না’গঞ্জে উৎকন্ঠার নির্বাচন সম্পন্ন
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল এবং জাল ভোটের অভিযোগের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধারনার চেয়েও কম ভোটারের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয়েছে বিকেল চারটায়। ভোটের চিত্রে দেখা গেছে, জেলার প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম। এদিকে, ভোট শুরুর কিছুক্ষন পরই রূপগঞ্জ আসনে নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর ¯েøাগান দিয়ে কেন্দ্র দখলে নিতে হামলা করেছেন যুবলীগ নেতা কাউসার প্রধান ও তার লোকজন। আর তাদের বাধা দিতে গিয়ে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভুঁইয়ার তিনজন কর্মী আহত হয়েছেন। উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড গনবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৮ টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তার দশ থেকে পনেরো মিনিট পরই আতলাপুর বাজার থেকে গাজীর ¯েøাগান দিয়ে ভোলাব ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড গনবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় বাধা দিলে স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা করে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৫৬নং রামচন্দ্রদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে একই অবস্থা দেখা গেছে আড়াইহাজার আসানে ভোট চলাকালে দুপুরে ভোটকেন্দ্রে নৌকা ও লাঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর সেখানে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুরে লোটন কেন্দ্রে গেলে সেখানে নৌকার সমর্থকরা কেন্দ্রে জড়ো হয়ে ¯েøাগান দেয়। এসময় লাঙ্গল সমর্থকরাও ¯েøাগান শুরু করলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। লোটন জানান, কেন্দ্র দখল করে নৌকার লোকজন সীল মারার সময় আমরা বাধা দিলে তারা হামলা করে। পুলিশ আমাদের দিকে গুলি করে। পরে কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়। আমাদের ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তবে, নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি আসনের মধ্যে সোনারগাঁ, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এবং সদর-বন্দর এ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। এ আসন গুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা গেলেও সুষ্টুভাবে ভোটগ্রহন হয়েছে এবং কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাংডিং অফিসাররা প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল জানিয়ে দেন। ভোটের পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, আমি নির্বাচনের পরিবেশ ভালো দেখছি। শেখ হাসিনা এখন আওয়ামী লীগের সম্পদ না। তিনি বাংলাদেশের সম্পদ। কারণ ওদের হাতে গেলে দেশ শেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের আকাশে শকুন উড়ছে। এ শকুন আন্তর্জাতিক শকুন। ওদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে ৭১ সালের পরাজিত শক্তি। গতকাল রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুলে সপরিবারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমার এলাকায় কোথায় কী ভোট হচ্ছে আমি জানি না। সকাল থেকে এবাদতে ছিলাম। তারপর বাবা, মা ও ভাইয়ের কবর জিয়ারত করেছি। আমরা কমিটমেন্ট করেছিলাম উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেব। আমি আমার নাতিকে নিয়ে ভোট দিতে এসেছি। এ ভোট ওদের ভবিষ্যতের জন্য। ওদের ভবিষ্যৎ শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তাকে হত্যার পর আমাদের ভবিষ্যৎ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। এখনও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতকে চূর্ণবিচূর্ণ করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, আমি ওদের রাজনৈতিক দল বলি না। ওরা আগুন সন্ত্রাসীদের দল। গতকালও আগুন দিয়ে চারজনকে পুড়িয়ে দিয়েছে। এদের রাজনৈতিক দল বললে রাজনীতিবিদদের অপমান হবে। গত শনিবার ফতুল্লায় একটি কেন্দ্রে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল। এলাকার সাধারণ মানুষ ধাওয়া দিয়ে একজনকে ধরে পুলিশে দেয়। আমি দেখেছি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিচ্ছে মানুষ। মহিলারাও আছে। তবে কিছুটাতো প্রভাব পড়েছেই ট্রেনে আগুন দেওয়ায়, তারপর ¯েøাগান দিয়েছে, ভোটকেন্দ্রে আসবে যারা লাশ হয়ে ফিরবে তারা। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ একটু ভয় পাবেই। তবে সর্ষের ভেতর ভুত আছে। যারা নির্বাচন পরিচালনা করছে তাদের ভেতরও ভুত আছে। তারা চাইছে ভোটটা ঘুরাতে। আমি আমার এলাকায় এমনটা খবর পেয়েছি। শামীম ওসমান বলেন, একটি কেন্দ্রে খবর পেলাম সেখানে ভোটারদের বের করে দেওয়া হচ্ছে সঙ্গে মোবাইল থাকার কারণে মোবাইল তো এখন সবার কাছেই থাকে। পরে আমি রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েছি। এখন ভোট হচ্ছে। তবে এ সময়ে দুই তিন হাজার ভোটার কিন্তু ঘুরে চলে গেছে। কিছু কিছু সেন্টারে লোকজন আছেন। যারা অন্য কারও পারপাস সার্ভ করার চেষ্টা করছে। জেলা নির্বাচন অফিসার কাজী মোঃ ইস্তাফিজুল হক আকন্দ জানান, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভাবে দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যে এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনার খবরে পেয়েছি তাৎক্ষনিক আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানান, ভোট গণনা চলছে। আশা করি জনগনের নির্বাচিত বিজয়ী প্রার্থীদের নাম আমরা দ্রæত সময়ের মধ্যে ঘোষনা করতে পারবো।