না’গঞ্জের রাজনীতির এপিঠ ওপিঠ
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট নবম, দশম, একাদশ এবং সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মিলিয়ে টানা চারবার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আর ভোট ব্যবস্থা, গণতন্ত্র নিয়ে নানান প্রশ্নের মধ্যদিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবারের নির্বাচনেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভাও গঠন হয়েছে এবং সরকারকে অভিবাদন জানাচ্ছে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। অন্যদিকে, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর দাবি- ভোট বর্জনে জনগণ সাড়া দিয়েছে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফের আন্দোলনে নামবে জনগণ। জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে বলে মনে করছেন তারা। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের দাবি একতরফা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার গঠন করলেও নানান কারণে বেশিদিন টিকবে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধীরা আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, সামনের দিনগুলোতে সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তেমনটি দেখছেন না আওয়ামী লীগপন্থিরা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট কাস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি বিএনপি নেতাদের অবাক করেছে। তারা প্রশ্ন তুলছেন, প্রথম সাত ঘণ্টায় যেখানে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, সেখানে শেষ ঘণ্টায় কীভাবে এত ভোট পড়লো? সই ছাড়াই ফলাফল শিট, ভোটের অস্বাভাবিক হারসহ নানান বিষয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বলে দাবি তাদের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছিল বিএনপি। তবে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি দেয় দলটি। নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত কালোপতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনারা। ঢাকা এবং সারাদেশে এ কর্মসূচি পালন করেছে দলগুলো। এই অবস্থায় দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, নির্বাচন তো শেষ হলো, এখন সরকারকে চাপে রাখতে কোন ধরনের আন্দোলনে যাবে বিএনপি? আওয়ামী লীগ নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক দল। আগেও তারা ক্ষমতায় ছিল। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ছিল। সঙ্গত কারণে তাদের তো কিছু জনসমর্থন আছে। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে, তারা সরকারকে বিভিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছে। তবে, বিএনপির আন্দোলন কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে হবে সেটি নিয়ে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে, আন্দোলন করে বিএনপি তথা বিরোধীদলগুলো কিছু করতে পারবে না বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগপন্থিরা। নির্বাচন পরবর্তীতে নানান বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা। জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, বিএনপির ভোট বর্জন কর্মসূচিতে জনগণ সাড়া দিয়েছে। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করা হয়েছে তা একটা অভিনব বিষয়। আগের সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি। মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেননি। একটি সংসদ থাকতে আরেকটি সংসদ গঠন, এটা সাংবিধানিক সংকট। যেটি দেশি-বিদেশি বিশ্লেষক, রাজনৈতিক এবং কেউ ভালোভাবে দেখেছেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। যদি ৪০ শতাংশ লোক ভোট দিয়ে থাকেন, তা হলে ৬০ শতাংশ লোক ভোট দেননি। এ সরকার জন সমর্থনহীনভাবে চলতে পারে না। জিনিসপত্রের দাম, ব্যাংক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যেভাবে চলছে তাতে সরকারের ভবিষ্যৎ সুপ্রসন্ন দেখছি না। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, বিএনপি বসে নেই। আমাদের দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম আছে, শরিক দল আছে সবাই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সকল ধরনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি জনগণ সব ক্ষমতার উৎস। সুতরাং জনগণই নির্ধারণ করবে বর্তমান সরকার কতদিন থাকবে। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমি মনে করি বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক। নির্বাচনটা কেমন হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো তুলে ধরেছে। অনেক দেশের পর্যবেক্ষক আসেনি। সরকার ভালো নির্বাচন দেখাতে অনেক কেন্দ্রে দলীয় সমর্থকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। অনেক কেন্দ্র দেখা গেছে, সাংবাদিক ও ডামি বিদেশি পর্যবেক্ষক চলে যাওয়ার পর লাইন ভেঙে সবাই চলে গেছে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আঃ হাই বলেন, আমাদের বন্ধুরা (বিএনপি) বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তা স্বীকার করে নিলে রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে। তিনি বলেন, বিএনপি যতই বলুক তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। যে কোনো কারণেই হোক না কেন তাদের বহু কর্মী ভোট দিয়েছেন। দেশের যে কোনো নির্বাচনে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোট দিয়ে থাকে জনগণ। সেখানে এবারের নির্বাচনে ৩৫ থেকে ৪১ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে উত্তেজনা দেখা যায়। কারণ বিপরীত দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলে পরিস্থিতি তেমনই হবে এটাই স্বাভাবিক। ভোট বর্জনের আহ্বানে জনগণ সাড়া দিয়েছে বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাসে এ রকম বক্তব্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে অবৈধ নির্বাচন করার ব্যবস্থা করে জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার আমলে যত নির্বাচন হয়েছে কোনো নির্বাচন আওয়ামী লীগ বর্জন করেনি।