উপজেলা নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনদের দাপট!

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন ঘিরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঘটছে নতুন মেরুকরণ। এলাকায় নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছেন জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতারা। এমনকি ভবিষ্যৎ বিবেচনায় শক্তিশালী বলয় তৈরির চেষ্টা করছেন বলেও একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ফলে দলীয় প্রতীক না থাকলেও উপজেলার ভোটে থাকছে ক্ষমতাসীনদের দপট। জেলার শীর্ষ নেতারা পছন্দের প্রার্থীকে সামনে রেখে তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়া মাঠ উন্মুক্ত হওয়ায় প্রার্থী হচ্ছেন জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এর আগে কখনোই একটি উপজেলায় ভোটের লড়াইয়ে একসঙ্গে আওয়ামী লীগের এত নেতা মুখোমুখি হয়নি। ফলে এই ভোটের পর দলীয় বিভক্তি কতটা তীব্র হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। এছাড়াও দীর্ঘ সময় নিরব থেকেও এমপি হয়েছেন কেউ তাই তারা এখন মাঠপর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থান তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর প্রথম ধাপ হিসেবে উপজেলা নির্বাচনকেই বেছে নিচ্ছেন তারা। অন্যদিকে সাংসদ নির্বাচনে প্রভাবশালী যেসব নেতা জাতীয় নির্বাচনে হেরেছেন, তারাও এলাকার আধিপত্য ছাড়তে চাইছেন না। উপজেলা নির্বাচনে নিজ বলয়ের প্রার্থীকে জিতিয়ে সেই অবস্থান ধরে রাখতে চাইছেন তারা। এ কারণে উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রæপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আঃ হাই বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের মতোই এবারের উপজেলা নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। দল যেহেতু প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেহেতু আশা করব মাঠপর্যায়ের নেতারা সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। কোনোভাবেই যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকবেন তারা। বিশৃঙ্খলা করলে কেউ রেহাই পাবে না। আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো বলছে, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি সংসদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট দলীয় দ্ব›দ্ব-কোন্দল কমানোসহ সংঘাত-সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উপজেলায় দলীয় প্রতীক না দেওয়ার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। গত ২৩ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু দলীয় এই কৌশল তৃণমূল পর্যায়ে পুরোনো দ্ব›দ্ব-সংঘাত উসকে দিচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে দলের এ কৌশলের কারণে। স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা জানান, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য। নির্বাচন কমিশনও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ভোটারের স্বাক্ষরের শর্ত শিথিল করে নির্বাচনে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন। কিন্তু নির্দলীয় এ নির্বাচনও দলীয় রূপ দিতে তৎপর স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা। তাদের অনেকেই নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বলে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ দলীয় প্রতীক না থাকায় শেষ পর্যন্ত দলের মৌন সমর্থন পাবেন, এমন আশা নিয়েও প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। কেউ আবার নিজের প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ী করে আনার জন্য নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে এটি কোনোভাবেই গ্রহণ করছেন না প্রতিদ্ব›দ্বী নেতারা। জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, ‘প্রার্থীদের মধ্যে যিনি শ্রম ও মেধা দিয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন এবং যার অবস্থান ভালো থাকবে, তার হয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। এক্ষেত্রে কাউকে সমর্থন না দেওয়া দলের নীতিকেই অনুসরণ করব। তবে যারা এর আগে জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করেছেন, তাদের দিক থেকে সাধারণ ভোটাররাই মুখ ফিরিয়ে নেবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী বলেন, দলের শৃঙ্খলা যেন ভঙ্গ না হয় সে বিষয়ে আামরা কঠোর অবস্থানে আছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেউ দলের সুনাম ক্ষুন্ন করবে তা হতে দেওয়া হবে না। তবে রূপগঞ্জে এবার ক্ষমতা নিজেদের ঘরে আটকে রাখতে একই পরিবারের সকলে সবকিছু দখল করে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। যেমন রূপগঞ্জের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী. স্ত্রী কাঞ্চন পৌর সভাপর মেয়র আর এবার রূপগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ছেলে পাপ্পা গাজীকে মাঠে নামিয়েছেন। তারা আওয়ামীলীগের নিজস্ব সম্পত্তি বানিয়ে ফেলার পায়তারা করছেন। এছাড়া বন্দর উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপকে ভাল চোখে নিচ্ছে না সাধারণ ভোটাররা। যদি এভাবে দলকে কুক্ষিগত করে রাখা হয় তবে দলের বিকাশ ঘটবে না বলে একাধিক নেতা মনে করেন। সকলকে দলের নীতি মেনে চলার আহবান জানান।