ফের সক্রিয় জামাত-শিবির!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির সাংগঠনিক কর্মকাÐ সচল রেখেছে বিভিন্ন মাধ্যমে। চলছে নিয়মিত বৈঠকও। দীর্ঘ দিন তাদের তৎপরতা চোখে না পড়লেও ফের তারা সত্রিয় হতে শুরু করেছে। নারায়ণগঞ্জ, বন্দর, সোনারগাঁসহ জেলোর সর্বত্র এখন তাদের পদচারনা লক্ষ করা যায়। সাংগঠনিক অফিসগুলো বন্ধ থাকলেও কোচিং সেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকুরিসহ নানাভাবে তারা নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে আসছে। ভেতরে ভেতরে চলছে কার্যক্রম। বিএনপির ভেতরে জামাতকে ছাড়ার চাপ থাকলেও এখনো তারা ছাড়ছে না। জামাত মনে করছে বিএনপি জোট ছাড়া করলেও তারা নিজেরাই কিছু করতে চায়। এর মধ্যে জামাত ও শিবিরের অনেকেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটে ঢুকে গেছে। অনেক স্থানে জামাত নেতার সন্তানরা পরিচয় গোপন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠনের কলকাঠি নাড়ছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের খাতায় আত্মগোপনে থাকা কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলার নেতারা নিয়মিত বৈঠক করছেন। হচ্ছে শূরা কমিটির বৈঠক, সদস্য সম্মেলন ও রুকন সম্মেলন। বিভিন্ন দিবসেও তারা কর্মসূচি পালন করছে। জেলার সর্বত্র তাদের নেটওয়ার্ক ও কার্যক্রম চলছে আগের মতোই, তবে তা হচ্ছে ভার্চুয়াল ও প্রযুক্তির সহায়তায়। সূত্রমতে, ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতার যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়- তাতে বিএনপির জোট সঙ্গী জামায়াতের অপতৎপরতা নতুন করে আলোচনায় আসে। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে আগুন ধরিয়ে এবং রেলপথে নাশকতামূলক কর্মকাÐ ঘটিয়ে সরকারি-বেসরকারি সম্পদের বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়। আগুনে পুড়ে মারা যায় অনেক মানুষ। এসব ঘটনায় দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় বিএনপির পাশাপাশি জামাত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মী আটক হয়। তবুও দমাতে পারেনি জামাত-শিবির। কৌশল পাল্টে চলছে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জে জামাতের এক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামাতের পথ কখনো মসৃণ ছিল না। বাধা-বিপত্তি সঙ্গে নিয়েই জামাতকে চলতে হয়েছে। তবে, জামাতকে নিয়ে অনেক মিথ্যা অপবাদও দেয়া হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, জামাত কিংবা ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেউই দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল না। দেশের প্রতিটি সাধারন নাগরিকের মতই আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম রয়েছে। অনেক কিছুই অন্যায় ভাবে একটি মহল জামাতের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অব্যশই একটা সময় আসবে সবকিছুই পরিষ্কার হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এদিকে, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামাত নেতাদের গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও অন্যান্য নথি উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জামাত তাদের নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোয় মনোযোগ দিয়েছে। তরুণদের টার্গেট করে সেখানে চাকরি দেয়া হচ্ছে। পরে বানানো হচ্ছে কর্মী। একাধিক রুকন দাবি করেছেন, বিএনপি যদি জামাতের সঙ্গ ছাড়ে তবে তারা নিজেদের মতো করে রাজনীতি করবেন। ভোটে মার্কা কোনো ফ্যাক্টর নয় দাবি করে তারা জানান, সারাদেশে তাদের ভোট আছে। তারা বসে নেই, তাদের কাজের ধরন আলাদা। নিজেদের মতো করে তারা কাজ করছেন। সংগঠনে যার যেভাবে যোগাযোগ ও অংশগ্রহণ করা দরকার তিনি সেভাবেই কাজ করছেন। তারা কোনোভাবেই হতাশ নন; নিজেদের লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন বলেও জানান একাধিক জেলার রুকন। গোয়েন্দা সূত্র মতে, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নিজেদের লোকজন ঢোকাতে অভিনব পন্থা নিয়েছে জামাত। এ জন্য বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বনে যাচ্ছেন শিবিরের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী। দল প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ ২০৪১ সালকে সামনে রেখে প্রশাসনের ২৫টি সেক্টরে অন্তত দুই লাখ কর্মী ঢোকানোর লক্ষ্য নিয়েছে তারা। আর তা বাস্তবায়নে তৎপর সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নিজ কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে জামাত। একই সঙ্গে দেশ ও প্রবাসে থাকা জামাত-শিবির কর্মীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে শক্তিশালী সাইবার টিম। এ টিম রাজনৈতিক গুজব ছড়ানোসহ সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এসব তৎপরতা চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটি। ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, জামাত তাদের নেতাকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন করাচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বানাচ্ছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল ও ইউনিটে নিজেদের কর্মী ঢুকাচ্ছে।