রাজনীতির কৌশলে বিএনপি ব্যর্থ!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। দলীয় কার্যালয়ে ও প্রেসক্লাবে হাঁকডাক থাকলেও রাজনৈতিক কলাকৌশলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি হেরে যাচ্ছে বারবার। এরই মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। কিন্তু বিএনপি এখনো তাদের রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করতে পারছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, রাজনীতিতে আন্দোলনে বিএনপি এখনো হাঁটছে অনিশ্চিত পথে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তবুও চালিয়ে যাচ্ছে সরকার বিরোধী আন্দেলন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সার্বিক দিক দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি বিএনপি? তাদের মতে, রাজনীতি হলো বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের খেলা। এতে টিকে থাকতে হলে সময়োপযোগী হতে হয়। সক্ষমতা ও সাহসের প্রমাণ দিতে হয়। থাকতে হয় প্রবল আত্মসমালোচনা। কিন্তু দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি দেড় যুগেরও বেশি সময়ে এসবের কোনোটিই করে দেখাতে পারেনি। দলটির রাজনৈতিক সক্ষমতা তলানিতে। সেখান থেকে উঠে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, শত নির্যাতনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপি এখনো শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। দলীয় নেতৃবৃন্দে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে নামলেই ক্ষমতাসীনদলের নেতৃবৃন্দের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারাতো নিজেরা কিছু করতে পারেন না’ পুলিশ দিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে দমন নীপিড়নসহ মিথ্যা মামলার মাধ্যমে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে পারেন শুধু! তবুও নারায়ণগঞ্জে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। সূত্রমতে, দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো কর্মসূচি দেয়ার মতো অবস্থায় বিএনপি এখন আর নেই। মাঠপর্যায়ে বিএনপির রাজনৈতিক তৎপরতা দৃশ্যমান নেই। এত বছর পরও বিএনপিতে বহু মতের সম্মেলন ঘটেনি। দলীয় ঐক্য ও অভ্যন্তরীণ সংহতিও প্রশ্নের মুখে। জেলার শীর্ষ নেতৃত্বে মতের অমিল, পারস্পরিক সন্দেহ ও দ্বন্ধে সাংগঠনিকভাবে নাজুক অবস্থায় বিএনপি। এতে মাঠে নেমে কাংক্ষিত ফল প্রত্যাশা করা যায় না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। এদিকে, তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির কমিটি নেই। কিন্তু দলীয় অন্তর্কোন্দল ঠিকই আছে। দলটি একধরনের স্থবিরতার মধ্যে চলছে। জেলার সর্বত্র বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা না-থাকলেও বিরোধ ঠিকই আছে। এর সমাধানে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন গরজ আছে বলে মনে হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলটির ঐক্য সংহত না-থাকায় তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এমনকি নির্বাচনের আগ মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল নেতা শাওন নিহত হওয়ার পরও দলটি কোনো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে দেখা যায়নি বরং তারা শোক ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নাম সর্বস্ব দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেও তারা কোন শক্তিশালী আন্দোলন করতে পারেনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই তারা পিছু হটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খাঁন বলেন, অনেকে জানতে চান কবে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তাদের কথা শুনে আমি অবাক হই। বিএনপি তো আন্দোলনের মধ্যেই আছে। সরকারের নানা ব্যর্থতায় আমরা রাজপথেই প্রতিবাদ করছি। আন্দোলন মানে তো গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও নয়, আমরা এসবে বিশ্বাস করি না। জনগণও সেটা চায় না। আমরা চাই সরকারবিরোধী একটি গণআন্দোলন। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। কিন্তু সরকার তার গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে সবসময় বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। অতীতে আমরা সরকারের এমন নীলনকশা দেখেছি। সরকার একটা বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপিকে আন্দোলনে উসকে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সময়মতো চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।