নির্বাচনের পর নিরবতায় বিএনপি!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দেশের অন্যান্য জেলার ন্যায় নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে ভেবেছিলেন বিএনপির আন্দোলন এবং বিদেশিদের চাপে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার যথারীতি নির্বাচন সম্পন্ন করার পর তাদের সেই ভুল ভেঙেছে। মামলা, বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাশি, দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা, গ্রেপ্তার, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন, আয়ের পথ বন্ধ হওয়াসহ নানা প্রতিক‚ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে তারা। সবমিলিয়ে এখন নির্বাচনের পর চুপসে গেছেন বিএনপির কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, তারা ভেবেছিলেন বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল ভোট বর্জন করেছে এবং পশ্চিমা কয়েকটি দেশ চাপ দিয়েছে, এ অবস্থায় ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে না। কারও কারও ধারণা ছিল নির্বাচন বাতিল হলে পরে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্বাচন হয়ে গেছে এবং আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করেছে। তাদের ভাষায়, ১৫ বছর তো আন্দোলন করলাম, ফলাফল শূন্য। আর আন্দোলন করে কী হবে? জেলা বিএনপির কর্মীরা বলছেন, আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকের নামে মামলা ও গ্রেপ্তার হয়েছে, অনেকে কারাগারে রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক কর্মী আড়াই মাস ধরে বাড়িছাড়া। দীর্ঘদিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় না। অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। সংসার চালাতে পরিবারের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা রাজনীতি ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের ভাষ্য, পালিয়ে থাকা নেতাকর্মীরা এলাকায় ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চান। নেতাকর্মীদের এমন ক্ষোভের কারণ হিসেবে জানা যায়, জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজপথে নামেনি। জেলা বিএনপির অধিকাংশ নেতৃবৃন্দই আন্দোলন চালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। যারাই বাহিরে আছেন আন্দোলন করাটা তাদের জন্য চ্যালেন্জে পরিনত হয়েছে। একদিকে গ্রেপ্তার আতংক অন্যদিকে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে সংশয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে দলের তৃণমূল। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের পর থেকে এ পর্যন্ত জেলার সাতটি থানায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ৩৬০ জন নেতাকর্মী। এরমধ্যে জামিন পেয়েছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন। বাকি প্রায় ৩০০ জন এখনও কারাগারে রয়েছে। এছাড়া জেলার ৭টি থানায় অর্ধ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ২৭৫ জন নেতাকর্মীর মধ্যে জামিন পেয়েছে ৭০ থেকে ৮০ জন। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোঁকন বলেন, দলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে এটা ঠিক, তবে তা সাময়িক। তাদের চাঙা করার চেষ্টা চলছে। বিএনপির চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তবে কর্মীদের মধ্যে হতাশার কথা স্বীকার করতে রাজি নয় মহানগর বিএনপির আহŸায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খাঁন। তিনি বলেন, শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হলে আন্দোলন ব্যাহত হতো। সে কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী তারা আড়ালে থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে সব সময় সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ থাকে। সে কারণে নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থেকে দলীয় নির্দেশনা পালন করে আসছে।জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, নেতাকর্মীদের কারও মধ্যে হতাশা নেই। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে এলাকায় ফিরছে। কেউ কেউ জামিনের আবেদন করছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।