আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি
ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
রাজনীতির মাঠে ফের ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। তারই অংশ হিসেবে নানা কৌশল ঠিক করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা। মামলা, হামলা, নির্যাতরেন শিকার হওয়া পরিবারগুলোকে দেয়া হয়েছে ঈদসামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা। এ সবের মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে দেয়া হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক সরকার পতনের আন্দোলনের আগে যোগাযোগ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। সূত্রমতে, গত ২৮ অক্টোবর পর নির্বাচন বর্জন করে হরতাল-অবরোধে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি বিএনপি। চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সময় অনেক নেতা চলে যান আত্মগোপনে। সে অবস্থা থেকে তৃণমূলের নেতাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। ঈদ উপলক্ষে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে বিগত আন্দোলনে মামলা, হামলা নির্যাতনের স্বীকার হওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়েছেন নেতারা। দেয়া হয়েছে ঈদ সামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা। তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে দলের বার্তা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, রমজান মাসকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে গ্রহণ করে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে ঝিমিয়ে পড়া সংগঠন ও হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে মহানগর, জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইফতার মাহফিল করা হয়েছে।সেখানে সংগঠনের সদ্য কারামুক্ত নেতাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতারা ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। নিজ নিজ এলাকায় দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের সময় দলকে শক্তিশালী করে আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও আন্দোলন আরও জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। জানা যায়, বিগত ২৮ অক্টোবর থেকে আন্দোলন সংশ্লিষ্ট কার্যকরী নেতারা আটক হওয়ায় দলটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যাদের আন্দোলন সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি। এমনকি অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনের নামে ছিলেন নিরাপদ স্থানে। সঙ্গত কারণে নির্বাচন ঠেকানোর মতো কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেননি নেতাকর্মীরা। এমন কি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই দেয়া হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। সমন্বয়হীনতার কারণে শেষ ধাপের আন্দোলনেও সফলতার মুখ দেখেনি বিএনপি। তবে বিগত আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতা না এলেও দ্বাদশ সংসদ বাতিল এবং একদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এরই অংশ হিসেবে বেহাল অবস্থায় থাকা অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হতে পারে। জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই ঈদ উদযাপন করেছি। দল বেঁধে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসেছেন, তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আমরা যে চলমান আন্দোলনে রয়েছি তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সামনে সরকার পতনের আন্দোলন কিভাবে গতিশীল কর যায়, সে বিষয়ে কেন্দ্র থেকে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে গতিশীল করার জন্য জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য বলা হয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের ঈদ করার নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে যখন সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকেন তখন দুই ধরনের আনন্দ হয়। একটি হচ্ছে ঈদের আনন্দ, অপরটি হচ্ছে নেতার আনন্দ। এর মাধ্যমে তৃণমূলে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। কাছাকাছি থাকা এবং তৃণমূল পর্যায়ে যাওয়া একটা দলকে সুসংগঠিত করে, চাঙ্গা করে। এর মধ্যে কোনো শঙ্কা থাকলেও তা কাটিয়ে সামনে এগোতে হবে।’