না’গঞ্জে বইছে ভোটের হাওয়া
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের জন্য ৬ হাজার ব্যালট বাক্স এসেছে। শুক্রবার নির্বাচন ভবন ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ভোটের এ উপকরণ মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান, জেলার প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য ২০টি করে মনোনয়নপত্র এসেছে। প্রয়োজনে আরো দেওয়া যাবে। পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তাছাড়া কোনো প্রার্থী চাইলে অনলাইনে মনোনয়নপত্র পূরণ করে জমা দিতে পারবেন। নির্বাচনের জন্য প্রায় ১৩ ধরনের উপকরণ পাঠানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যালট বাক্স, ব্যালট বাক্সের ঢাকনা ও লক, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ধরনের সিল, স্ট্যাম্প, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কাগজ, প্যাড ও রশি প্রভৃতি। এগুলো মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্রও পৌঁছে গেছে মাঠ পর্যায়ে। আর ব্যালট পেপার ছাপানো হবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর। এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ১৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) প্যানেল তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ১৫ হাজার কর্মকর্তা। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ হাজার কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি করা হলেও কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন ১৫ হাজার ৬৬৬ জন। নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের সংসদীয় আসনে মোট ৭৮২টি ভোট কেন্দ্রে ৪ হাজার ৯৮৩টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে। জেলা নির্বাচন অফিসের হিসেব অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন প্রিসাইডিং অফিসার, প্রতিটি বুথে ১ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রতিটি বুথে ২ জন করে পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি বুথে একটি করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স লাগবে এবং প্রতি কেন্দ্রে একটি করে অতিরিক্ত স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স থাকবে। এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি এক সঙ্গে চলছে। কমিশন থেকে যখন যেটা চাওয়া হচ্ছে- আমরা সেই বিষয়টি একেবারে ফাইনাল করে ফেলছি। এর মধ্যে আমাদের সংসদীয় আসন অনুযায়ী ভোট কেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা চূড়ান্ত করে কমিশনে জমা দিয়েছি। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী মোট ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার ৫ শতাংশ বাড়তি হিসেব করে প্যানেল তৈরি করা হয়। ৫ শতাংশ অতিরিক্ত হিসেবে ১৬ হাজার ৫১৮ জনের প্যানেল তৈরি করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বেশি লাগবে। সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৫০ হাজার ৬৯১ জন। গত ৫ বছরে ভোটার বেড়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯ জন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। খসড়া তালিকায় নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৮২টি। ভোট কক্ষ ৪ হাজার ৯৮৩টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ভোট কেন্দ্র ১২১টি ও ভোট কক্ষ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭টি। জেলা নির্বাচন অফিস জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের মোট পাঁচটি আসনে সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৫০ হাজার ৬৯১ জন। আসন ভিত্তিক ভোটার তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব থেকে বেশি ভোটার রয়েছে ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে। এ আসনের ভোটার ৬ লাখ ৯৪ হাজার ২০৭ জন। এবার ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে ভোটার বেড়েছে ৬১ হাজার ৫৮৫ জন। ভোট কেন্দ্র ২৩১টি ও বুথ ১ হাজার ৫৬২টি। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম ভোটারের আসন আড়াইহাজার। এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৭৯ জন। ভোট কেন্দ্র ১১৭টি ও বুথ ৭৪১টি। গতবার এ আসনে ভোটার ছিল ২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৭ জন। এবার নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ভোটার বেড়েছে ৪৭ হাজার ৭৯৮ জন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ১২ জন। গতবার এ আসনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯০ জন। ভোট কেন্দ্র ১২৮টি ও বুথ ৮১৭টি। এবার ভোটার বেড়েছে ৩৬ হাজার ২২২ জন। সোনারগাঁ আসনে এবার ভোটার হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭২০ জন। ভোট কেন্দ্র ১৩১টি ও বুথ ৭৭১টি। গতবার ভোটার ছিল ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৩৭ জন। ভোটার বেড়েছে ৪০ হাজার ৮৩১ জন। সদর-বন্দর আসনে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৬ হাজার ২৯৯ জন। ভোট কেন্দ্র ১৭৫টি ও বুথ ১ হাজার ৯২টি। গতবার ভোটার ছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৬ জন। এবার এ আসনে ভোটার বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৮৩ জন। এদিকে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনের জয় পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে নতুন ও তরুণ ভোটাররা। অনেক নতুন ভোটার জীবনের প্রথম ভোটাধিকার এখনো প্রয়োগ করতে পারেননি। গত ৫ বছরে এ জেলায় নতুন ভোটার হয়েছেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯ জন। নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ আরো জানান, এবার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নতুন ভোটার বেড়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯ জন। ভোট কেন্দ্র বেড়েছে ৭৮২টি। নতুন ভোটারদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৯ জন ও নারী ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৫ জন। নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার আহŸান জানান। এবার নতুন ভোটার হয়েছে রূপগঞ্জ আসনে ৩৬ হাজার ২২২ জন। আড়াইহাজার আসনে ৪৭ হাজার ৭৯৮ জন। সোনারগাঁ আসনে ৪০ হাজার ৮৩১ জন। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে ৬১ হাজার ৫৮৫ জন। সদর-বন্দর আসনে ৫০ হাজার ৬৮৩ জন নতুন ভোটার হয়েছেন।