
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৭ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত চার দিনে নারায়ণগঞ্জে একপ্রকার ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই সময়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভরতদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট নিক্ষেপে অন্তত সতের জন নিহতসহ আহত হয়েছেন চার শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। অনেকে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। আন্দোলনের সময়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) জেলা কার্যালয়, পাসপোর্ট অফিস, সিটি করপোরেশনের নগর ভবন, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, পুলিশ বক্স, পুলিশ ফাঁড়ি, পুলিশের গাড়ি, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেড ও আওয়ামীলীগ কার্যালয়সহ ছোটবড় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ও কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি ২৬টি বাস ও আরও ২০টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এখনও জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষতচিহ্ন দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসপত্র। এমনকি পুলিশ বহনকারী যানবাহনকেও ছাড় দেয়নি দুবৃত্তরা। পুলিশ বলছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে জেলাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় নাশকতার আট মামলায় ১৯৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১৮ জুলাই বেলা ১১টার দিকে শহরের চাষাঢ়া এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেন। দুপুরে পুলিশের একাধিক টিম বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এভাবে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। বিকালে বঙ্গবন্ধু সড়ক, নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক ও পুরাতন সড়কে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের আরেকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দিনব্যাপী সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হন। এমনকি আন্দোলন চলাকালে শহরের তিনটি মার্কেট, পুলিশ বক্স, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। রাতে সাইনবোর্ড এলাকায় পিবিআইয়ের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। একইভাবে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এতে পুরো জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর শহরের ডিআইটি এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তাদের প্রতিহত করতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামেন। তিন দফায় তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গেও আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। সন্ধ্যায় ডিআইটি এলাকার হাতিল ফার্নিচারের শোরুম, গাজছুল আজম সিটি মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে মালামাল লুট করা হয়। সেইসঙ্গে নায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেড, নম পার্ক, যুব উন্নয়ন কার্যালয়, এসবি ফ্যাশন গার্মেন্টসসহ অন্তত ২০-২৫টি স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়। শীতল পরিবহনের ২৬টি বাসসহ ছোটবড় আরও ২০টি যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার, সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের আটটি পিকআপভ্যান, দুটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাতে সড়কের পাশের বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই জাতির পিতার ম্যুরাল ভাঙচুর করে দুবৃত্তরা। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলাতেও কারফিউ জারি করা হয়। দুপুরে কারফিউ ভেঙে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল ও চিটাগাংরোড এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে শিমরাইল এলাকায় ইব্রাহিম খলিল মার্কেটে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। ওই ভবনের সাততলায় অবস্থিত হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে ৩৭ পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র্যাব। এদিন যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত চার জন নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ দেড় শতাধিক আহত হন। ২১ জুলাই সকালেও কারফিউ ভেঙে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও চিটাগাংরোড এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। এদিন রাতে সেনাবাহিনীর টহল শুরু হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ২২ জুলাই সকালে সাইনবোর্ড এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হলে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তবে এদিন রাস্তায় দাঁড়াতে পারেননি তারা। যৌথ বাহিনীর অভিযানে শক্ত অবস্থানের কারণে পিছু হটে তারা। বিকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরপর শনিবার শিমরাইল এলাকায় ইব্রাহিম খলিল মার্কেটে আগুন দেওয়া ভবনটিতে তল্লাশি চালিয়ে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। আগুনে পুড়ে সেদিন তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শহরের খানপুর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক চিকিৎসক মো. আবুল বাশার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে চলা সংঘর্ষে মারা যাওয়া দুজনের লাশ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া ১৫৯ জন আহত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জেলাজুড়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সেসব ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ছয়টি এবং নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশন একটি করে মামলা করেছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ১৯৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও অভিযান অব্যাহত আছে। একপ্রকার যুদ্ধ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছিল। একটা পর্যায়ে দেখতে পেয়েছি, আন্দোলন ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে নেই। স্বাধীনতাবিরোধীরা আন্দোলনে ঢুকে নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকাÐ চালায়। আমরা সরকারি অফিস ও জানমাল রক্ষার্থে নাশকতাকারীদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমাদের একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে ঘটনায় ফতুল্লা থানায় মামলা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা আগুনে পুড়ে গেছে। সবকিছু হিসাব করলে বোঝা যাবে, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ই-২ পি-৪ কলাম-২
হাবিবুর রহমান বাদল ষোল বছরের স্বৈরশাসনে দেশকে পঙ্গু করে শত দমন পীড়ন আর নির্বিচারে গুলি বর্ষন করে দেড় হাজারের বেশী ছাত্র-জনতাকে হত্যার পরও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা তার গতি রক্ষা করতে পারেনি। গত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ছোট বোন রেহানাসহ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ এতটাই […]
হাবিবুর রহমান বাদল নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনা প্রতিদিন প্রকাশ পাচ্ছে। এনিয়ে সাধারণ নাগরিকরা সরব হয়ে উঠেছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা […]
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট: আড়াইহাজার থানায় দায়ের করা উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি বাবুল মিয়া হত্যা মামলা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাবুল মিয়ার মৃত্যু হলেও দুই মাস পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে ২২ আগস্ট হত্যা মামলা করেছেন দুপ্তারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন। এই […]
প্রকাশক ও সম্পাদক
হাবিবুর রহমান বাদল
০১৯১১০১০৪৯০
hr.badal@yahoo.com
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়
৬. সনাতন পাল লেন
(হোসিয়ারী ক্লাব ভবন, তৃতীয় তলা)
৭৬৪২১২১
dbartanews@gmail.com
রেজি: ডিএ নং-২০৯৯