আজ রবিবার | ৮ জুন ২০২৫ | ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ১১ জিলহজ ১৪৪৬ | সকাল ৬:৪৯

“একরাত্রি ও ন’ মাসের যুদ্ধ”

ডান্ডিবার্তা | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৭:০৬ অপরাহ্ণ

শিরিনা আক্তার রীনা

(গত সংখ্যার গল্পের বাকি অংশ)

জীবনের চরম সত্যিগুলি নীলা বলতে পারছে আকাশকে।কত কি ঘটে গেছে এই নয় মাসে তার জীবনে বলতে গিয়ে বারবার ফিরে আসছে।গলার স্বর চেপে আসছে মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে আকাশকে হারানোর। যদিও আকাশ নীলাকে বুক থেকে আলাদা করবে না তারপর ও নীলার ভয় হচ্ছে। আকাশ আলতো করে মাথার চুল নাড়ছে আর কপালে চুমু খেয়ে জানতে চাইছে নীলার অন্ধকারে থাকা দিনগুলোর কথা। তুমিআমাকে সব বলো। তোমার মন হালকা হবে স্বস্তি পাবে।আমি তোমার সঙ্গে আছ আমি। কথা গুলো বলে আবার ও বুকে জড়িয়ে নিল আকাশ তার নীলাকে।এবার মুখ খুললো ধর্ষিতা, লাঞ্ছিতা, আর মানুষরুপি কুকুরের কামড়ানোর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত নীলা।জানো আকাশ, আমাদের “একরাত্রি ” উদযাপন উৎসবের সব আয়োজন ফেলে তুমি যখন দেশের জন্য যুদ্ধে চলে গেলে।আমি তখন একাকি অসহায় বাবা,মা,ভাই -বোন সবাই আতঙ্কিত  আমাকে নিয়ে কারণ আমি তখন শরীর স্বাস্থ্যে কানায় কানায় ভরপুর যৌবনা।কখন কি ঘটে কি হয় এই আতঙ্কে কাটে সারাক্ষণ। একদিন গভীর রাতে আমাদের বাড়িতে কারা যেন এল।মচমচ জুতোর শব্দ আর ফিসফিস করে কথা বলছে।মা, বাবা আমাদের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকতে বললো।ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে আমি লুকিয়ে  রইলাম।দরজায় কারা যেন বারবার কড়া নাড়ছে আর আঘাত করছে।এক সময় দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে গেলো অস্ত্রসহ কতগুলি অচেনা মানুষ সঙ্গে ছিল খুব চেনা আমাদের  দবির চাচা।দবির চাচাকে দেখে বাবা বললো তুই তাহলে ওদের নিয়ে আসলি? কেন রে দবির তুই না আমার আপন চাচাতো ভাই। দবির চাচা কোন কথা বললো না।শুধু ইশারা দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিলো।টেনে হেঁচড়ে খাটের তলা থেকে বের করে আনল আমাদের ভাই বোনকে।বাবা মায়ের সামনে আমার শরীরে হাত বুলাতে লাগলো পাকিস্তানি নরপিশাচরা। বাবা বাঁধা দিতে গেলে দবির চাচা ওদের বললো ‘খতম কর দো শালা কো’।আমি এর অর্থ বুঝতে পারি নাই।পরক্ষণেই দেখি বাবা, মা,আর ছোট ভাই বোন দুটোকে একসঙ্গে গুলি করে মাটিতে ফেলে দিল।আমাকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেলো ওদের ক্যাম্পে। তারপর শুরু হলো তোমার নীলার শরীর নিয়ে খেলা।কত যে অত্যাচার আর নির্যাতন করেছে আমি বলে বুঝাতে পারব না আকাশ। শরীরের এমন কোন জায়গা  নেই ওরা আঘাত করেনি আমাকে।কুকুরের মত কামড়ে রক্তাক্ত করেছে আমার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কত হাতে ধরেছি পায়ে পড়েছি কোন ছাড় পাইনি।শুনলে অবাক হবে! দবির চাচা ও আমার এই শরীর ভোগ করেছে। আমি নির্বাক হয়ে শুধু চেয়ে থেকেছি আর দেখেছি বস্ত্রহীন একটা শরীর আর তাতে হাজারো কামড়ের চিহ্ন। রক্ত গড়িয়ে পরছে কোন কোন স্হান থেকে। তোমার নীলা নিমিষেই ধর্ষিতা আর পাকবাহিনীর লালসার খোরাক হয়ে গেল।দীর্ঘ ন’মাস ওরা আমাকে ভোগ করেছে ওদের ইচ্ছে মত।কখনো এই ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে আবার কখনো রাস্তায় দবির চাচা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।আমি পাথর হয়ে গেছি আকাশ।যুদ্ধ শেষে সব ধর্ষিতাতে ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এলো মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে আমিও এলাম । কিন্তু কেউ  তো ভালো চোখে দেখছে না আমাকে।ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আর বলছে আমি নষ্টা। আমার তো কেউ নেই  কোথায় যাবো কে আগলে রাখবে এই নোংরা আর নষ্টা আমাকে।তোমার ও কোন সন্ধান পাইনি যুদ্ধে বেঁচে আছো কি না মরে গেছো তাও জানিনা।তবে মনকে শত কষ্টের মধ্যে ও বুঝিয়েছি আমি আকাশের নীলা।আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার প্রেয়সী। আকাশের দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে নীলার মুখে। আদরে আদরে ভরে দিতে মন চাইছে নীলাকে।মুক্তিযোদ্ধা নিজের সমস্ত দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে  নীলাকে বুকে জড়িয়ে শুধু এইটুকুই বললো আমি বীরাঙ্গনা নীলার আকাশ  এটাই আমার গর্ব।আমার নীলা দেশের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। পৃথিবীর কাউকে তোমার দরকার নাই নীলা তুমি থাকবে তোমার আকাশের বুকে। মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়বে এই বুকেতে।আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো আর হারিয়ে যাবো আমাদের অনেক কাঙ্ক্ষিত “একরাত্রি ” উদযাপনে।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা