না’গঞ্জে এমপিদের পরিবার প্রীতি!
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন এলাকায় মন্ত্রী এমপিরা তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করে ক্ষমতার শিকড় আরও গভীর করতে চাইছেন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছেন। প্রায় অর্ধশত এমপি তাদের নিকট আত্মীয়কে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন এবং তাদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছেন। এর মধ্যে বাদ যায়নি নারায়ণগঞ্জের কোন কোন সংসদ সদস্য ইতিমধ্যেই তারা স্ত্রী-পুত্রকে ক্ষমতায় বসানোর পাশাপাশি নিজেদের পছন্দের উত্তসূরি নির্বাচন করতে শুরু করে দিে য়ছে। ফলে যুগ যুগ ধরে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত নেতাকর্মীরা দলের প্রতি অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাতো দুরের কথা ঠিকমত দলীয় পদ পদবী হতেও তারা বঞ্চিত। অথচ উড়ে এসে জুড়ে বসে কেউ কেউ মন্ত্রী-এমপি কিংবা মেয়র হয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। এদের কেউ কেউ স্বজনদের উপজেলা চেয়ারম্যান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় পরিবারতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জে কোন কোন এমপি ইউপি চেয়ারম্যানদের নিজেদর আজ্ঞাবহ করার পাশাপাশি দলীয় কর্মী এমনকি কোন কোন গণমাধ্যম কর্মীকেও বিভিন্ন কায়দায় তাদের তলপিবাহকে পরিনত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগ্নেসহ আত্মীয় স্বজনও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন এবং এ সমস্ত আত্মীয় স্বজনকে জয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এমপি ও নেতারা তাদের অনুগতদের মাঠে নামিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত যদি তাদের আত্মীয় স্বজনরা বিজয়ী হন তাহলে ওই সমস্ত উপজেলা গুলোতে আওয়ামী লীগ থাকবে না, সেখানে পরিবার লীগ প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে ইতোমধ্যে পরিবারতন্ত্রের ব্যাপারে কঠোব সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা নির্বাচনে দলের মন্ত্রী–এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোটে অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন দেখার বিষয় যে, যে সমস্ত মন্ত্রী–এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তারা এবার দলীয় সিদ্ধান্ত মানেন কিনা কিংবা নির্বাচন থেকে সরে যান কিনা। এদিকে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী-এমপিদের জানানো শুরু করে দিয়েছেন। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে দলটি। সূত্রমতে, ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনের ঢামাডোল বেজে উঠেছে। সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সাংসদদ্বয়ের নিকট আত্বীয়রা নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এমনকি রূপগঞ্জ আসনের সাংসদ সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাঁজীর ছেলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। তবে, এখনো এ এলাকায় নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে তফছিল ঘোষনা না করা হলেও দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে, আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এমপি কিংবা মন্ত্রীর নিকট আত্বীয়রা নির্বাচন করতে পারবে না এমন ঘোষনার পর থেকে রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তাদের অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, গাঁজী পরিবার রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। একক আধিপত্য বিরাজের মাধ্যমে সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণ এখন গাঁজী পরিবারের উপর। গাঁজী পরিবারের নির্দেশে সব ধরনের কর্মকান্ড রূপগঞ্জে হয়ে আসছে। এমনকি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান থেকে ইউপি সদস্য কে হবেন তাও গাঁজী পরিবারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। মূলত, রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগ কোনঠাসা করে রেখেছে গাঁজী পরিবার। অনেকটা নিদারুন কষ্টে দিনানিপাত করছে রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা কর্মীরা। যোগ্যতা থাকা স্বত্তে¡ও জনপ্রতিনিধি হতে পারছে না আওয়ামীলীগের ত্যাগীরা। অযোগ্য ব্যাক্তিদের দিয়ে নিয়ন্ত্রন করছে পুরো রূপগঞ্জকে। এমনকি তারাবো পৌরসভা মেয়রও তার স্ত্রীকে বানিয়ে রেখেছেন। এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে তার ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পাকে আশীন করার জন্য বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবেন বলে ত্যাগি নেতৃবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এমপিদের হস্তক্ষেপ এবং দলীয় বিভেদের তথ্যে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এরপর তিনি সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী– ও সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ব্যাপারে এই নির্দেশনা দেন। জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় সভাপতির নির্দেশনার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে দপ্তর সম্পাদক ও উপদপ্তর সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের মধ্যে কাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছে সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও দলের সভাপতিমÐলীর সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক। এই দুই স্থানে সংসদ সদস্যের ছেলেরা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। সংসদ সদস্যরা সন্তানদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন। আগামী ২ মে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে। ওই অধিবেশন সংসদীয় দলের বৈঠকে বসতে পারে দলটি। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে তার অবস্থান তুলে ধরবেন। প্রভাব বিস্তার থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।মএ ছাড়া শিগগিরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরও বৈঠক হতে পারে। সেখানেও বিষয়টি আলোচিত হবে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, এমপি-মন্ত্রীরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও নানাভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।