ম্যুরাল নিয়ে আ’লীগ-বিএনপিতে উত্তেজনা
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙ্গা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এঘটনায় বিএনপি আওয়ামীলীগকে দায়ী করে গণমাধ্যম গুলোতে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছে। অপরদিকে, ম্যুরাল ভাঙ্গার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফতুল্লা-সিদ্ধির আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ম্যুরাল ভাঙ্গার ইস্যুকে পুঁজি করে শান্ত নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার জন্যই বিএনপি চেষ্টা চালাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি থাকারই তো কথা না। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। কারণ পঞ্চম সংশোধনীতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এবং তার কার্যকালকে ও রাষ্ট্রপতি পদকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এটা নিয়ে মাথা গরম করি না। জেলা প্রশাসকের একটি চিঠি আমার কাছে আছে। এপ্রিলের ২ তারিখে এটি ইস্যু করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে ৪ এপ্রিল বেলা ১২টা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ টাউনহল নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। আমি তো জানি কি সিদ্ধান্ত হবে এবং তাই হয়েছে। কারণ এটি পরিত্যক্ত ভবন। ‘১৪ তেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর উপর রাজউকের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় এক নম্বর রয়েছে এটি। টাউনহল যখন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে হয়েছে। সেখানে আমাদের কি প্রবলেম হবে। গতকাল শুক্রবার প্রেস ক্লাব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। এসময় প্রেস ক্লাবের সদস্যরাসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। শামীম ওসমান বলেন, যদি কেউ ইতিহাস নিয়ে অপব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে আমরা অবশ্যই তাকে প্রতিরোধ করবো। নারায়ণগঞ্জবাসী তাকে প্রতিরোধ করবে। কিছুদিন আগে এক্সট্রিম লেফ্ট, যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে রাজনীতি করে। তারাও কিন্তু একইভাবে চেষ্টা করেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেছিলাম প্রমাণ করার জন্য। তারা কিন্তু আর কথা বলেনি। তিনি বলেন, ২ তারিখে সভা ডাকা হয়েছে, ৩ তারিখে এটা ভাঙলো। ৪ তারিখে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ৩ তারিখে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা হলো। এখানে আমাদের প্রবলেম কি। এটা তো প্রশাসনই ভাঙবে, ভাঙতে বাধ্য। তারা সুকৌশলে এ কাজটি করেছে। কিংবা কাউকে দিয়ে করিয়েছে, কিংবা নিজে নিজে পরেছে কিংবা ঠাডা পরেছে। যদিও ঠাডা পরে নি আমি কনফার্ম। তারা এটাকে নিয়ে ইস্যু করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের বিকৃতি করার চেষ্টা করছে, স্বাধীনতার শক্তির বিপক্ষে থাকছে। এদের জন্য বলবো, আপনারা পারবেন না। এখানে নারায়ণগঞ্জের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি তুলে ধরা হবে। তাদের সবাই আওয়ামী লীগ করতেন না। আমি জাতীয় সংসদে বলেছিলাম এখানে ছয় দফার একটা মঞ্চ করা হোক। এখানে নাটক, গান বাজনা, সংস্কৃতির চর্চা হবে। এর বাউন্ডারিতে ‘৪৮ সাল থেকে নিয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইতিহাস তুলে ধরা হবে। ওই জায়গায় একটা মিউজিয়ামও করা হবে। আমার সাবজেক্ট হলো- স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু ও নারায়ণগঞ্জ। এই তিন বিষয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক তুলে ধরা হবে। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে ইতিহাস জানতে পারে সে লক্ষে এমন চিন্তা। এদিকে,, ম্যুরাল ভাঙার জন্য ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএ ওসমানকে দুষছেন বিএনপির নেতারা। ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে, এমন খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার প্রধানসহ কয়েকজন নেতা। এ সময় সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানে ১৯৮১ সালে এই মিলনায়তনটিকে শহীদ জিয়া হল হিসেবে নামকরণ করা হয়। তার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ‘মিলনায়তনটি জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকায় প্রথমে আমরা ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বলেছেন যে, ম্যুরাল ভাঙার বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। সম্প্রতি জিয়া হল ভেঙে আরেকটি ভবন করার প্রস্তাব দিয়ে সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান। আজকের এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সরকারি দলের নীলনকশার মাধ্যমে শহীদ জিয়ার এ ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা,’ বলেন তিনি। আবু আল ইউসুফ খান বলেন, ‘আমরা দেখেছি সংসদে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান জিয়া হল ভাঙার কথা বলেছেন। রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ ম্যুরাল ভেঙে প্রমাণ করেছেন, তিনি আসলে প্রতিহিংসাপরায়ন একজন রাজনীতিবিদ। নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে এই কাজটি করেছেন তিনি। ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় ম্যুরালটি স্থাপন করার দাবি জানান বিএনপি নেতারা। না হলে তারা আন্দোলনের দিকে যাবেন বলে জানান সাখাওয়াত।