গ্যাড়াকলে বন্ধী না’গঞ্জ আ’লীগ!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ঢাকার পাশ্ববর্তী শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা নানা কারনেই দেশব্যাপি আলোচিত। দেশের রাজধানী ঢাকা হলেও পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারে দেশের মানুষের আগ্রহ একটু বেশিই। নারায়ণগঞ্জের যে কোন বিষয়ে চুন থেকে পান খসলেই দেশব্যাপি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয় ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ। এমনকি জনশ্রুতি রয়েছে, দেশের রাজনীতির পট পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। যে কোন দলেরই আন্দোলন সংগ্রামের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনের ঘন্টা বাজলে সেই ঘন্টার আওয়াজ দেশব্যাপি ছড়িয়ে পরে। অথচ দীর্ঘদীন ক্ষমতায় বহাল থাকা আলোচিত জেলা এই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে চলে আসছে দলীয় কোন্দল। কোন ভাবেই ক্ষমতাসীনদলের নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে কোন্দল নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে কোন্দল নিরসনে একাধিকবার দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে ঘনিয়ে আসা দ্বাদশ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে জেলায় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের মাঝে ঐক্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হলে এর প্রভাব নির্বাচনেতো পড়বেই সে সাথে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবির শংকা প্রকাশ করছেন দলের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ। সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তৈরী হওয়া মেরুকরণের কারনে মনোবল হারাচ্ছে দলের নেতা-কর্মীরা এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আলোচিত এ জেলায় আওয়মীলীগের শুরু থেকে ওসমান পরিবার ও চূনকা পরিবারের মধ্যেকার দ্বন্ধ দলকে গ্যাড়াকলের মধ্যে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন দলটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নাসিক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠে আওয়ামীলীগের দু-মেরুর দ্বন্ধের বিষয়টি। সম্প্রতি, জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী সাংসদ শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে উদ্দেশ্য প্রনোদিত বক্তব্য দেওয়ার পর থেকে দ্বন্ধের বিষয়টি আবারো প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দ্বাদশ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে ক্ষমতাসীনদলে প্রভাবশালী দুই পরিবারের এমন দ্বন্ধ অব্যাহত থাকলে এর প্রভাব দলে পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিকে বিরোধী দলের উত্তাপে রাজনৈতিক মাঠ সরগরম না থাকলেও উত্তর ও দক্ষিন মেরুর রাজনৈতিক গ্যাড়াকলে আটকে গেছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের ভবিষৎ। ঘটনাসূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরু বিভাজনের সৃষ্টি প্রয়াত দুই নেতা আলী আহমদ চুনকা ও একেএম সামসুজ্জোহার সময় থেকে। বংশ পরম্পরায় সেই বিরোধ লালন করে এসেছেন ডা: সেলিনা হায়াত আইভী ও একেএম শামীম ওসমান। এই বিরোধের সূত্র ধরে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে গড়ে উঠেছে দুইটি বলয়। শামীম ওসমান নিয়ন্ত্রিত উত্তর মেরুর ও আইভীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ মেরু। আইভীর দক্ষিণ মেরুর তুলনায় শক্তিশালী অবস্থানে ছিলো শামীম ওসমানের উত্তর মেরু। উত্তর মেরুতে একই পরিবার থেকে দুই ভাই (সদর-বন্দর আসনে সেলিম ওসমান ও ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে শামীম ওসমান) সংসদ সদস্য হওয়ায় তাদের এই শক্তি দক্ষিণ মেরুর তুলনায় ছিলো অনেক বেশী। দলটির অঙ্গসংগঠন গুলোর কমিটিতেও রয়েছে আলাদা আলাদা দুটি বলয়। যার একটি উত্তর মেরুর ওসমান পরিবার বলয়, অন্যটি চূনকা পরিবারে দক্ষিন মেরুর বলয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ঘনিষ্ট জন হলেও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো: বাদল শামীম ওসমানের বন্ধু। যার লবিং ধরেই ছাত্র রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন ভিপি বাদল। অন্যদিকে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কখন কোন পক্ষ্যে থাকেন সেটা স্বয়ং তিনি নিজেও জানেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে কিছুটা দূরত্ব থাকলেও সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা শামীম ওসমানের বন্ধু এটা নারায়ণগঞ্জের সকল মানুষই জানেন। অন্যদিকে যুবলীগ ঘিরেও রয়েছে পরিবারতন্ত্র রাজনীতি। যেখানে সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া এমপি শামীম পন্থী হলেও সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জল আইভীর আপন ছোট ভাই। তবে, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগকে ওসমান বলয়ই দখল করেছেন বলে জানা যায়। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন যুবলীগ নেতা সারোয়ার হোসেনের ভাগিনা হিসাবেই রাজনীতের সঙ্গে জড়িত। আর সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের পুরোপুরি নিজেদের কন্ট্রোলে রেখেছেন ওসমান পরিবার। এদিকে, এই দুই মেরুর দ্বন্ধ এখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে নতুন প্রজন্মের উপর প্রভাব ফেলছে। পরিবারতন্ত্র রাজনীতিতে গ্যাড়াকলে পড়তে হয়েছে সাধারণ কর্মীদের। নিজেদের অধিকার আদায়, কর্মসূচি পালনেও এক না হয়ে আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
