হতাশায় বিএনপির কর্মীরা!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট একদফা দাবিতে সারাদেশে কর্মসূচি পালন করে আসছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। এদিকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা নারায়নগঞ্জ বিএনপিও আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত দলটি নয় দফায় অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু দফায় দফায় ঘোষিত এই কর্মসূচির শুরুর দিকে যতটা কার্যকরভাবে পালিত হতে দেখা যাচ্ছিলো, শেষ দু’দফায় তেমনটা দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরও এই কর্মসূচি কেন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি?- এমন প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট দশবার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তাদের এই কর্মসূচির প্রথমদিকে জেলায় যান চলাচল কম দেখা যাচ্ছিলো। তখন দূরপাল্লার বাস যেমন বন্ধ ছিল, তেমন দোকান-পাটও কম খোলা হচ্ছিলো। কিন্তু শেষ কয়েক দফায়, বিশেষ করে গত মধ্য নভেম্বরের পর থেকেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরের হরতাল-অবরোধের প্রভাব কমে আসতে থাকে। এমনকি সোমবার যখন নবম দফায় বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলছে, তখনও সারাদেশে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যার পর দু-একটি যানবাহনে আগুন লাগার খবর শোনা গেলেও অবরোধ উপেক্ষা করেই সোমবার স্বাভাবিকভাবেই দূরপাল্লার যান চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া দোকান-পাট-শপিংমলও স্বাভাবিক দিনের মতই খোলা রয়েছে। তবে বিএনপি অবশ্য মনে করছে, তাদের ঘোষিত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি সারাদেশে সফলভাবেই পালিত হচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, “র্যাব-পুলিশকে ব্যবহার করে সরকার আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে এবং সারা দেশে আমাদের কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হচ্ছে। ”কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের নেতা-কর্মীরা যেভাবে মাঠে থেকে আমাদের কর্মসূচি সফল করছেন, সেটিই আমাদের শক্তির জায়গা। নেতাকর্মীদের এই শ্রম এবং ত্যাগ বৃথা যাবে না,” তিনি বলেন। এদিকে মাঠে থেকে নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে কর্মসূচি পালন করছে বলে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাস্তবে তাদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি। বরং গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। ফলে হরতাল-অবরোধ এখন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, “সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই আমরা হরতাল-অবরোধ পালন করে আসছি। আমাদের এসব কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে জানানো এবং এটা বোঝানো যে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিকল্প নেই। এই বার্তাটা আমরা গণমানুষের কাছে সফলভাবে পৌঁছে দিতে পারছি বলেই মনে করি,” তিনি বলেন। এদিকে, এক মাসের বেশি সময় ধরে একই কর্মসূচি দেওয়াকে বিএনপির নের্তৃত্বের দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেফতার হয়েছেন। দলটির গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ নেতাই এখন জেলে। ফলে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শীর্ষ নেতারা বাইরে থাকলে হয়তো সবাই মিলে নতুন কর্মসূচি ঠিক করতে পারতো।” টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বিএনপির জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও দলটি একটানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে সেটি এখন থেকে আট বছরেরও বেশি সময় আগে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা নয় মাস হরতাল-অবরোধ পালন করেছিল দলটি। ঐ হরতাল-অবরোধ এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। একের পর এক বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তখনও একটানা হরতাল-অবরোধ চলতে থাকার এক পর্যায়ে কর্মসূচিগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফলে এক পর্যায়ে সেই কর্মসূচি স্থগিত করে দেয় দলটি।