ডান্ডিবার্তা | এপ্রিল ০৮, ২০২৪, ১১:৫১ | Comments Off on শামীম অনুসারিদের বক্তব্যে উত্তপ্ত
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতি অঙ্গনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা অনেক দিন ধরেই উত্তপ বিহীন সময় কাটাচ্ছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। এ নিয়ে শামীম ওসমান অনুসারিরা প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে গোপনে দু’ভাগে বিভিক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিন ও শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুর অনড়
অবস্থানের কারণে বেশ বিপাকে পড়েছেন খোদ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান এমনটাই দাবি তৃণমূল নেতাকর্মীদের। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সদর উপজেলার আওতাধীন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের অনুরোধে সিদ্ধান্তের দায়িত্বভার নিজ কাধে নিয়েছেন শামীম ওসমান। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। গত দুই দিন সাজনু ও শাহ নিজাম কেউ কারো নাম উচ্চারণ না করে একে অপরকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। শাহ নিজাম ও সাজনুর পিছনে জেলা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে মহানগর ও থানা পর্যায়ের নেতারা গোপনে কাজ করে চলেছেন। রাজনৈতিক মাঠে শাহ নিজামের চেয়ে সাজনুর অবস্থানই বেশী দেখা যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের নেতারা সাজনুর দিকেই বেশী ঝুকছে। শামীম ওসমানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক
ভিপি বাদল ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহাসহ উপস্থিত আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীবৃন্দ। শামীম ওসমান দায়িত্বভার নেয়ার পর দু’প্রার্থীই কিছুদিন নিরবে নির্বাচনী কার্যকলাপ পরিচালনা করলেও গত দুই দিন তারা প্রকাশ্যে একে অপরকে ঘায়েল করতে বক্তব্য দেয়া শুরু করেছেন। মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামকে উদ্দেশ্য করে শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে আপনারা সার্কাসম্যান দেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের বিশ্বরোডের(লিংক রোড) পাশে লটারি ও সার্কাস চালিয়ে আমাদের দলের ক্ষতি ও যুব সমাজকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করে তারা আবার বড় বড় কথা বলে। আমি তাদের ধিক্কার জানাই। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য (সেলিম ওসমান) সেই সার্কাস বন্ধ করে দিয়েছে। যারা লটারি চালায়, সার্কাস চালায় তারাই আবার আজকে বড় বড় কথা বলে। আমার এসব নিয়ে কথা বলতে লজ্জা লাগে। সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করে
সাজনু বলেন, ‘গত কিছুদিন যাবৎ দেখতে পাচ্ছি, ফেসবুকে একজন মানুষ একটি উক্তি করেছে। উনি দেখলাম কিছু গীবত করলেন। কিছু উত্তর আমি দিতে চাই। যারা গীবত করে তারা আপন ভাইয়ের গোশত খায়। সেই ব্যক্তি ফজর নামাজ পড়ে মানুষের জন্য দোয়া করার কথা বলেছে। দোয়া করা ভালো কথা, কিন্তু তারপর তিনি কাউকে উদ্দেশ্য
করে গীবত করলেন। তিনি জানেন না একজন মানুষ গীবত করলে আপন ভাইয়ের গোশত খায়। এটা জানলে সে গীবত করতো না।’ শাহাদাত হোসেন সাজনু আসন্ন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করবো, উনিও নির্বাচন করবে, এটা গণতান্ত্রিক অধিকার, সেখানে আপত্তি নেই। কিন্তু কারও চরিত্রহরণ করার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। সাজনু বলেন, ‘তিনি টেন্ডারবাজির কথা বলেছে। আমার মনে আছে, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা (দ্বিতীয়বার) ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জ জেলার কিছু টেন্ডার ছিল। সেই টেন্ডার তিনি কন্ট্রোল করতে গিয়েছিল। আমি যখন শিডিউল কিনেছি তখন আমাকে বলা হলো, এটা (টেন্ডার) আমরা কন্ট্রোল করছি, তুমি টেন্ডার জমা দিও না, আগামীকাল সিদ্ধান্ত দেবো। আমি তাদের কথা শুনে চলে গিয়েছিলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম আমি কী টেন্ডার ড্রপ করবো? তিনি তখন বললেন ড্রপ করো। এরপর আমাদেরই এলাকার এক এমপি যিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তার কাছে ওই ব্যক্তি তদবির করেছিল টেন্ডার করে ট্রালের জন্য। কিন্তু এমপির ধমক খেয়ে সেদিন সে টেন্ডারবাজি করতে পারেনি।’ ‘সুযোগের অভাবে সৎ
থাকলে কাউকে সৎ বলা যায় না, সুযোগ পেয়েও যদি কেউ সৎ থাকে তাহলে সেটাই প্রকৃত সততা। যে ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছে সে সুযোগের অভাবে সততা দেখিয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন যুবলীগের এ নেতা। ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী সাজনু আরও বলেন, ‘ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের বিভিন্ন জায়গায় ওই ব্যক্তি ভূমিদস্যুতা করেছে। আমি জ্বলন্ত উদাহরণ দিবো। গ্রীন সিটি নামের একটি হাউজিং আছে।সেখানে আমার পরিচিত একজন লোক যে অস্ট্রেলিয়া থাকে, তার ২০ শতাংশ জায়গা ভরাট করে ফেলেছে, সেটা দখল করতে চায়।’ সাজনুর করা বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিনিধির সাথে খোলামেলা কথা বলেন শাহ নিজাম। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম উদ্দিন বলেছেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বললাম, কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে যে, কোনো টেন্ডারের বিষয়ে শাহ নিজামের সম্পৃক্ততা আছে তাহলে রাজনীতির ইতি টেনে রাজনীতি থেকে পদত্যাগ করবো। নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে কারা টেন্ডারবাজিতে জড়িত। নারায়ণগঞ্জটা ছোট, সবাই
সবার অতীত জানি, কে কি ছিলাম, কে কি হইছি, অতীতটা কারো কাছে অজানা নয়। জমি দখলের বিষয়ে শাহ নিজাম বলেন, আমি শতভাগ কনফিডেন্ট ২০ শতাংশ তো দুরে থাক, ২০ পয়েন্ট জায়গাও কারো কাছ থেকে দখল করার কোনো ইতিহাস নেই। এই ২০ শতাংশ জায়গা নিয়ে যারা বলছে, তারা নতুন কোনো ধান্ধা করতে গিয়েছে কিনা,
কিংবা সেখান থেকে সুবিধা নিতে গিয়েছে কিনা, কিংবা সুবিধা নিতে গিয়ে বঞ্চিত হওয়ায় তাদের আতে ঘা লেগেছে কিনা সেটা সময় আসলে সঠিক তথ্য ও প্রমাণের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। শাহ নিজামের ফেসবুক স্ট্যাটাসে শামীম ওসমানের সাথে যারা বেঈমানী করেছে তাদের বিষয়ে বলা হয়েছিলো। কারা বেঈমানী করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহ নিজাম বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সাথে কারা বেঈমানী করেছে, তা ভালো করেই জানে নারায়ণগঞ্জবাসী ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের
প্রবীণ ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই আপনারা পাবেন, কেননা এটা প্রকাশ্য ও প্রমাণিত হয়েছে বারবার। স্পেসিফিক ভাবে কারো নাম আমি বলতে চাই না, যারা বেঈমানী করেছে কিংবা বেঈমানী করে তাদের থেকে আবারও সবাইকে
সাবধানে থাকতে বলছি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কারণ আমরা
যারা শামীম ওসমানকে ভালোবাসি, তারা চাইনা ঐ বেঈমান কিংবা
প্রতারকদের কারণে শামীম ওসমানের কোনো ক্ষতি হোক। কেননা
শামীম ওসমানের কোনো ক্ষতি হলে শুধু শামীম ওসমানই ক্ষতিগ্রস্থই
হবেন না, নারায়ণগঞ্জের মিনিমাম ২০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
২০ হাজার পরিবারের নিরাপত্তার প্রয়োজনে তাদেরকে চিহ্নিত করা
সকলের দায়িত্ব। নারায়ণগঞ্জের হকার ইস্যুতে বারবার হেলালের নাম চলে
আসে এই বিষয়ে শাহ নিজাম বলেন, যে সকল পত্র-পত্রিকায় নিউজ
প্রকাশিত হয়েছে, তারা যদি অথেনটিক লিখে থাকে তাহলে সেটা
সত্য। আর যদি অথেনটিক তথ্য না থাকে তাহলে তাদের লেখা ঠিক হয়নাই। আমার মনে হয় না রুচি এতো নীচে। তারপরে বাকীটা জানি
না।