৪)। গত বুধবার দিবাগত রাতে বন্দর থানার চৌরাপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। সাকিল বন্দর থানার চৌরাপাড়া এলাকার সফিউদ্দিন মিয়ার ছেলে। ছাত্র হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সোনারগাঁয়ের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বাবুল। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করেছে। গত বুধবার রাতে রাজধানীর বনশ্রী থেকে তাকে আটক করা হয়। দাউদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোতালিবকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১। তার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলন দমাতে কাঞ্চন সেতুর কাছে লাঠিচার্জ ও গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের করা একটি মামলায় ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে বন্দর থানা পুলিশ। গত ৬ আগস্ট দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) একটি মামলায় মেহেদী খন্দকার ম্যাকলিন (৩০)-কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ম্যাকলিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই অভিযানে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা আইসিটির তদন্ত দলকে সহযোগিতা করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জাতীয় পার্টির নেতা স্বপন চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বন্দরের খেয়াঘাটে এক মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় বন্দর থানায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মোট ৫৯৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ১৯৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, এবং আরও ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। স্বপন চন্দ্র দাস এই মামলারই একজন এজাহারভুক্ত আসামি। বন্দরে পুলিশের অভিযানে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শামীম মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। গত ২৩ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের বাজুরবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।আটককৃত শামীম মিয়া ওই এলাকার আবুল বাশার এর ছেলে। সে মুছাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। ফতুল্লায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও যুবলীগ নেতাকে তালাবদ্ধ ফ্ল্যাটের বাথরুম থেকে আটক করেছে। এ সময় তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। গত ২২ জুলাই দিবাগত রাত ১টার দিকে ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর সাহার সিটি মাঠ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অফিসার ইনচার্জ) শরিফুল ইসলাম। ফতুল্লায় বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন (৫৪) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আনোয়ার হোসেন ফতুল্লা থানার শিয়াচর তক্কারমাঠ বড় বাড়ীর মৃত হোসেন সর্দারের ছেলে। আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের মাঝে ফতুল্লায় অগ্নিসংযোগের চেষ্টার সময় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয় ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা। গোপালগঞ্জ ইস্যুকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ঘোষিত হরতাল কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দুই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মূলত, হরতালের সমর্থনে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ানোই তাদের উদ্দেশ্য ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। বন্দরে পুলিশের অভিযানে শহিদুল হাসান মৃধা নামের এক আওয়ামীলীগ নেতাকে আটক করা হয়েছে। গত ১৫ জুলাই দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আটককৃত শহিদুল হাসান মৃধা হলেন সোনাকান্দা পানির ট্যাঙ্কি এলাকার মৃত শফিউদ্দিন মৃধার ছেলে। সে বন্দরে ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাবেক যুব ক্রীয়া সম্পাদক। ফতুল্লায় বৈষম্য বিরোধী মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ফতুল্লা থানার কাশিপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও কাশিপুর দক্ষিণ গোয়ালবন্দের মৃত নুর মোহাম্মদ নুরার পুত্র মোঃ ছানাউল্লাহ এবং ফতুল্লা থানার পূর্ব সস্তাপুরের লোকমান গাজীর পুত্র নাছির গাজী(৩৫)। গ্রেফতারকৃত নাছির গাজী নিষিদ্ধ সংগঠন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি টিপু সুলতানের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানা গেছে।